রাশিয়ার গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরতা কমাতে এবার আফ্রিকার দিকে আবার দৃষ্টি ফেরালো ইইউ। তারা গ্যাস আমদানির জন্য আলজেরিয়া, নাইজার ও নাইজেরিয়ার উপর নির্ভর করছে।
আফ্রিকায় অঢেল গ্যাস আছে, কিন্তু তা ইউরোপে পাঠানোর পরিকাঠামো নেই। ছবি: Mohamed Messara/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার আলজেরিয়া, নাইজার ও নাইজেরিয়া চার হাজার কিলোমিটারের গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে সমঝোতাপত্রে সই করেছে।
এই পাইপলাইন সাহারা মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাবে। পাইপলাইন বানাতে খরচ হবে এক হাজার তিনশ কোটি ডলার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে এক ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস নাইজেরিয়া থেকে নাইজার ও আলজেরিয়া হয়ে ইউরোপ পাঠানো যাবে।
সমঝোতাপত্রে সই তিন দেশের। ছবি: Chahine Sebiaa/IMAGO
আলজেরিয়ায় গ্যাস আসার পর হয় তা ভূমধ্যসাগরের নীচ দিয়ে পাইপলাইন করে অথবা এলএনজি ট্যাঙ্কারে করে ইউরোপে যাবে।
দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা
৪০ বছর আগে এভাবে গ্যাস ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর সেই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ বিশেষ এগোয়নি।
সাহেল অঞ্চলে আইএস ও আলকায়দার নিয়মিত হামলা, আলজেরিয়া ও নাইজারের মধ্যে উত্তেজনার কারণেই এতদিন ধরে পাইপলাইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা যেভাবে কমাবে ইউরোপ
২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে৷ গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় এই জোট৷
ছবি: Jean-Francois Badias/AP/picture alliance
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা
এখন পর্যন্ত রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ ভাগ গ্যাস ও ২৭ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ ইউরোপজুড়ে এই জ্বালানি ঘর গরম রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ এতটা নির্ভরশীলতা হুট করে কমানো সম্ভব নয়৷ তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে৷ অবশ্য এই নির্ভরশীলতা কাটাতে অন্তত আরো পাঁচ বছর প্রয়োজন৷
ছবি: Kremlin Pool/ZUMAPRESS/picture alliance
নবায়নযোগ্যে ভরসা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন সেই পরিকল্পনাকে আরো ত্বরান্বিত করতে চাইছে এখন৷ আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্যের পরিকল্পনাকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করতে চাইছে তারা৷ ২০২০ সালের হিসেবে, তাদের ২২ শতাংশ জ্বালানি আসে বায়ু, সৌর ও জৈবশক্তি থেকে৷
ছবি: picture alliance / Zoonar
আইনে পরিবর্তন
লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউরোপীয় কমিশন আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে৷ কড়া বিধিনিষেধের কারণে অনেক প্রকল্প পাস হতে সময় লাগে৷ সেগুলো কিছুটা শিথিলের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এছাড়া বড় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ওপর সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করার নিয়মও করা হবে৷
ছবি: Philip Reynaers/BELGA/dpa/picture alliance
জ্বালানি সাশ্রয়
কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সাশ্রয়ও ১৩ ভাগ কমাতে চায়৷ আগের প্রস্তাবে তা ছিল ৯ শতাংশ৷ এর জন্য অনেক ভবনকে সংস্কার করা হবে, যেন সেগুলোতে কম জ্বালানি খরচ হয়৷ তাদের হিসেব বলছে, মানুষ চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারে৷ এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা কমানো সম্ভব৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্যাসের নতুন অবকাঠামো
ইউরোপ রাশিয়া থেকে বছরে ১৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় করে এর বিকল্প তৈরি সম্ভব৷ কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ইউরোপ এখন সেই গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে৷ সেক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু এর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে৷ কারণ যে-কোনো সময় রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিপদ তৈরি হবে, যেমনটি তারা পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
অর্থায়ন
সবমিলিয়ে জ্বালানি খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০০ বিলিয়ন হবে৷ এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৮৬ বিলিয়ন, হাইড্রোজেন অবকাঠামোর জন্য ২৭ বিলিয়ন ইউরো, ২৯ বিলিয়ন ইউরো বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে ও ৫৬ বিলিয়ন ইউরো জ্বালানি সাশ্রয় অবকাঠামো ও হিট পাম্প তৈরিতে খরচ হবে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopress/picture alliance
6 ছবি1 | 6
এবার পরিস্থিতি বদলেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর এখন পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়াও এখন গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সংকটে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলি। তারাও এখন বিকল্প খুঁজছে। গত সপ্তাহে ইইউ-র দেশগুলি গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, শীতের সময় রাশিয়া গ্যাসের সরবরাহ আরো কম করে দেবে।
২০২১ সালে আলজেরিয়া ও নাইজার তাদের সীমান্ত আবার খুলেছে। এরপর আবার পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এবার সমঝোতাপত্র সই হলো।