২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল জিতলেন আ্যামেরিকান কবি অধ্যাপিকা লুইস গ্ল্যুক৷ মার্কিন সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সুইডিশ অ্যাকেডেমি৷
বিজ্ঞাপন
এর ফলে ইতাহাসে ১৬তম নারী হিসেবে নোবেল পেলেন লুইস গ্ল্যুক৷ ১৯৯৩ সালে নোবেল পাওয়া বিখ্যাত উপন্যাসিক টনি মরিসনের পর এই প্রথম কোনো অ্যামেরিকান নারী সাহিত্যিকের এ সম্মাননা লাভ৷
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, লুইস হলেন অ্যামেরিকার বর্তমান সাহিত্যজগতের সেরাদের অন্যতম৷ মার্কিন সাহিত্যে লুইসের অবদানের বিষয়ে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্ডেরস ওলসন বলেন, ‘‘তাঁর লেখায় রয়েছে রসবোধের তীব্র উপস্থিতি, সরলতা, আর দৃঢ়তা৷''
১৯৪৩ সালে নিউইয়র্কে জন্ম নেয়া এ কবি লঙ সারা লরেন্স কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাব্যকলা পড়িয়েছেন৷ বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা (অ্যাডজাঙ্কট)৷
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই ফার্স্টবর্ন৷ এ বইয়ে তাঁর লেখার ছন্দ আর সাহিত্যবোধের যে প্রকাশ তার প্রশংসা করতে ভোলেনি নোবেল কমিটি৷
এ পর্যন্ত ১২টি কবিতার বই প্রকাশের পাশাপাশি প্রবন্ধও লিখেছেন লুইস৷
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস' এবং ‘ফেইথফুল ও ভার্চুয়াস নাইট'৷
সাহিত্যগুণের জন্য সবসময়ই সমাদৃত লুইস৷
১৯৯২ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস' তাকে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার৷
তাঁর লেখায় দেখা মেলে পারিবারিক জীবন, বাল্যকাল আর গ্রীক-রোমান পৌরাণিক কাহিনীর সাবলীল ও নান্দনিক প্রকাশ৷
আরআর/এসিবি (এপি, ডিপিএ)
একবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা
লেখকদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলোর একটি সাহিত্যে নোবেল৷ একবিংশ শতাব্দীতে যারা সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন তাদের এক নজরে দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Imago Images/BE&W/B. Donat
২০১৯: পেটার হান্ডকে
অস্ট্রিয়ার পিটার হান্ডকে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷ ‘অফেন্ডিং দ্য অডিয়েন্স'র মত কিছু নিরীক্ষাধর্মী নাটক লিখে ১৯৬৬ সালের দিকে তিনি বিখ্যাত হয়ে যান৷ যদিও এই সাহিত্যিককে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে৷ বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে যুগস্লাভ যুদ্ধের সময় সার্বদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া দারুণ সমালোচিত হন হান্ডকে৷ যে কারণে তাকে সাহিত্যে নোবেল দেওয়ায় আলবেনিয়া, বসনিয়া এবং কসোভো বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল৷
ছবি: AFP/A. Jocard
২০১৮: ওলগা টোকারচুক
পোলিশ লেখক ওলগা টোকারচুক ২০১৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান৷ যদিও সুইডিশ একাডেমিতে যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে চলায় ওই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছিল৷ পরের বছর সাহিত্যে জোড়া নোবেল দেওয়া হয়৷ ঔপন্যাসিক টোকারচুক ২০১০ সালে ‘ফ্লাইটস' উপন্যাসের জন্য বুকার পুরস্কার জেতেন৷
ছবি: Imago Images/BE&W/B. Donat
২০১৭: কাজুও ইশিগুরো
জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো ২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান৷ তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে' (১৯৮৯)৷ যেটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে৷ নোবেল কমিটি বলেছিল, কাজুওর ‘তীব্র আবেগমথিত' উপন্যাসগুলো বাস্তব দুনিয়ার মায়ার আড়ালে ‘গভীর শূন্যতাকে' উন্মোচন করে৷
ছবি: imago/ZUMA Press
২০১৬: বব ডিলান
‘গানের কবি' নামে খ্যাত বব ডিলান ২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পান৷ বিশ্বজুড়ে দারুণ জনপ্রিয় যুক্তরাষ্ট্রে গায়ক ও গীতিকার বব ডিলানকে সাহিত্যে নোবেল দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় সুইডিশ একাডেমি বলেছিল, ‘‘তিনি আমেরিকার সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্চ্ছনা সৃষ্টি করছেন৷''
ছবি: Reuters/K.Price
২০১৫: সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ
বেলারুশের লেখক, অনুসন্ধানী সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ ২০১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পান৷ নোবেল কমিটি তার লেখা কে ‘দুর্ভোগের স্মারক এবং সময়ের সাহসী লেখনী' বলে বর্ণনা করেছে৷ আলেক্সিয়েভিচের ‘ওয়ারস আনউইমেনলি ফেইস' (১৯৮৫) বইটি কয়েকশ নারীর সাক্ষাৎকারের একটি সঙ্কলন, যারা সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন৷ বাইটি দারুণ সাড়া ফেলছিল৷ তার সবচেয়ে আলোচিত বইগুলোর একটি ‘ভয়েস ফ্রম চেরনোবিল '৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪: প্যাত্রিক মোদিয়ানো
ফরাসি ঔপন্যাসিক প্যাত্রিক মোদিয়ানোর গল্পেরা গড়ে উঠেছে ‘মানব মনের স্মৃতি-বিস্মৃতির খেলা, আত্মপরিচয়ের সঙ্কট আর প্যারিসে নাৎসি দখলদারিত্বের ইতিহাসকে' কেন্দ্র করে৷ নাৎসি আগ্রাসন আর ইহুদিদের আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তৈরি করে দিয়েছে তার অধিকাংশ উপন্যাসের পটভূমি। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত তার ‘লা প্লাস দো লিতোয়াইল' বইটি জার্মানিতে হলোকাস্ট পরবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Kovarik
২০১৩: এলিস মুনরো
প্রাঞ্জল গদ্যে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ফুটিয়ে তোলায় মুনশিয়ানার জন্য কানাডার ছোটগল্পকার এলিস মুনরোকে ‘সমসাময়িক সময়ে ছোটগল্পের রাজা' বলে বর্ণনা করে নোবেল কমিটি৷ একই কারণ তিনি ‘কানাডার চেকভ' নামেও পরিচিত৷ তিনি তিনবারের বেশি বুকার ও কানাডিয়ান গভর্নর জেনারেল সাহিত্য পুরস্কারও জিতেছেন৷
ছবি: PETER MUHLY/AFP/Getty Images
২০১২: মো ইয়ান
চীনের গুয়ান মোইয়ে ২০১২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, যিনি বিশ্বজুড়ে মো ইয়ান নামে অধিক পরিচিত৷ যদিও মোর নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে খোদ চীনেই সমালোচনা হয়েছিল৷ সমালোচকদের দাবি, মো ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ঘনিষ্ঠ এবং অন্য কবি-সাহিত্যিকরা রাজনৈতিক হেনস্তার শিকার হলে তিনি কোনো সাহায্য করেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১১: টমাস ট্রান্সট্রোমার
সুইডেনের কবি টমাস ট্রান্সট্রোমারের কবিতা ছিল চিত্রকল্পে সমৃদ্ধ৷‘নিজের গাঢ় ও স্বচ্ছ চিত্রের মাধ্যমে তিনি আমাদের বাস্তবতাকে নতুন ভাবে চেনাতেন', ট্রান্সট্রোমারের সাহিত্যকর্মের বর্ণনায় এমনটাই বলেছিল নোবেল কমিটি৷ কালজয়ী এ কবির কবিতা ৬০টির বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে৷ ২০১৫ সালে ৮৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান৷
ছবি: Fredrik Sandberg/AFP/Getty Images
২০১০: মারিও বার্গাস ইয়োসা
পেরুর কথাসাহিত্যিক মারিও বার্গাস ইয়োসা বিংশ শতকের হিস্পানী লেখকদের মধ্যে অন্যতম৷ তার রচনায় লাতিন আমেরিকার ক্ষমতা, দুর্নীতি ও বিদ্রোহের চিত্র উঠে আসে৷
ছবি: AP
২০০৯: হোর্টা মুলার
রোমানিয়া বংশোদ্ভূত জার্মান ঔপন্যাসিক হের্টা মুলার ২০০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পান৷ নোবেল কমিটির ভাষায় ‘কবিতার একাগ্রতা এবং গদ্যের নিরাভরণতা দিয়ে তিনি উদ্বাস্তু মানুষদের জীবনচিত্র তুলে ধরেছন'৷
ছবি: Getty Images
২০০৮: হুয়ান-মারিও গুস্তাভ লা ক্লেজিও
ফরাসি সাহিত্যিক হুয়ান-মারিও গুস্তাভ লা ক্লেজিওকে ‘নতুন পথের দিশারি ও দুঃসাহসী কবি' বলে বর্ণনা করেন৷ ক্লেজিওর মা ফরাসি এবং বাবা মৌরিতানিয়ার নাগরিক হওয়ায় তার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে৷
ছবি: AP
২০০৭: ডরিস লেসিং
ব্রিটিশ লেখক ডরিস লেসিং একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ছোটগল্পকার৷ ৯৩ বছর বয়সে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান৷ তিনি পরমাণু অস্ত্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জোর প্রচার চালিয়েছেন৷
ছবি: AP
২০০৬: অরহান পামুক
অরহান পামুক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তুরস্কের প্রথম লেখক৷ তিনি একইসঙ্গে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের লেখক৷ তার এক কোটি ১০ লাখের বেশি বই বিক্রি হয়েছে৷ ইস্তানবুলে জন্ম নেওয়া এই লেখক বর্তমানে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৫: হ্যারল্ড পিন্টার
বৃটিশ নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টারের লেখা ‘দ্য কেয়ারটেকার' ও ‘দ্য হোমকামিং' গত অর্ধ শতকের সেরা নাটকগুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত হয়৷ ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত তাঁর একের পর এক নাটক বৃটিশ থিয়েটারের আদলই পাল্টে দিয়েছিল৷ তার চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রবল দুঃশ্চিন্তা, ঈর্ষাকাতরতা ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images
২০০৪ এলফ্রিডে ইয়েলিনেক
অস্ট্রীয় এ নাট্যকার ও ঔপন্যাসিকের সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘ডি ক্লাভিরস্পিলারিন'৷ বিশ্বজুড়ে যেটি ‘দ্য পিয়ানো টিচার' নামে পরিচিত৷ এই উপন্যাস থেকে ২০০১ সালে একই নামে ফরাসি ভাষা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়৷ তার লেখার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু ছিল নারীদের যৌনতা৷
ছবি: AP
২০০৩: জন ম্যাক্সওয়েল কুতসি
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই ঔপন্যাসিকের জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর একটি ‘ডিসগ্রস'৷ ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষী শাসনব্যবস্থার অবসানের পরও সেখানে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কিভাবে বর্ণবিদ্বেষ রয়ে গেছে তা তুলে ধরেন৷ ২০০৬ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷
ছবি: Getty Images
২০০২: ইমরে কার্তেজ
ইহুদী বংশোদ্ভূত হাঙ্গেরীয় লেখক ইমরে কার্তেজদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হলোকাস্ট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন৷ ইতিহাসের ঘৃণিত ওই অভিজ্ঞতা তিনি তার লেখনীতে টেনে আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Lundahl
২০০১: ভি এস নাইপল
ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে জন্ম নেওয়া বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল সাবলীল ভাষায় তার গল্প বলেন৷ তিনি তার উপন্যাসে প্রায়ই ক্ষয়িষ্ণু সামজে ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা তুলে ধরেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Giagnori
২০০০: গাও শিংজিয়ান
চীনের গাও শিংজিয়ান একাধারে লেখক, নাট্যকার এবং চিত্রশিল্পী৷ চীনা উপন্যাস ও নাটকে তিনি নতুন ধারার সূচনা করেন৷ অনুবাদক হিসেবেও তার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে৷