1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিংহের খাঁচায় অর্বান: ইউরোপীয় সংসদে হাঙ্গেরি নিয়ে বিতর্ক

১৯ জানুয়ারি ২০১২

বুধবার স্ট্রাসবুর্গে ইইউ সংসদের বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান'ও উপস্থিত ছিলেন, যার বিভিন্ন সংস্কার পদক্ষেপ নিয়ে ইউরোপ জুড়ে সমালোচনা ও উদ্বেগের ঢেউ উঠেছে৷

Hungarian Prime Minister Victor Orban
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বানছবি: picture-alliance/dpa

বস্তুত মঙ্গলবারেই যা ঘটার ঘটে গেছে৷ ইউরোপীয় কমিশন হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে তিনটি ক্ষেত্রে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ অর্বান সরকারের কয়েকটি সংস্কারের পরিকল্পনা হাঙ্গেরির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তার আইন ব্যবস্থা এবং তার তথ্য সুরক্ষা দপ্তরের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে, বলে সমালোচকরা মনে করেন৷ ইউরোপীয় কমিশনও শুধুমাত্র এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করে দেখবে৷ কিন্তু কমিশনের প্রেসিডেন্ট হোসে মানুয়েল বারোসো স্ট্রার্সবুর্গে সংসদকক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন, এটাই হল ইইউ'এর কোনো সদস্যদেশকে নিয়ে মৌলিক বিতর্কের আসল স্থান৷ বারোসো যুগপৎ তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গিও ব্যক্ত করেন:

‘‘আইনগত দিকগুলো ছাড়াও, হাঙ্গেরিতে গণতন্ত্রের মান, সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক এবং সরকার ও সুশীল সমাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়েও দ্বিধা প্রকাশ করা হয়েছে৷ আমি হাঙ্গেরি সরকারের প্রতি গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার মৌলিক নীতিগুলি মেনে চলার ও প্রয়োগ করার বিশেষ আহ্বান জানাচ্ছি - এবং শুধু নিয়মাবলি হিসেবেই নয়, বরং বাস্তবে, সমাজ ও রাজনীতির দৈনন্দিন ধারায়৷''

স্ট্রাসবুর্গে ইইউ সংসদের বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বানছবি: dapd

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের পক্ষে এরকম সুস্পষ্ট মতপ্রকাশ খুব গতানুগতিক নয়৷ অপরদিকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অর্বান'কে কিন্তু অত্যন্ত নরম সুর নিতে দেখা যায়, যদিও এ'বছরের সূচনায় এই সংসদেই তাকে অন্য মূর্তিতে আবির্ভূত হতে দেখা গেছে৷ অর্বান বিতর্কিত আইনগুলি নিয়ে আলাপ-আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেন৷ সব সমস্যা সহজে এবং শীঘ্র সমাধান করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

তা'তে কমিশনের মন রাখা সম্ভব হলেও, ইউরোপীয় সংসদ অতো সহজে ভবি ভোলার নয়৷ বিশেষ করে সমাজতন্ত্রী, উদারপন্থি এবং সবুজদের সাংসদরা ওর্বান'এর নীতির তীব্র সমালোচনা করেন৷ সংসদে সমাজতন্ত্রীদের নতুন গোষ্ঠী-প্রধান, অস্ট্রিয়ার হানেস স্ভোবোদা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ক্রোয়েশিয়া যাতে ইইউ'তে যোগদান করতে পারে, সেজন্য হাঙ্গেরি বিশেষ সচেষ্ট ছিল৷ স্ভোবোদা'র তির্যক মন্তব্য:

‘‘অর্বান সরকারের মতো সরকার নিয়ে ক্রোয়েশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকতে পারতো না, শর্তাবলি পূরণ করতে পারতো না৷ কাজেই মিস্টার অর্বান, আপনার এখন দেখা উচিৎ যে, হাঙ্গেরি অন্তত যেন সেই শর্তাবলি পূরণ করে৷''

অর্বানের বিরুদ্ধে হাঙ্গেরিতে বিক্ষোভছবি: dapd

সবুজদের গোষ্ঠী-প্রধান ডানিয়েল কন-বেন্ডিট ব্যঙ্গের পরিবর্তে রোষকেই অগ্রাধিকার দেন৷ তিনি অর্বান'কে চাভেজ কিংবা কাস্ত্রো'র সঙ্গে তুলনা করেন এবং হাঙ্গেরি সরকারের নীতিকে ইহুদি-বিদ্বেষী বলে অভিহিত করেন:

‘‘হাঙ্গেরির নতুন সংবিধানের মৌল ভাবনাটা হল অতীতের হাঙ্গেরির সংবিধান ভাবনা, যা'তে হাঙ্গেরির অনেক নাগরিকের ভয় থাকতে পারে৷ আপনাদের যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতাও থাকে, মিস্টার অর্বান, তবুও সংখ্যালঘুদের তাদের নিজেদের দেশে নিঃশঙ্কায় বেঁচে থাকার অধিকার আছে৷''

তবে সংসদে অর্বান'এর পক্ষ সমর্থন করার মতোও কণ্ঠ ছিল, এবং তাদের সবাই যে হাঙ্গেরির সাংসদ, এমন নয়৷ এক পর্যায়ে একজন বক্তা এনিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, বিতর্কটা ক্রমেই যেন বামপন্থি এবং রক্ষণশীলদের মধ্যে একটি মুক্ত সংসদীয় কাজিয়ায় পরিণত হয়েছে৷ অর্বান স্বয়ং তার চূড়ান্ত ভাষণে আবার হাওয়া গরম করেন৷ বিগত বছরে যেমন তাকে একাধিকবার করতে দেখা এবং শোনা গেছে, এবারেও তিনি তার সরকারের প্রতি বিরূপ সমালোচনাকে হাঙ্গেরির প্রতি বৈরী মনোভাবের সমতুল্য করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন৷ অর্বান বলেন:

‘‘হাঙ্গেরি স্বাধীনতা যোদ্ধাদের দেশ, আজও তাই আছে এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে৷ হাজার বছরের একটি ইউরোপীয় দেশ হিসেবে আমরা সকলের কাছ থেকে সম্মান দাবি করি৷ আমরা অন্যদের প্রতি যেমন দেখাই, সেরকম ইউরোপীয় ভব্যতা দাবি করি৷ যাদের কোনোরকম সন্দেহ আছে, তারা হাঙ্গেরিতে আসুন, আমাদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করুন, হাঙ্গেরির মানুষদের চিনতে শিখুন৷''

কিন্তু অর্বান বাকি যাই বলুন বা করুন, তার স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় সংসদে আসাটা অনেকটা সিংহের খাঁচায় ঢোকার মতো, এবং সেটুকু সাহস যে তিনি প্রদর্শন করেছেন, সেটা তার সমালোচকরাও স্বীকার করেছেন৷

প্রতিবেদন: ক্রিস্টফ হাসেলবাখ / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ