সিআইএ প্রধান হিসেবে মাইক পম্পেও গোপনে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোরীয় সংকটের অবসানের আশা প্রকাশ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সত্যি পরস্পরের মুখোমুখি হবেন, এমনটা বিশ্বাস করা বেশ কঠিন৷ কিন্তু এমন শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি যে জোরকদমে চলছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরুতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রধান মাইক পম্পেও গোপন সফরে উত্তর কোরিয়া গিয়ে সে দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷ ঠিক তার পরেই পম্পেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷
হোয়াইট হাউস ও সিআইএ অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা উচ্চ পর্যায়ের এই গোপন বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করেছেন৷ তাঁরা বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন৷ তাঁদের দাবি, আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে পম্পেও শীর্ষ বৈঠকের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ উল্লেখ্য, ট্রাম্প নিজে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন যে, দুই দেশের মধ্যে ‘অতি উচ্চ পর্যায়ে' সরাসরি আলোচনা চলছে৷
শুধু প্রতীকী সাক্ষাৎ নয়, ট্রাম্প কোরীয় উপদ্বীপে সংকটের অবসান করতে বদ্ধপরিকর৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কোরীয় যুদ্ধ শেষ করতে চান তিনি৷ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের প্রতি তাঁর ‘আশীর্বাদ' রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ সেখানে সংকটের অবসানের লক্ষ্যে এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে৷
ট্রাম্প ও কিমের সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকের জন্য জায়গা বাছাইয়ের কাজ চলছে৷ মোট ৫টি জায়াগার মধ্যে একটিতে এই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ হতে পারে৷ চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া অথবা কোরীয় সীমান্তে নিরপেক্ষ এলাকায় পানমুনজং গ্রামে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে৷
ফ্লোরিডায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ট্রাম্প কোরীয় সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ আবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্যোগের প্রশংসা করেন৷ ট্রাম্প বলেন, সম্ভবত মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের শুরুতে কিম জং উন ও তাঁর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে, যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ ট্রাম্প সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি না হলে আদৌ কোনো শীর্ষ বৈঠক না-ও হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে তিনি আগের মতোই কড়া পথে চলবেন৷
এক বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি
হোয়াইট হাউসে এক বছর পূর্ণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কাঠামোয় ভাঙন ধরাতে পারেনি৷ নিজের অনেক হুমকিও এখনো পর্যন্ত কার্যকর করেননি ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিশ্বে ভগ্ন ভাবমূর্তি
গ্যালপ সংস্থার জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, এক বছরে অ্যামেরিকার বাইরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ তবে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা ট্রাম্প দেশের মধ্যে নিজের সমর্থকদেরই গুরুত্ব দেন৷ বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
অনির্দিষ্ট পররাষ্ট্র নীতি
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে এতকালের প্রচলিত ধারা ভেঙে অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁর সিদ্ধান্ত প্রায়ই অনিশ্চয়তায় ভরা থাকে৷ ফলে আগে থেকে তাঁর উদ্দেশ্য বোঝা প্রায়ই সম্ভব হয় না৷ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রধান কর্ণধারের এমন খামখেয়ালিপনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর স্থিতিশীলতার জন্য মোটেই সহায়ক হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
একলা চলো রে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে প্যারিস চুক্তি বর্জন করেছেন, তার ফলে বাকি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও ক্রোধ দেখা গেছে৷ ট্রাম্প অ্যামেরিকাকে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলে এসেছেন৷ কার্যক্ষেত্রে অবশ্য ন্যাটোর মতো জোট ত্যাগ করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ইরানের বিরুদ্ধে তোপ
২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে যে চুক্তি করেছিলো, ট্রাম্প তার ঘোরতর বিরোধী৷ বিশেষ করে সে দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক সংকটে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ৷ তবে চরম সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি এখনো এই চুক্তি থেকে সরে আসেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Marovich
ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার আশায় এ পর্যন্ত সব মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কমবেশি চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ জেরুসালেম শহরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার মাধ্যমে ট্রাম্প সেই ধারা ভেঙে দিয়েছেন৷ দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরোয়া করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি
নরম-গরম বার্তা পাঠিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্পর্কে নিজের অবস্থান অস্পষ্ট রেখেছেন ট্রাম্প৷ কখনো ‘লিটল রকেট ম্যান’-কে ধমক দিয়েছেন, কখনো তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ চীনকে কাছে টেনে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে রাশ টানার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তার ব্যয়ও মেক্সিকোকে বহন করতে হবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করারও হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ এখনো পর্যন্ত দুটি ক্ষেত্রেই কোনো অগ্রগতি ঘটেনি৷