ঢাকায় একজন সিএনজি চালকের অশ্লীল আচরণের শিকার এক নারী৷ তবে সাহস করে মুখ খুলেছেন তিনি৷ ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে জানিয়েছেন তাঁর সেই ‘ভয়ংকর অভিজ্ঞতার' কথা৷ সতর্ক করেছেন অন্যদেরও৷
বিজ্ঞাপন
ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছুটিতে থাকায় অফিস থেকে সিএনজি ট্যাক্সিতে বাসায় ফিরছিলেন ড. সাইরিন আহসান চৌধুরী৷ গন্তব্য পান্থপথ থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা৷ সিএনজিতে ওঠার পর সাইরিন খেয়াল করেন চালক তার লুকিং গ্লাস দু'টো এমনভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছেন যেন তিনি সাইরিনকে পুরোপুরি দেখতে পান৷ হিজাব পরা সাইরিন একসময় লক্ষ্য করেন, চালক তাঁর দিকে ক্যাঁটকেটে চোখে তাকিয়ে আছেন এবং ‘হস্তমৈথুন' করছেন৷
আতঙ্কিত সাইরিন তখন মুঠোফোন তাঁর স্বামীকে ফোন করে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত অনবরত কথা বলতে থাকেন৷ বাসায় ফেরার পর তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্টে জানান৷ ২২ আগস্ট সাইরিনের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা ভিডিওটি ইতোমধ্যে দেখা হয়েছে দু'লাখ বার৷ অনেকে সেটি শেয়ার করেছেন৷
ভিডিওটি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করে অপ্সরি অহনা লিখেছেন, ‘‘ভুল শহরে জন্মেছি৷ কোন ধরনের ট্রান্সপোর্ট ইউজ করবো, যেখানে হ্যারাস হওয়ার বালাই থাকবে না?''
তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘‘লোকাল বাসে হেল্পার নামের কীটগুলো গায়ের উপর উঠে যায়, সিটিং বাসে পাশের সিটের লোকটা নিউজ পেপার পড়ার অযুহাতে কিংবা দু'হাত পা ছড়িয়ে বসে নানান ধরনের অঙ্গভঙ্গি করে৷ আর এখন সিএনজি-তেও সিকিউরিটি নেই৷''
অহনা আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘‘আমি বারবার মরে যাই, কারণ আমি মেয়ে তাই৷ ড্রেস, গেটআপই যদি ফ্যাক্ট হয় তাহলে এই হিজাব পড়া আপির গেটআপে কী প্রবলেম শুনি??''
নারীদের চলাফেরার জন্য বিপজ্জনক ৭টি শহর
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এ নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ করেছে৷ ৬,৫৫০ জন নারীর উপর চালানো ঐ জরিপে বলা হচ্ছে যে, বিশ্বের সাতটি শহরের পরিবহন ব্যবস্থা নারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP/Getty Images
নতুন দিল্লি, ভারত
কোনো নারী যদি একা একা এই শহরটি ঘুরে বেড়াতে চান, তবে তা নাকি সম্ভব নয়৷ এই শহরে আড়াই কোটি মানুষের বাস, মানুষের বাসবাসের দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজধানী এটি৷ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে ২৩ বছরের এক তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনাই প্রমাণ করে যে শহরটির গণপরিবহন ব্যবস্থা কতটা অনিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোগোটা, কলম্বিয়া
নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিবহন ব্যবস্থার তালিকায় প্রথম স্থান বোগোটার৷ জরিপ বলছে, বোগোটায় ৯৬ লাখ মানুষের বাস৷ অথচ সেখানকার বাস ও ট্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ৷ বিশেষ করে রাতে কোনো নারী বাস ও ট্রেনে চলাফেরা করলে যৌন হয়রানি ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন৷
ছবি: Reuters/John Vizcaino
মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো
২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস মেক্সিকোর রাজধানীতে৷ জরিপ বলছে, এই শহরে যেসব নারী গণপরিবহনে চলাফেরা করেন তাঁরা প্রায়ই মৌখিক ও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন৷
ছবি: Reuters/Edgard Garrido
লিমা, পেরু
পেরুর রাজধানী লিমায় ৬২ লাখ মানুষের বাস৷ এই শহরের এক তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে৷ ফলাফল গণপরিবহনে নারীদের চলাচল এখানে ভয়াবহ বিপদজনক৷ ছিনতাই, যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা৷
ছবি: Reuters/Enrique Castro-Mendivil
জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া
জাকার্তার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভীষণ ত্রুটিপূর্ণ৷ গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সেখানকার সরকার৷ তাই ট্রেনে নারী ও পুরুষের আলাদা বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ অফিস টাইমে ও অফিস ছুটির সময় মিনিবাসে পকেট কাটা খুবই সাধারণ ঘটনা৷
ছবি: Ulet Ifansasti/Getty Images
কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে দুইটি বিষয়ের দিকে নজর রাখা হয়েছে জরিপে৷ প্রথমত ঐ শহরে রাতের বেলায় গণপরিবহনে নারীরা নিরাপদ কিনা এবং দ্বিতীয়ত গণপরিবহনে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন কিনা৷ মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে গণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নারীদের জন্য নিরাপদ নয়৷
ছবি: Manan Vatsyayana/AFP/Getty Images
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটকদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান ব্যাংকক৷ কিন্তু সেখানেও গণপরিবহন নারীদের চলাচলের জন্য তেমন নিরাপদ নয়৷ বাস বা ট্রেনে পকেট কাটা ও যৌন হয়রানি এখানে হরহামেশাই হয়ে থাকে৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ইমরান বক্স মিশু লিখেছেন, ‘‘আর কতকাল পাশবিক দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্যের মুখোমুখি হতে হবে নারীদের...??? উন্নত বিশ্বের চাকচিক্কে নিজের চারিত্রিক গুণাবলীর অবক্ষয় পশুত্বের পরিচয় নয় কি...?? সকলের মাঝে সুশীল মানসিকতার সুষ্ঠ বিকাশ কি এই একবিংশ শতাব্দীতেও সম্ভহাবনার অতীত হয়ে থাকবে?? লজ্জিত আজ আমি এই মানুষ নামক পরিচয়ের বাহক ভাবিতে৷''
কেউ কেউ অবশ্য এই ঘটনা অতিরঞ্জিত কিনা বা আসলে কতটা ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ সজিব ইসলাম লিখেছেন, ‘‘ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা সেদিকে যাব না৷ অনেকরকম ঘটনাই বাংলাদেশে ঘটে৷ তাই বলে....সিএনজি করে এসে বাসায় পৌঁছাল, অথচ বাসার সামনে ড্রাইভারকে ধরে পিটানো হলো না, এটা আমার কাছে অসংগতিপূর্ণ মনে হচ্ছে৷''
এসি/ডিজি
প্রিয় পাঠক, আপনি কি কখনো এমন অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷