এইচআইভি আক্রান্ত এক মার্কিন নাগরিক সিঙ্গাপুরে ঐ দেশের ও বিদেশি এইচআইভি আক্রান্ত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করেছেন৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ১৪ হাজার ২০০ মানুষের তথ্য ফাঁস করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত বছর সিঙ্গাপুরের জাতীয় স্বাস্থ্য তথ্যভাণ্ডারে সাইবার হামলা হয় বলে নিশ্চিত করেছিল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ কিন্তু সেসময় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছিল৷ আর এবার ফাঁস হল এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য৷
মার্কিন নাগরিক মিকি ফেরেরা ২০০৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে ছিলেন এবং ২০১৭ সালে মাদক সংক্রান্ত নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি৷ এসব কারণে আদালতের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন এবং কারাভোগের পর তাকে সিঙ্গাপুর থেকে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷
গত সপ্তাহে মিকি অনলাইনে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন৷ ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আক্রান্ত ৫ হাজার ৪০০ সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থানরত ৮,৮০০ বিদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার, নাম, আইডি নাম্বার, ঠিকানা প্রকাশ করেন তিনি৷
সিঙ্গাপুরে এইচআইভি সংক্রমিত বিদেশি নাগরিকদের দীর্ঘ সময় সেদেশে থাকার নিয়ম নেই৷ এসব ব্যক্তিদের কর্ম ভিসা এবং পর্যটন ভিসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে দেশটিতে৷
২০১৬ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানতে পারে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে মিকি নিজের এইচআইভিতে আক্রান্ত সংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলেছেন৷ গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয় জানতে পারে এবারও মিকি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন৷ মিকি'র প্রেমিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন এবং তিনিই এ সুযোগ সৃষ্টি করেছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিকিকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার পর তিনি বিদেশেই অবস্থান করছেন৷ কিন্তু কোন দেশে তা নিশ্চিত করেনি মন্ত্রণালয়৷
সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাকশান ফর এইডস জানিয়েছে, এই ঘটনাটি এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনবে৷ যে ব্যক্তি এই জঘন্য অপরাধ করেছে, তার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে তারা৷
মিকির বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করছে এবং যে দেশে তিনি রয়েছেন, সেদেশের কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ৷
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকরা মিকি'র সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!