ফিলিস্তিনি কিশোরীর ইসরায়েলি সেনাদের চড় দেয়ার ঘটনা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র আজ প্রদর্শনীর কথা ছিল সিঙ্গাপুর-ফিলিস্তিন চলচ্চিত্র উৎসবে৷ কিন্তু মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়াতে পারে আশঙ্কা থেকে তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ‘‘এই তথ্যচিত্রে এমন বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আমাদের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভাজনের জন্ম দেবে৷'' সিঙ্গাপুরের ৫৬ লাখ অধিবাসী চীনের আদিবাসী গোষ্ঠী৷ এছাড়া সেখানে মুসলিম মালয় এবং সংখ্যালঘু ভারতীয়ও রয়েছে৷ দেশটিতে ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ায়– এমন কোনো কিছু প্রদর্শনের ব্যাপারে সেখানে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে৷
সিঙ্গাপুর-ফিলিস্তিন চলচ্চিত্র উৎসবে ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শন হয়৷ ২০১৬ সাল থেকে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত না হলেও বাকি আর যে চারটি ছবি প্রদর্শনের কথা ছিল, সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ে দেখানো হচ্ছে আজ৷
যে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ হয়েছে, তাতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী দুই কিশোরীর কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে৷ তাদের একজন আহেদ তামিমিকে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলি সেনাদের চড় মারার কারণে গ্রেফতার করা হয়৷ ২৯শে ডিসেম্বর জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরে বিক্ষোভ করছিল ফিলিস্তিনিরা৷ এ সময় ফিলিস্তিনের সমাজকর্মী তামিমির পরিবারের এক সদস্যের মাথায় গুলি করে ইসরায়েলি সেনারা৷ এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে এক পর্যায়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দু'জন ইসরায়েলি সেনাকে কয়েক দফায় চড় দেন তামিমি৷ এ কারণে তাকে ‘ফিলিস্তিনিদের বীর' উপাধি দিয়েছে ফিলিস্তিনিরা৷ ইসরায়েলি সেনাদের হয়রানিসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে তামিমির বিরুদ্ধে৷
সিঙ্গাপুরের ইনফোকম মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, ‘‘তথ্যচিত্রটিতে যেভাবে কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে, তা জ্বালাময়ী, এর বক্তব্য বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াতে পারে৷''
এদিকে, চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক আদেলা ফো সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে তিনি সম্মান জানান এবং এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন না৷ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, এই ঘটনায় তিনি হতাশ এবং মর্মাহত৷
প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কিছু ছবি
১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে জয়ের পর, তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের কাছে জড়ো হয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড রুবিংগার৷ দেখুন সদ্য প্রয়াত সেই ফটোগ্রাফারের কিছু বিখ্যাত ছবি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
১৯৬৭ সাল: গাজা স্ট্রিপ
১৯২৪ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড রুবিংগার৷ কিন্তু নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নিজে বাঁচলেও, মা মারা যান হলোকস্টে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলন, সে সময়ই তাঁর মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তীতে ফটোসাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছ’দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কীভাবে মিশরের সেনা ও ফিলিস্তিনিদের আটক করছে৷
ছবি: Getty Images/GPO/David Rubinger
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে একত্রিত প্যারাট্রুপাররা
ডেভিড রুবিংগারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ এটি৷ এখানে ইসরায়েলি সেনাদের জেরুজালেমের তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের ওপর দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল৷ রুবিংগার এই ছবিটি তোলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে৷ ইসরায়েলি সরকার খুব কম দামে সকলের কাছে এই ছবিটি বিক্রি করে৷ ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
যুদ্ধের সময় আরিয়েল শারন
এই ছবিটি সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান আরিয়েল শারনকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে, ১৯৬৭ সালের ১ জুন ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে৷ ছ’দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন চারেক আগে তোলা এই ছবিটি৷ শারন পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০১৪ সালে মারা যান তিনি৷
ছবি: Getty Images/GPO/Newsmakers/David Rubinger
দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র
এ ছবিতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের দিকে চলেছে ইসরায়েলি সেনারা৷ ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়া যখন গোলান উপত্যকায় হামলা চালায়৷ রুবিংগার সেসময় জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ১০টি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে ছবি তোলেন৷ ২০০৭ সালে নিজের বইটিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, আমি সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম৷ তাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি৷’’ তাঁর বইটির নাম ‘ইসরায়েল থ্রু মাই লেন্স: একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে ৬০ বছর’৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ইসরায়েল৷ এ যুদ্ধ অক্টোবর যুদ্ধ নামেও পরিচিত৷ রুবিংগারের এই ছবিতে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর আর সিরীয় সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিও ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ আশির দশকেও এ অঞ্চলে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলি সেনা আর বিষাদগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি তুলেছিলেন রুবিংগার৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
জাতি নিমার্ণের আলোকচিত্রী
ডেভিড রুবিংগার তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ ইসরায়েলের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ডেভিডকে রুবিংগারকে ‘একটি জাতি তৈরির আলোকচিত্রী’ হিসেবে গণ্য করেছিলেন৷