সিঙ্গাপুরে ছয় জন বাংলাদেশির দেহে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবরটি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন৷
বিজ্ঞাপন
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে একটি ই-মেইলে জানিয়েছেন, বুধবার মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন৷ তিনি এটাও জানান যে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে সীমিত আকারে লক্ষণ দেখা গেছে এবং তাদের অনেকেই নিরাময়ের পথে৷ কেউ কেউ শিগগিরই সেরে উঠবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাংলাদেশ হাই কমিশন এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলেও জানানো হয়েছে৷
গত বছর ব্রাজিল ও আশেপাশের দেশগুলোতে জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷
শ্রমিকদের দেহে জিকার সংক্রমণ
গত শনিবার সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক মালয়েশীয় নারীর সিঙ্গাপুরে এসে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করে৷ এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত তারা ১১৫ জনের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন৷
জিকা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়৷ তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে৷ সিঙ্গাপুর সরকার এরই মধ্যে বিদেশি শ্রমিকদের মশারি ব্যবহার করতে এবং মশা যাতে বংশ বিস্তার না করতে পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমিকরা যে পরিবেশে থাকে, তাতে খুব সহজেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কর্মীরা নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি৷ তবে স্থানীয় যেসব সাংবাদিক সেখানে প্রবেশ করেছিলেন, তারা জানিয়েছেন, জিকায় সংক্রমিত শ্রমিকরা এখনো আগের জায়গাতেই আছেন, তবে তাদের অন্যদের থেকে আলাদা রাখা হয়েছে৷
ভারতের ১৩ জন আক্রান্ত
সিঙ্গাপুরে জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৩ জন ভারতীয়৷ সিঙ্গাপুরের ভারতীয় দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে৷
বর্তমানে আলোচিত এক ভাইরাস ‘জিকা’৷ ভারত, পাকিস্তানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ এখনও এ থেকে মুক্ত৷ তবে সতর্ক থাকতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Dana
লক্ষণ
জ্বর, ব়্যাশ (চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি), গোঁড়ালিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া – জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত এ সব লক্ষণ দেখা দেয়৷ এছাড়া পেশীতে ও মাথায়ও ব্যথা হতে পারে৷ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Almeida
নামকরণের ইতিহাস
‘জিকা’ নামটি নেয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে৷ ১৯৪৭ সালে হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা জিকা বনে একটি খাঁচায় একটি বানর রাখে৷ পরে বানরটি জ্বরে পড়লে তার দেহে একটি সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়৷ ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস৷ এরপর ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় এক মানুষের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters/R. Paiva
যেসব দেশে ছড়িয়েছে
২০১৫ সাল নাগাদ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন নাগরিকের শরীরেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷
যেভাবে ছড়ায়
এডিস ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে৷ ফলে মশার কামড় থেকে বাঁচার যে উপায়গুলো আছে সেগুলো মেনে চললেই এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/J. Gathany/Centers for Disease Control and Prevention via AP
গর্ভবতী নারীরা বেশি সাবধান!
সম্প্রতি একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না গবেষকরা৷ তাঁদের কারও মত হচ্ছে, কয়েকটি দেশে শিশুদের ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা৷ এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না, ফলে শিশুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বা বিলম্বিত হওয়া থেকে শুরু করে অকালে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়৷ বৈজ্ঞানিকভাবে অবশ্য এটি এখনও প্রমাণ করা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Dana
ভ্যাকসিন নেই
এই রোগের চিকিৎসায় এখনও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি৷ ফলে সতর্ক থাকাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ৷ অবশ্য এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল৷