সিঙ্গুরে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের অধিগৃহীত কৃষিজমির একাংশ ২৫ জন কৃষককে ফিরিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের সাফল্য বৃত্তটি সম্পূর্ণ হলো৷
বিজ্ঞাপন
সুপ্রিম কোর্টের রায় কৃষিজমি রক্ষার পক্ষে যাওয়ার পরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন, টাটা মোটরসের ন্যানো কারখানার কাঠামো ভেঙে, জমি খালি করে এবং সে জমি চাষযোগ্য করে জমির মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেবেন৷ নিজের প্রশাসনের জন্যে একটা সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা৷ ২০ অক্টোবর৷ যদিও সব জমি ফেরত দেওয়া গেল না, কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখে ২৫ জন কৃষককে তাঁদের প্রায় সাত একর জমি ফিরিয়ে দেওয়া হলো৷ মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামলেন এবং নিজের হাতে ছড়িয়ে দিলেন সর্ষের বীজ৷ বললেন, শীতের আগে সর্ষের চাষ দিয়ে শুরু হলো, এরপর মরশুম অনুযায়ী আলু ও ধানচাষ হবে৷ সারা বিশ্বে কৃষিজমি অধিগ্রহণমুক্ত করার মডেল হয়ে উঠবে সিঙ্গুর, বললেন মমতা৷
মায়েদের জন্য মায়েদের বাজার
ভারতের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত মনিপুর রাজ্যে ‘ইমা কাইথেল’ নামে মহিলাদের জন্য একটি বাজার রয়েছে, যেটা মহিলাদের দ্বারাই পরিচালিত৷ এই বাজারটি শুরু হয় ১০০ বছরেরও আগে মনিপুরের একটি বিরল এলাকায়৷
ছবি: Bijoyeta Das
ইমা কাইথেল
ইমা কাইথেল নামের এই বাজারটি ভারতের মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলে৷ বিশ্বে পুরোপুরি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত বাজারগুলির মধ্যে ইমা কাইথেল অন্যতম৷ এখানে পুরুষরা কেনাকাটা করতে আসলেও, বেশিরভাগ ক্রেতা এবং বিক্রেতাই নারী৷
ছবি: Bijoyeta Das
পুরনো ঐতিহ্য
ইমা কাইথেল, মনিপুরি ভাষায় যার অর্থ হলো ‘মায়েদের বাজার’৷ এরকম একটা বাজার মনিপুরের পুরনো ঐতিহ্যের একটি অংশ৷ এ বাজারে মহিলারা নানা ধরণের জিনিস বিক্রি করেন খোলা আকাশ এবং টিন শেডের তৈরি ঘরের নীচে৷ মাত্র কয়েক বছর আগে এই বাজারটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়৷ একটি অংশ কাপড়-চোপড় আর টুকিটাকি বিভিন্ন জিনিসের জন্য আর অন্য অংশে বিক্রি করা হয় খাদ্যদ্রব্য৷
ছবি: Bijoyeta Das
নানা রকমের পণ্য
নানা ধরণের পণ্য কেনা-বেচা হয় শুধুমাত্র নারীদের দ্বারা পরিচালিত এই বাজারটিতে, যা পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে৷
ছবি: Bijoyeta Das
নির্বাচিত বিক্রেতা
বাজারে সকল বিক্রেতারই নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকে এবং তার জন্য তাদের মিউনিসিপ্যালিটিতে অল্প কিছু টাকাও দিতে হয়৷ অনেক সময় আবার কোনো কোনো বিক্রেতা ঘুরে ঘুরেই তাঁদের ফল আর সবজি বিক্রি করেন৷ আবার অনেকে বাজারের বাইরে গিয়ে বসেন তাঁদের পণ্য নিয়ে৷
ছবি: Bijoyeta Das
কাজের দিনগুলো বেশ লম্বা
সোমবার থেকে শনিবার – প্রতিদিন বাজারটি খোলে ভোর সাতটায় আর বন্ধ হয় সন্ধ্যে ছয়টায়৷ শুধু রবিবার ইমা কাইথেল একটু দেরি করে খোলা হয়৷ তাও সকাল ১০টার মধ্যেই৷ এলাকার মানুষ ছাড়াও বাজারে ভিড় করেন পর্যটরাও৷
ছবি: Bijoyeta Das
খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা
ছবিতে দেখুন, মহিলারা কেমন আরাম-আয়েশ করে বসে আছেন আর অপেক্ষা করছেন খদ্দেরের জন্য৷
ছবি: Bijoyeta Das
গরম রাখেন
একজন মা শীতে শরীর গরম রাখতে চা পান করছেন আর কয়লার চুল্লির ওপরে হাত দিয়ে তাপ নিচ্ছেন৷
ছবি: Bijoyeta Das
আড্ডার জায়গা
ইমা কাইথেল শুধু যে বেচা-কেনার জায়গা হিসেবেই ব্যবহার হয়ে থাকে তা নয়, এখানে এসে মায়েরা নানা বিষয় নিয়ে গল্পগুজবও করেন৷ অনেকটা ‘মিটিং পয়েন্ট’-এর মতো৷ আর সেখানে, সেই আলোচনায় রাজনীতিও স্থান পায়৷
ছবি: Bijoyeta Das
8 ছবি1 | 8
গাড়ি কারখানার জন্য ৯৯৭ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করেছিল পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার৷ দিন–রাত কাজ করে, গাড়ি কারখানার কংক্রিট আর ইস্পাতের কাঠামো ভেঙে, আবর্জনা সরিয়ে জমি পরিস্কার করে, ট্র্যাক্টর আর পাওয়ার টিলার দিয়ে মাটি খুঁড়ে তার প্রায় ৯৩২ একর, মানে ৯০% জমি চাষযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে৷ বাকি ৬৫ একর জমিও খুব তাড়াতাড়িই চাষের উপযোগী করে ফেলা হবে৷ তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ৮ নভেম্বর৷ বলেছেন ১০ নভেম্বরের মধ্যে সব জমি ফেরত যাবে মালিকদের হাতে৷ এদিন স্বাভাবিকভাবেই আবেগতাড়িত ছিল সিঙ্গুর৷ কৃষক পরিবারগুলি আনন্দে হেসেছেন, কেঁদেছেন, নেচে–গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন৷
রাজনীতিক মমতা ব্যানার্জি যে আদতেই কী অসাধ্যসাধন করেছেন, সিঙ্গুরবাসীর ওই বহিঃপ্রকাশেই তা ধরা পড়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী নয়, সেই রাজনীতিক মমতা তাঁদের বলে এলেন, অধিকার কেড়ে নিতে হয়৷ লড়াই ছেড়ে কখনও পালিয়ে যেতে নেই৷ এই দুটো কথা সবসময় মনে রাখবেন৷ শুক্রবার কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিক সিঙ্গুরের একটি ছবি ছেপেছে৷ আদিগন্ত চাষের ক্ষেতে মাটি চষতে ব্যস্ত গোটা ছয়েক ট্র্যাক্টর৷ তাদের সামনে এক কৃষক পিতা তাঁর বালিকা কন্যাকে হাত তুলে কিছু একটা দেখাচ্ছেন৷ ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে— এই প্রজন্মের বলার মতো একটা গল্প আর পরের প্রজন্মের জন্য গড়ে তোলার মতো এক ভবিষ্যৎ৷ আদতেই সিঙ্গুর তাই৷ চলতি প্রজন্ম মনে রাখবে তার লড়াইকে, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বকে৷ আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই সাফল্যের ওপর ভরসা করে গড়বে তাদের নতুন জীবন৷
তিলোত্তমা কলকাতার শহুরে কথকতা
কলকাতা শহর যে কোনো আলোকচিত্রীর জন্য এক রত্নখনি৷ তার দৈনন্দিন জীবনেও লুকিয়ে থাকে হাজার মজা, শুধু খুঁজে নিতে হয়৷ শহরটারও একটা মেজাজের আন্দাজ তার থেকে পাওয়া যায় বৈকি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অচল যান
পুরনো জিনিসের দোকানে লাইন দিয়ে রাখা অচল সাইকেল৷ তাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ক্লান্ত পা
গাড়িতে মাল বোঝাই আর খালাসের কাজ করেন যেসব মজুর, তাঁরা বিশ্রাম নেওয়ার সময় পান কই! যাতায়াতের পথেই বিশ্রাম দেন ক্লান্ত পা-কে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গভীর জলের মাছ
অতিকায় সব মাছ৷ তারা যতই গভীর জলের হোক, ঠিক ধরা পড়তে হয় জেলেদের হাতে৷ তার পর সটান শহরে, মাছের বাজারে, বঁটির সামনে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
‘সড়কছাপ’ স্টাইল
সবাই কি আর চুল কাটানোর জন্যে সেলুনে যেতে পারে! তাদের জন্যে আছে ফুটপাথের নাপিত৷ চটপট বাটিছাঁট৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
দ্বিখণ্ডিত
আসলে পোশাকের দোকানের ম্যানিকিন, গাড়িতে চড়ে এসেছিল নতুন রঙের পোঁচ গায়ে মাখতে৷ ফিরে যাচ্ছে দোকানের শোকেসে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
কফি হাউস
কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস৷ সারাদিনই ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ে সরগরম৷ কিন্তু অনেকেই আসেন দু’দণ্ড শান্তি পেতে৷ সে বনলতা সেনেরা থাকুক, বা না থাকুক৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অন্য আড্ডা
হলোই বা বহুজাতিক ফাস্ট ফুড সংস্থার ম্যাসকট, তাকেও আড্ডায় সামিল করা বারণ নাকি! আসলে শহরে কোথাও বসে আড্ডা মারার জায়গা নেহাতই কম৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মাটির কেল্লা
দেখে মনে হতে পারে আদিবাসীদের কোনো স্থাপত্য৷ আসলে উঁচু করে সাজিয়ে রাখা মাটির ভাঁড়, ফুটপাথের চায়ের দোকানে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সবটাই সার্কাস
রাস্তার সার্কাস৷ খেলা দেখায় মাদারিওয়ালারা৷ আসলে এই নগরজীবন, পুরোটাই তো এক সার্কাস৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
9 ছবি1 | 9
শিল্পায়নের নামে কৃষকের জমি জোর করে যে কেড়ে নেওয়া যায় না, সিঙ্গুর আন্দোলনের এই দাবিকে মান্যতা দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়৷ এই ঐতিহাসিক রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে দেশের যে কোনো প্রান্তে এ ধরনের জমি–বিরোধের মীমাংসার ক্ষেত্রে৷ তার সঙ্গে জুড়ে থাকবে সিঙ্গুরের প্রতিবাদী কৃষক আর তাঁদের জমি রক্ষার আন্দোলনের নাম৷
তবে বিরোধিতাও কি একেবারেই নেই? সিঙ্গুরের বাসিন্দা গোপাল বাগ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের জমিতে সর্ষের বীজ ছড়ালেন৷ কিছুদিনের মধ্যেই লোকে সর্ষেফুল দেখতে পাবেন সিঙ্গুর জুড়ে৷ এর কি কোনো প্রতীকী অর্থও আছে? সম্পন্ন পরিবারের ছেলে গোপাল খুবই উৎসাহিত ছিলেন সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানা নিয়ে৷ ওই কারখানার সুবাদে গোটা এলাকার ভোল যে বদলে যাবে, তার ইঙ্গিতও তিনি পেয়েছিলেন৷ অন্তত গোটা ছয়েক প্রথম সারির ব্যাঙ্ক সিঙ্গুরে তাদের এ টি এম যন্ত্র বসিয়ে দিয়েছিল টাটা কারখানা তৈরির কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই৷
ভারতের কিছু বিতর্কিত আইন
ভারতে এমন কিছু কিছু আইন আছে, যা খুবই স্পর্শকাতর৷ তাই এ সব আইন নিয়ে প্রশ্ন তুললেই শুরু হয়ে যায় তুমুল বিতর্ক৷ তখন শেষ পর্যন্ত আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, দিতে হয় সমাধান৷ এই রকমই কয়েকটি আইন তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
৩৭০ ধারা
ভারতীয় সংবিধানের এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় কতগুলি ক্ষেত্রে স্বশাসনের বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্য গণপরিষদ এর সংশোধনের সুপারিশ না করায়, এটা এ মুহূর্তে স্থায়ী বিধান হয়ে আছে৷ তবে জাতীয় নিরাপত্তা, অত্যাবশ্যক পণ্য, সর্বভারতীয় নিয়োগ বিধি, কর ও শুল্ক, আদালত, মানবাধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীর অন্যান্য রাজ্য থেকে অভিন্ন৷
ছবি: Mohammadreza Davari
সোচ্চার সংঘ পরিবার
৩৭০ নম্বর ধারা রদ করার জন্য ভারতে সংঘ পরিবারের মতো কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলি জোর আন্দোলন শুরু করেছে৷ সরকারকে তারা ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে এ জন্য৷ তাদের মতে, এই ধারা ভারতের সংহতি ও অখণ্ডতার পরিপন্থি৷ শুধু তাই নয়, এই ধারা নাকি জম্মু-কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য অনেকখানি দায়ী৷ সরকার অবশ্য এই বিতর্কে নিজেকে জড়াতে চাইছে না৷
ছবি: AP
এএফএসপিএ বা আফস্পা
সেনাবাহিনীর বিশেষ অধিকার আইন বা এএফএসপিএ কার্যকর হয় ১৯৫৮ সালে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীরে৷ জঙ্গি তৎপরতা রুখতে এই আইনে সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে অবাধ ক্ষমতা৷ এতে করে ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার, যখন খুশি তল্লাসি, কোনো কারণ না দেখিয়ে আটক এবং নির্যাতন করতে পারে মিলিটারি৷ তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, এ আইন অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবত থাকতে পারে না৷ বরং ক্ষেত্রবিশেষে তদন্ত করতে হবে৷
ছবি: AP
প্রতিবাদী নারী শর্মিলা চানু
মানবাধিকার সংগঠনগুলি আফস্পার বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ অভিযোগ, গত দু’দশকে মনিপুরে এ আইনকে কাজে লাগিয়ে সাজানো সংঘর্ষে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী৷ এ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও মনিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৬ বছর ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন লৌহমানবী ইরম শর্মিলা চানু৷ নাকে ১৬ ইঞ্চির টিউব লাগানো তাঁর এই প্রতিবাদী ছবি গোটা দুনিয়া চেনে৷ আত্মহত্যার মামলা দায়ের করেও তাঁকে থামানো যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
৩৭৭ ধারা
ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামিতা এখনও অপরাধ৷ সমলিঙ্গের দুই প্রাপ্তবয়স্ক যদি পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনকাজে লিপ্ত হয় এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলেও ৩৭৭ নং ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ১০ বছরের জেল, এমনকি যাবজ্জীবন কারাবাসও হতে পারে৷ ভারতের সমকামী গোষ্ঠীগুলি ব্যক্তিস্বাধীনতার খেলাপ মনে করে এই আইন বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিীন ধরে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে ভারতের জনমত বিভাজিত৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R. Kakade
এলজিবিটি সম্প্রদায়ের নতুন পিটিশন
সম্প্রতি ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদটির বিরুদ্ধে আবারো পিটিশন দায়ের করেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কয়েকজন সেলিব্রেটি৷ বের হয় মিছিলও৷ হাতের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনে লেখা থাকে ছিল, ‘সমকামীদের ব্যক্তিগত জীবন বেছে নেবার অধিকার দিতে হবে৷’ ঋতু ডালমিয়া, আমন নাথ এবং নৃত্যশিল্পী এনএস জোহর-এর মতো তারকারা ছিলেন সেই মিছিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণপ্রথা বিরোধী আইন
ভারতে আজও পণপ্রথা বিরোধী আইনের ৪৯৮-এ ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কখনও কখনও ঘটে যায় বধু হত্যার মতো ঘটনা৷ এই ধারা অনুযায়ী, বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে স্ত্রী আত্মহত্যা করলে বা তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে, স্বামী বা অন্য সদস্যদের প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা নির্দোষ৷ তা নাহলে বধু নির্যাতনের অপরাধে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে৷ তবে স্ত্রী যাতে এই আইনের অপব্যহার না করেন, সেদিকটাও এবার খতিয়ে দেখতে চায় আদালত৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
আত্মহত্যা না খুন?
এ বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির ফতেপুর বেরিতে ২২ বছরের নববিবাহিতা বধু ববিতাকে শ্বশুরবাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ বৌটির বাপেরবাড়ির লোকেদের অভিযোগ, পণের জন্য ববিতার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা৷ আর সে কারণেই ববিতা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় অথবা আত্মহত্যার মোড়কে তাঁকে খুন করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই৷
ছবি: Getty Images/AFP
জাতিভেদ প্রথা অপরাধযোগ্য
জাতিভেদ বা অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ আইনের ১৭নং ধারায় এই আইন লঙ্ঘনে ছ’মাসের জেল ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কারণ মানুষের ব্যক্তি অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ সামাজিক মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া, ওঠা-বসা, ধর্মীয় স্থানে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে নীচু জাত আর উঁচু জাতের মধ্যে বিভেদ করা অবৈধ৷ ১৯৭১ সালে আইনটি সংশোধন করে তার নাম দেওয়া হয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা আইন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
দলিতরা কি মানুষ নয়?
মন্দির তো দূরের কথা, সম্প্রতি গুজরাট, উত্তর প্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু গ্রামে দলিত ও হরিজনদের কুঁয়ো থেকে জল নিতে বাধা দেওয়া হয় গ্রামের মোড়লদের নির্দেশে৷ এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিলে, পুলিশ পাহারা বসাতে হয়৷ শেষে দলিতরা নিজেদের জন্য আলাদা কুঁয়ো খুঁড়ে নেন৷ প্রচণ্ড খরা সত্ত্বেও গুজরাটের মেহসানা জেলার ডজন খানেক মহিলা কাকুতি-মিনতি করলেও তঁদের কুঁয়ো থেকে জল নিতে দেওয়া হয়নি৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
লিঙ্গ বৈষম্য নিরোধক আইন
দেব-দেবীর মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার না থাকায়, তার বিরুদ্ধে নারীবাদী সংগঠনগুলি সোচ্চার সর্বদাই৷ কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের মন এতে টলেনি৷ ধর্মগুরুদের মতে, প্রাচীনকাল থেকেই মাসিকের সময় মেয়েদের ‘অশুচি’ বলে গণ্য করা হয়৷ তাই তাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না৷ এ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হলে মুম্বই হাইকোর্ট মন্দির প্রবেশাধিকার আইন ১৯৪৭ অনুসারে রায় দেয় যে, মন্দিরে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না৷
ছবি: Reuters/Anindito Mukherjee
মন্দিরে প্রবেশাধিকার নিয়ে আবারো আপিল
তৃপ্তি দেশাইয়ের নেতৃত্বেই একদল মহিলা মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে একটি শনি মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেন৷ মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে, তাঁরা সেখানেই ধর্ণা দেন৷ মুম্বইয়ের রাস্তায় মন্দিরে মেয়েদের অবাধ প্রবেশাধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়৷ এরপর কিছু কিছু মন্দিরে নারীরা প্রবেশাধিকার পেলেও, কেরালার সবরিমালা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
মুসলিম শরিয়ত বিধি ১৯৩৭
‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ নিয়ে সরকার দোটানায়৷ সংবিধানে নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু মুসলমানদের জন্য সামাজিক বা পারিবারিক বিবাদে কোরান-ভিত্তিক শরিয়ত আইনই শেষ কথা৷ তবে মুসলিম নারীরা বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরুষদের এক তরফা তিন তালাকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে৷ আওয়াজ তুলেছে বহুবিবাহ, তালাক ও খোরপোষের দাবিতে৷ একদিকে সংবিধান, অন্যদিকে মুসলিম পুরুষ সমাজ৷ বিযয়টি তাই আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাহ বানুর পর সায়রা বানু
ভারতের দেরাদনের ৩৫ বছরের সায়রা বানু সম্ভবত প্রথম মুসলিম মহিলা, যিনি সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাক প্রথা রদ করার আর্জি জানিয়েছেন৷ সায়রা বানু উত্তরাখণ্ডে বাপের বাড়িতে গেলে তাঁর স্বামী রিজওয়ান আহমেদ এলাহাবাদ থেকে তালাকনামা পাঠিয়ে ১৫ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি টানতে চান৷ বিয়ের পরে বহবার গর্ভপাতে আজ অসুস্থ সায়রা৷ তারপরও এই অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মরিয়া সায়রা বানু৷
ছবি: Reuters
14 ছবি1 | 14
এলাকার রাস্তাঘাটের হাল ফিরে যাচ্ছিল রাতারাতি৷ স্থানীয় ইমারত ব্যবসায়ীদেরও কপাল খুলে গিয়েছিল, টাটা কারখানায় নিয়মিত নির্মাণসামগ্রী জোগান দেওয়ার বরাত পেয়ে৷ তা হলে কি বামফ্রন্ট সরকার যে স্লোগান চালু করেছিল— কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ, সেটাই ঠিক? গোপালের বক্তব্য এক্ষেত্রে আবেগবর্জিত এবং বাস্তববাদী৷ যে, কৃষিজ পণ্যের দেশীয় বাজার ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ছোট চাষীদের জন্যে কৃষিতে ভবিষ্যৎ প্রায় নেই, কারণ, বড় বড় সংস্থা কৃষিতে হাত দিয়েছে বেশ কিছু বছর হলো৷ তারা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তি চাষের মাধ্যমে নিজেদের কৃষিপণ্যের উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছে৷ ফলে একজন স্বল্পপুঁজির ছোট কৃষক তাঁর সামান্য কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে, বা গুণমানে এঁটে উঠতে পারছেন না৷ মার খাচ্ছেন৷ ফলে বহু কৃষক পরিবারের ছেলেরাই এখন চাষবাস ছেড়ে বাঁধা চাকরির নিশ্চয়তার দিকে পা বাড়িয়েছেন৷ সেখানে কৃষিজমি রক্ষার এই আবেগসর্বস্ব এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলন কৃষিজীবী মানুষের আদতে কতটা উপকার করবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
সেই নিরিখে সিঙ্গুর ভবিষ্যতের কাছে ঠিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, না ভুল, তার উত্তরও সময়ই দেবে৷