1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

সিজারিয়ান পদ্ধতি: আতঙ্ক না আশীর্বাদ?

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বর্তমানে জার্মানিতে যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন কিংবা অল্প কিছুদিনের মধ্যে মা হতে যাচ্ছেন, তাঁদের আলোচনা শুনলে আমার খানিকটা খটকা লাগে৷ অনেকেই বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনবেন৷

ছবি: picture-alliance/dpa/Mühlenkreiskliniken

যাঁদের কথা বলছি, তাঁদের সবারই যে সন্তান জন্মের সময় সিজারিয়ান করানোর প্রয়োজন হয়, তা কিন্তু নয়৷ সাধারণত এসব মায়ের বয়স থাকে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি৷ অনেক সময়েই এঁরা শিক্ষিত কর্মজীবী নারী৷ তাছাড়া আর্থিক স্বচ্ছলতার ব্যাপারটা তো রয়েছেই৷ আসলে জার্মানরা আগে থেকে প্ল্যান করে চলতেই পছন্দ করে, বিশেষ করে কর্মজীবী নারী ও পুরুষরা৷ সেকারণেই বোধহয় তাঁরা সন্তান জন্মের ব্যাপারেও এর বাইরে যেতে চান না৷ এদিকে প্রসব যন্ত্রণার বিষয়টাও রয়েছে, যা থেকে মুক্তি পেতেও অনেক নারী সিজারিয়ানের দিকে ঝুঁকে থাকেন৷ তাছাড়া ‘সিজারিয়ান'-এর মধ্যে খানিকটা যে আধুনিকতা আর বিত্তের সম্পর্ক রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

তবে যেসব কারণে সিজারিয়ান পদ্ধতি ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, আগে থেকে পানি ভেঙে যাওয়া কিংবা মাতৃগর্ভে শিশুর অবস্থান অস্বাভাবিক হওয়া৷ শিশুর নাভির কর্ড বেশি ‘টাইট' থাকলে এবং অন্য কিছু জটিলতা এড়াতেও সিজারিয়ানের প্রয়োজন পড়ে৷ তাছাড়া শিশুর ওজন ৪ দশমিক ৫ কিলোগ্রামের বেশি হলেও নাকি ‘নর্মাল ডেলিভারি' হতে অসুবিধা হয়ে থাকে৷

জার্মানিতে নবজাতকদের মধ্যে শতকরা ৩২ ভাগ শিশুই জন্ম নেয় ‘সিজারিয়ান'-এর মাধ্যমে, যা কিনা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি৷

যেসব মায়ের ক্ষেত্রে অনাগত শিশু স্বাভাবিক পথে বের হতে পারে না, সেসব মায়ের ক্ষেত্রে শিশুকে সুস্থ অবস্থায় বের করতে বিকল্প পথ বা সিজারিয়ানের আশ্রয় নিতে হয়৷  তাদের জন্য এই ‘সিজারিয়ান চিকিৎসা পদ্ধতি' নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ স্বরূপ৷

তবে কথা সেটা নয়৷ আমি বলছিলাম যাঁরা কিছুটা সখ বা ইচ্ছে করে এই পথ বেছে নেন, তাঁদের কথা৷

কারণ, সিজারিয়ান অপারেশনের নানা নীতিবাচক দিকও রয়েছে, যেসব নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না৷ তবে সিজারিয়ান অপারেশনের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে সুইডেন, নরওয়ে এবং জার্মানির সাম্প্রতিক  কয়েকটি গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে প্রায় একই রকম তথ্য৷ যদিও সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হওয়ার ইতিবাচক দিকগুলোর কথা প্রায়ই শুনে থাকি৷ নেতিবাচক বিষয় নিয়ে তেমন শোনা যায় না৷ তাই আমার মনে হলো এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শেয়ার করা বেশ জরুরি৷

গবেষণাগুলো থেকে জানলাম, সিজারিয়ান বেবির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুর মতো ‘অ্যাক্টিভ' থাকে না৷ তাছাড়া অপারেশনের সময় নাকি নবজাতকের জিনে কমপক্ষে ৩৫০টি ইমিউন জিনের পরিবর্তন হয়৷ এর ফলে শিশুর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে৷ অর্থাৎ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বা শিশু দুর্বল হয়৷

অন্যদিকে, স্বাভাবিক প্রসব ব্যথা বা যন্ত্রণার সময় মায়ের স্ট্রেস হরমোন তাঁর গর্ভে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে৷ শুধু তাই নয়, স্বাভাবিক জন্মের পরিবর্তে যেসব শিশু সিজারিয়ানের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখে, তাদের ডায়বেটিস, ক্যানসার, অ্যাজমা ও বিভিন্ন অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকিও বেশি৷

জার্মানিতে একজন নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তাকে মায়ের বুকে শুইয়ে দেওয়া হয়, যাতে মা ও শিশুর মধ্যে একটা ‘বন্ডিং' বা ‘বন্ধন' তৈরি হয়৷ আর সিজারিয়ানের সময় মায়ের ‘জ্ঞান' না থাকায়, তা সম্ভব হয় না৷ যা পরবর্তীতে শিশু ও মায়ের নিবিড় বন্ধন তৈরিতে প্রভাব ফেলে, এমনই মত বিশেষজ্ঞদের৷ 

এছাড়া পেট কেটে বেবি বের করার সময় বার্থ ক্যানেল সরু থাকায় শিশুর ফুসফুসে চাপ পড়ে৷ যে কারণে শরীরে নানা সংক্রমণও হতে পারে, এমনকি ক্ষত শুকাতে দেরিও হয়৷ অনেক সিজারিয়ান বেবির জন্মের পরপরই ফুসফুসে স্বাসকষ্ট ও হৃদপিণ্ডের সমস্যা হয়ে থাকে৷ আর মায়ের পেট কেটে সন্তানের জন্ম দেওয়ায় যে ক্ষত তৈরি হয়, সে ক্ষতের ব্যথাও দীর্ঘদিন থাকে৷ এছাড়া অপারেশনের সময় মায়ের রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা পরবর্তীতে ‘থ্রমবোসিস'-এর আকার নিতে পারে৷

স্কটিশ বিজ্ঞানীদের করা সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্কুলের পারফরম্যান্স স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের চেয়ে খারাপ হয়৷ এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, অপারেশন করে বাচ্চা বের করা হয় মায়ের প্রসব ব্যথা হওয়ার আগে, অর্থাৎ বাচ্চার মস্তিষ্ক পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই৷

নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলে

ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়ই হোক, জার্মানিতেও সিজারিয়ান অপারেশনের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ তবে এই অপারেশন কিন্তু কিছু চিহ্ন রেখে যায়৷ আর তা শুধু মায়ের পেটে নয়, মা ও শিশুর অনুভূতিতেও৷ অনেক ক্ষেত্রে তা থেকে বেরিয়ে আসতে ‘প্রফেশনাল' সাহায্যের প্রয়োজন হয়৷ এই তথ্য জানান, জার্মানির  হানোফার শহরের সমাজ ও পরিবার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কারিন হেল্কে ক্যুগার ও প্ফল হর্স্টার৷ এই প্রতিষ্ঠানটি সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্ম হওয়ার পর মা ও শিশুর মানসিক সমস্যায় সাহায্য করে থাকে৷

সম্প্রতি জার্মানির ব্যার্টেলসমান ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, জার্মানির বিভিন্ন এলাকায় নানা কারণে সিজারিয়ান অপারেশনের সংখ্যা বাড়ছে৷ তবে তার অনেকটাই নির্ভর করে সেখানকার হাসপাতালগুলোর ওপর৷ অর্থাৎ যতগুলো সিজারিয়ান করা হয়, ডাক্তারি দিক থেকে তার সবগুলোর প্রয়োজন আসলে থাকে না৷

তবে লেবার পেইন অর্থাৎ প্রসবকালীন যন্ত্রণা ব কষ্ট থেকে বাঁচতে বা সখ অথবা ইচ্ছে করে যাঁরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের যদি অপারেশনের আগেই মা এবং সন্তানের পরবর্তী ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানানো হয়, তাহলে সিজারিয়ান অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে৷ 

যাঁরা ইচ্ছে করে বা সখের বশে বা প্রসব ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সিজারিয়ানকে বেছে নেন, তাঁদের অনেকেই নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে স্বাভবিকভাবে জন্ম দিতে পারেননি বলে পরবর্তীতে মানসিক কষ্টে ভোগার কথা স্বীকার করেন৷

আমার কছে মা ও শিশুর মঙ্গলের জন্য যদি সিজারিয়ান করতেই হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা ভিন্ন কথা৷ তবে কোনো মা যদি তাঁর প্রসব ব্যথা বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে কিংবা আধুনিকতা বা তাঁদের বিত্তের পরিচয় দিতে নিজের ও শিশুর স্বাস্থ্যের এতবড় ঝুঁকি নেন, তাহলে কি তা সমর্থন করা যায়? ‘মা' হতে চাইবো, কিন্তু মা হওয়ার ব্যথা সইতে চাইবো না, তা কী করে হয়?

এ প্রসঙ্গে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ