‘মা' ডাকটির জন্য একজন নারীকে অসহ্য প্রসবকালীন যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়৷ আগে ডেলিভারি বলতে নর্মাল ডেলিভারি বোঝানো হলেও এখন তার অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে সিজারিয়ান সেকশন৷ প্রশ্ন হলো – সিজারিয়ান আসলে কতটা জরুরি?
বিজ্ঞাপন
ইতিহাস বলে সিজারিয়ান অপারেশন প্রসূতি বিদ্যার এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার৷ ল্যাটিন শব্দ থেকে এর উত্পত্তি৷ অনেকে বলে থাকেন, সম্রাট জুলিয়াস সিজার এভাবে জন্মেছিলেন৷ রোমান রাজ্যে কোনো গর্ভবতী মারা গেলে তার পেট কেটে মৃত বাচ্চা বের করা হতো৷ প্রায় ৪০০ বছর আগে সর্বপ্রথম জীবিত একজন মায়ের শরীরে এ ধরনের অপারেশন করা হয়৷
বাংলাদেশে সিজারিয়ান
২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে আমাদের দেশে সিজারিয়ান অপারেশনের হার প্রায় ২৩ শতাংশ এবং এখন ২০১৭ সালে হয়ত ৩০ শতাংশের কাছাকাছি৷ এর বিশাল অংশ জুড়ে আছে শহরের সিজারিয়ান সেকশন৷ শহরের অনেক ক্লিনিক বা হাসপাতালে দেখা যায়, ডেলিভারির প্রায় ৮০ শতাংশই হয় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে৷
তবে ডক্টররা বলেন অন্য কথা৷ তাঁদের মতে, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর যে হার, সেই হারের সাথে এবং ডেমোগ্রাফিক হিসেবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সিজারিয়ান অপারেশনের হার থাকা জরুরি৷
যে কোনো একজন সাধারন মানুষের মনে একটি প্রশ্ন জাগে, সেটি হলো, এই পদ্ধতিতে ডেলিভারি কতটা যৌক্তিক? আপনার বাচ্চাকে পৃথিবীর মুখ আপনি দেখাতে পারেন তিনটি উপায়ে, যেমন, নর্মাল ডেলিভারি, অ্যাসিসটেড নর্মাল ডেলিভারি বা সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে৷
সন্তান জন্ম দেয়ার সাত উপায়
সন্তানের মা হওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছু অনেকেই খুঁজে পাবেন না৷ এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি৷ তবে সেই সন্তান জন্ম দেয়ার বা মা হওয়ার রয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়৷ চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: Imago/Westend61
ভেজাইনাল বা যোনি ডেলিভারি
প্রাকৃতির নিয়মে সবচেয়ে আদিম উপায় হচ্ছে ‘ভেজাইনাল ডেলিভারি’৷ এই উপায়ে সন্তান ‘বার্থ ক্যানেলের’ মাধ্যমে, মানে যোনিনালী দিয়ে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে৷ অবশ্য ঠিক কখন প্রসব হবে, তা আগেভাবে সঠিকভাবে জানা যায় না৷ অধিকাংশ নারী এই প্রক্রিয়াতেই গর্ভধারণের ৩৮-৪১ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেন৷ এভাবে জন্ম নেয়া শিশুর রোগবালাই সংক্রমণের মাত্রা কম৷ তবে সন্তান প্রসবের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Yongrit
সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন
বাস্তবতা হচ্ছে, সব শিশুর জন্ম ভেজাইনাল বার্থের মাধ্যমে হয় না৷ বিশেষ করে জন্মদানের সময় জটিলতা সৃষ্টি হলে ‘সি-সেকশন’, অর্থাৎ নারীর তলপেট এবং জরায়ুর চামড়া কেটে বাচ্চা বের করে আনতে হয়৷ কেউ কেউ প্রসববেদনা এড়াতে এবং যোনির প্রসারতা ঠেকাতেও সিজারিয়ান অপশন বেছে নেন৷ কারো কারো বিশ্বাস যে, যোনিপথে সন্তান জন্ম দিলে পরবর্তীতে যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/D. Karmann
সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ
অতীতে মনে করা হতো, একবার সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে সেই নারী পরবর্তীতে আর প্রাকৃতিক উপায়ে, অর্থাৎ যোনিনালীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না৷ তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে৷ সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ অবশ্যই সম্ভব৷ আর সিজারিয়ানে বাচ্চা জন্মদানের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে নারীর নানারকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির নজিরও রয়েছে৷
ছবি: Imago/Westend61
ভেক্যুয়াম এক্সট্রাকশন
ভেজাইনাল ডেলিভারির সময় কোনো কারণে নবজাতক বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে ভেক্যুয়াম পাম্পের মাধ্যমে তাকে বের করে আনা হয়৷ এই পদ্ধিততে একটি নরম, অনমনীয় কাপ শিশুর মাথায় আটকে দেয়া হয়৷ এরপর ভেক্যুয়ামের মাধ্যমে সেটি টেনে বের করে আনা হয়৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
ফোরক্যাপস ডেলিভারি
এটাও ভেজাইনাল বা নর্মাল ডেলিভারির সময় জটিলতা তৈরি হলে ব্যবহার করা হয়৷ এই পন্থায় বড় দু’টো চামচের মতো দেখতে ফোরক্যাপস শিশুর মাথা আটকে বার্থ ক্যানেল থেকে তাকে সহজে বের করে আনা হয়৷ সাধারণত গর্ভধারিণী প্রসবের সময় পর্যাপ্ত চাপ দিতে না পারলে এই পন্থা কাজে লাগানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/J. Meyer
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)
অনেক নারীর জন্য গর্ভধারণই জটিল৷ এক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার একটি আধুনিক পন্থা হচ্ছে আইভিএফ৷ এ পন্থায় চিকিৎসক নারীর ডিম্বাণু সূচের মাধ্যমে বের করে আনেন এবং ল্যাবরেটরিতে তা শুক্রাণুর সঙ্গে মেলান৷ পরে ভ্রুণ সৃষ্টির পর সেটা ক্যাথিটার ব্যবহার করে নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরপর ভ্রুণটি নিজে থেকেই মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপিত হয়৷ দাতার ডিম্বাণু ও শুত্রাণুর মাধ্যমেও এভাবে মা হওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
সারোগেসি
যেসব নারী একেবারেই সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম বা সন্তান জন্ম দেয়া যাঁদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার, তাঁদের ক্ষেত্রে মা হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে সারোগেসি বা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নেয়া৷ এক্ষেত্রে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীর জরায়ুতে ভ্রুণ বা শুক্রাণু প্রবেশ করানো হয়৷ দ্রষ্টব্য: জনসন ম্যামোরিয়াল হেল্থ ব্লগ এবং উইম্যান’স হেল্থ ম্যাগাজিন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্যালারিটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Colourbox
7 ছবি1 | 7
কখন সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন
প্রকৃতির নিয়মের চেয়ে মানুষের তৈরি নিয়ম কখনোই ভালো হতে পারে না৷ তবে যখন নর্মাল ডেলিভারি সম্ভব নয় বা নর্মাল ডেলিভারি মা বা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশরের প্রয়োজন হতে পারে৷ এক্ষেত্রে যে কারণগুলো উঠে আসে তার মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট চেষ্টার পরও যদি স্বাভাবিক প্রসব না হয়, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার শ্বাসকষ্ট বা ফেটাল ডিসট্রেস, বাচ্চার ওজন এবং মায়ের নর্মাল ডেলিভারি পথের অসামঞ্জস্যতা, গর্ভফুল জরায়ুর মুখকে ঢেকে রাখা, মায়ের খিচুনি ইত্যাদি৷ পূর্বে ২ বা তার বেশি সিজারিয়ান অপারেশনের ইতিহাস, জরায়ুর বড় কোনো টিউমার, মায়ের হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে যদি নর্মাল ডেলিভারি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রেও সিজারিয়ান করাতে হয়৷
সিজারিয়ান অপারেশনের প্রস্তুতি:
আপনার সিজারিয়ান অপারেশন লাগবে কিনা তার অনেকটা ধারনা গর্ভাবস্থায় চেক আপের মাধ্যমে বোঝা যায়৷ এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস বি বা প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা ইত্যাদি করিয়ে নিতে হবে৷ অনেক সময় অপারেশনের কারণ অনুযায়ী রক্ত জোগার রাখতে হতে পারে৷ স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উচিত প্রসূতিকে মানসিক শক্তি যোগান দেওয়া৷ প্রসূতিকেও সাহস রাখতে হবে৷ চিকিত্সকের উপরে বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে হবে৷ প্রয়োজনীয় টাকা হাতে রাখুন এবং রক্তের জন্য ডোনারকে বলে রাখুন৷ কিভাবে হাসপাতালে যাবেন সেজন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ তাছাড়া কোন হাসপাতাল থেকে সেবা নিবেন তা আগে থেকে জেনে রাখাও জরুরি৷
গর্ভকালীন অবস্থায় কিছু ভুল ধারণা
বাংলাদেশ ও ভারতে গর্ভাবস্থায় নারীদের ডাক্তারের চেয়েও বেশি শুনতে হয় দাদি-নানি, মা-শ্বাশুড়ি ও আত্মীয় স্বজনের কথা৷ নানা ধরনের কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাঁদের৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
দু’জনের জন্য খেতে হবে
সবচেয়ে বেশি যে ধারণাটা প্রচলিত তা হলো – তুমি এখন আর একা নও৷ তাই দু’জনের সমান খেতে হবে৷ অথচ বাস্তবতা হলো, শিশু তো একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ না৷ মা যা খায় সেই নির্যাস সে গ্রহণ করে৷ হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় ক্ষুধা বেড়ে যায়, সেটা হরমোনের কারণে৷ একজন গর্ভবতী নারীর দিনে ৩০০ ক্যালোরি খাবার খাওয়া যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/vgstudio
দুধ, দই খেলে বাচ্চা হবে ফর্সা
বাংলাদেশ ও ভারতে মানুষ ভীষণ বর্ণবাদী৷ বাচ্চা কালো না ফর্সা হবে এটা তাদের ভীষণ চিন্তার বিষয়৷ তাই, দুধ, দইয়ের মতো সাদা খাবার বাচ্চার রং ফর্সা করবে – এমনটাই ধারণা করা হয়৷ অথচ বাচ্চা রঙ কেমন হবে তা নির্ভর করে বাবা-মায়ের জিনের উপর৷
ছবি: Colourbox/E. Atamanenko
ঘি খেলে প্রসব সহজ হয়
বিশেষজ্ঞদের মত, আপনি যা খাবেন তা পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাবে, প্রজনন তন্ত্রে প্রবেশ করবে না৷ তাই ঘি যতই খান তা ‘লুব্রিকেন্ট’ বা পিচ্ছিল পদার্থের কাজ করবে না৷
ছবি: Imago/Imagebroker
যৌন সম্পর্ক করা উচিত নয়
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, গর্ভাবস্থায় একজন নারী যৌন মিলনের ততটাই আনন্দ নিতে পারেন, যতটা গর্ভধারণের আগে নিতে পারতেন৷ যৌন মিলনের ফলে শিশুর শরীরে কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না৷ বরং প্রসব সহজ করার ক্ষেত্রে যোনির একধরনের ব্যয়াম হয় এর মাধ্যমে৷
ছবি: Colourbox/Syda Productions
সুন্দর শিশুর ছবি দেখা
শিশুর বাবা-মায়ের জিনই ঠিক করবে সে কার মতো দেখতে হবে৷ তাই যতই সুন্দর সুন্দর বাচ্চার ছবি টাঙিয়ে রাখুন কোনো লাভ নেই৷
ছবি: Colourbox
সিঁড়ি ভেঙো না
গর্ভধারণ কোনো অসুখ নয় যে সারাদিন আপনাকে শুয়ে বসে কাটাতে হবে৷ তাই আগে যেমন জীবন কাটাতেন তার ছন্দপতন যেন না হয়৷ আপনি যদি নিয়মিত ব্যয়াম করে থাকেন, এক্ষেত্রে সেটা শরীরের জন্য আরও ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
পেটের আকৃতি দেখে বলা ছেলে না মেয়ে
এটারও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷ হ্যাঁ আপনার যদি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার এবং সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকে, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা!
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
মায়ের চেহারা দেখে বলা
বাংলায় একটা কথা আছে, ছেলের মা সুন্দরী, মেয়ের মা বান্দরী৷ অর্থাৎ পেটে ছেলে থাকলে মায়ের চেহারা খুব সুন্দর হয়ে যায়৷ আর যদি মেয়ে থাকে তাহলে নাকি খুব খারাপ হয় চেহারা৷ এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই৷ কেননা এটা হরমোনের ওপর নির্ভর করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
স্বাস্থ্যবান শিশুর জন্য প্রচুর খাওয়া
শিশু যাতে স্বাস্থ্যবান হয়, একথা ভেবে প্রচুর ঘি আর চিনি খাচ্ছেন? বাচ্চা হয়ত মোটা সোটা হবে, কিন্তু সেই সাথে ডায়বেটিসের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে৷
ছবি: fotolia/diegoa8024
9 ছবি1 | 9
অপারেশনের সময় প্রসূতির ভয়ের কিছু নেই৷ তাঁর কোমরের নিচের অংশ অবশ করে সাধারণত এই অপারেশন করা হবে৷ কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে৷ সাধারনত অপারেশনে ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগে৷ অপারেশনের টেবিলেই আমরা বাচ্চাকে মায়ের বুকের শালদুধ দেবার এবং মায়ের কাছাকাছি বাচ্চাকে রাখার চেষ্টা করি৷ অপারেশনের পরেও মায়ের যত্ন অত্যন্ত জরুরি৷ ব্যান্ডেজ খুলে দেবার পরে মা-কে গোসল করতে হবে৷
সিজারিয়ানের পরে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ
তিন মাস পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করা যাবে৷ দেড় মাস পর থেকে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা শুরু করা যাবে৷ ২-৩ বছর পরে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে৷ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ যাঁরা বাচ্চাকে বুকের দুধ দিচ্ছেন, তাঁদের খাবারে বাড়তি আমিষ, আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হবে৷ তিন মাস পর থেকে ব্যায়াম শুরু করা যাবে৷
তবে সিজারিয়ান অপারেশনের বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য শুধুমাত্র প্রসূতিবিদদের দায়ী করলে চলবে না৷ চলমান পুরো ব্যবস্থা কঠোর নিয়ন্ত্রন এবং ব্যক্তিগত ও সামগ্রিকভাবে কাজ করতে হবে৷
গর্ভাবস্থার ডায়বেটিস? জেনে নিন কারণ ও উপায়
আপনি ‘মা’ হতে যাচ্ছেন – ডাক্তারের দেয়া এই খবরটি নারীর জন্য সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর৷ তবে গর্ভকালীন জটিলতা বা ডায়বেটিস হওয়ার কথাও শোনা যায় মাঝেমধ্যে৷ এ সব সত্ত্বেও কিভাবে সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব, জেনে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হবু ‘মা’
নারী পূর্ণতা পায় মা ডাক শুনে৷ কিন্তু সেকথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই৷ মা ডাক শোনার আগেই, অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় থাকে হবু মায়ের নানা প্রশ্ন৷ পেটের শিশুটির সব ঠিক আছে তো? কী করলে সন্তানটি সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে? আরো কত কিছু৷ গর্ভাবস্থায় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তারই একটি মায়ের ডায়বেটিস হওয়া, যা সব সময় বোঝা যায় না৷ তাই প্রয়োজন কিছু সতর্কতা বা বিশেষ চেকআপ৷
ছবি: bilderbox
‘গ্লুকোজ টেস্ট’
গর্ভবতী হওয়ার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের সময় একটি বিশেষ পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যাতে বোঝা যায় ডায়বেটিস আছে কিনা৷ ‘গ্লুকোজ টেস্ট’-এর মাধ্যমে শরীরের কতটুকু গ্লুকোজ গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে কিংবা সুগার কমানোর জন্য শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করছে কিনা – ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়৷ তবে এই গ্লুকোজ টেস্টের যে বিশেষ নিয়ম রয়েছে, ঠিক সেভাবেই করতে হবে৷ একমাত্র তাহলেই সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হরমোনের তারতম্য
গর্ভাবস্থায় নানা রকম হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়াকে ওলট-পালট করে দেয়৷ আর এ সব কারণে অনেক নারীর পাঁচ থেকে সাত মাসের সময় ডায়বেটিস দেখা দেয়৷ যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশু জন্মের পর তা আস্তে আস্তে চলে যায়৷ অতিরিক্ত মোটা মায়েদের ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্ন কথা৷
ছবি: picture alliance/empics/N. Ansell
দু’জনের খাবার?
প্রায়ই গর্ভবতী নারীদের দু’জনের খাবার খেতে বলা হয় যা মোটেই ঠিক নয়৷ অনাগত সন্তান এবং মা – এই দু’জনের খাবার একসঙ্গে খাওয়ার পরিবর্তে মাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ যথেষ্ট শাক-সবজি, ফল, আঁশযুক্ত খাবার এবং সঙ্গে কম চিনি এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়াই স্রেয়৷ সোজা ভাষায়, সুস্থ মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত৷ আসলে মায়ের খাওয়া নির্ভর করবে তিনি কতটা শারীরিক পরিশ্রম করছেন তার ওপর৷
ছবি: Fotolia/Karyna Chekaryova
হাঁটাচলা বা ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় হাঁটাচলা খুবই জরুরি৷ বিশেষজ্ঞের মতে, যে নারী গর্ভবতী হওয়ার আগে ব্যায়াম করতেন তাঁকে সেভাবেই ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে৷ তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে৷ এই যেমন, গর্ভাবস্থায় সাঁতার কাটা খুবই ভালো একটা ব্যায়াম, যা মা ও শিশুকে সুস্থ রাখে৷ গর্ভকালীন ডায়বেটিস হয়েছে, এমন রোগী জন্য যথেষ্ট ব্যায়াম এবং পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খুব জরুরি৷ এর সঙ্গে প্রয়োজনে ইনসুলিন থেরাপিও নেওয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thomas Uhlemann
গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিসের ঝুঁকি যাঁদের
আগে থেকেই কি আপনার ওজন বেশি? আপনার বাবা, মা, ভাই-বোনদেরও কি ডায়বেটিস আছে? এর আগেরবার যখন গর্ভবতী হয়েছিলেন, তখন কি আপনার ডায়বেটিস ছিল? আগে কি আপনার কোনো বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে? কিংবা আগের কোনো সন্তান জন্মের সময় কি ওজন বেশি ছিল? আপনি কি কোনো ওষুধ খেতেন বা খান, যাতে ডায়বেটিসের ঝুঁকি আছে? এর মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
ছবি: picture alliance / dpa Themendienst
পরামর্শ
অতিরিক্ত ওজনের নারী যাঁরা আগামীতে সন্তান চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ: ‘‘আগে থেকে ওজন আয়ত্বে আনার চেষ্ট করুন৷ জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস বদলান, নিজে সুস্থ থাকুন ও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিন৷’’ এ কথা জার্মানির মিউনিখ শহরের স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সেবাস্টিয়ান রাইকের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
করণীয়
১. সঠিক নির্দেশনা বুঝে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
২. গর্ভাবস্থায় চেকআপের হার বাড়াতে হবে৷
৩. মিডওয়াইফ এবং স্পিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্ট বাড়াতে হবে৷
৪. গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাউনসেলিং করে নর্মাল ডেলিভারির জন্য বোঝাতে হবে৷
৫. ডেলিভারি কোন উপায়ে হবে সে সিদ্ধান্ত যেন ধাত্রীবিদ নিজে নেন৷ ক্লিনিক মালিক বা অদক্ষ কারো সিদ্ধান্তে যেন অপারেশন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷
৬. একটি রোগীকে কখন, কোথায় রেফার করতে হবে সেটির সঠিক নির্দেশিকা থাকতে হবে৷
শেষকথা
সকল প্রসুতিবিদের প্রথম পছন্দ নর্মাল ডেলিভারি৷ সিজারিয়ান ডেলিভারি একটি বিকল্প পদ্ধতি যা আধুনিক এবং নিরাপদ৷ এই পদ্ধতিতে ডেলিভারির মাধ্যমে অনেক মা ও শিশুর জীবন রক্ষা হয়েছে৷ একজন দক্ষ প্রসুতিবিদের হাতে এই অপারেশন কখনোই ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷ তাই আপনি সচেতন হোন এবং সচেতন করুন আপনার চারপাশকে৷ একটি নিরাপদ পদ্ধতিতে দক্ষ প্রসুতিবিদের হাতে যেন একজন মায়ের সুস্থ বাচ্চা ডেলিভারি হয় আমরা সেই আশা করি৷ জয় হোক মাতৃত্বের৷
ডা. শারমিন আব্বাসি, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল