আওয়ামী লীগে গৃহদাহ
১৯ মার্চ ২০১৫ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি হিসেব-নিকেশ হতে চলেছে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে৷ নির্বাচন কমিশন এই তিনটি সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণা করে বুধবার৷ নির্বাচন হবে ২৮শে এপ্রিল৷ তবে নির্বাচনের আগেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছিল শাসক দল আওয়ামী লীগ৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি শিল্পপতি আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ঢাকার প্রয়াত মেয়র এবং আওয়ামী লীগ নেতা মাহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন৷
কিন্তু এই মনোনয়ন নিয়ে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে গৃহদাহ৷ ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিরপুরের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার৷ আর ঢাকা দক্ষিণে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পুরান ঢাকার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম৷ তারা দু'জনই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন৷ এছাড়া আগে মনোনীত দু'জন মেয়র প্রার্থী তো মাঠে আছেনই৷
ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘এই নির্বাচন যেহেতু দলীয় ভিত্তিতে হয় না, তাই দলের মনোনয়নের কথা যাঁরা বলছেন তাঁরা ঠিক বলছেন না৷ দল সমর্থন দেয়৷ আমি দলের সমর্থন পাব বলে আশা করি৷ কাউকে আগেই দল মনোনয় দেয়নি৷''
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মো. সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি আগে থেকেই নির্বাচনের মাঠে আছি৷ প্রচার-প্রচারণা এবং জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি৷ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না৷ আমার জনসমর্থনই প্রধান শক্তি৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি৷ বরং আমাকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে৷''
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে৷ অন্য কোনো প্রার্থী এলে আমার কোনো আপত্তি নেই৷ আমি প্রায় এক যুগ ধরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি৷ জনগণের পাশে আছি, পাশে থাকব৷''
উত্তরের প্রার্থী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা জনিয়েছেন, ‘‘আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হতে সর্বশেষ তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন৷''
তবে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা ঢাকায় মেয়র প্রার্থী নিযে নতুনভাবে চিন্তা শুরু করেছেন৷ জানা গেছে, আনিসুল হকের আওয়ামী রাজনীতির শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা এবং ওয়ান ইলেভেনের সময় সাঈদ খোকনের বিতর্কিত ভূমিকা আলোচনায় আসছে৷ তাই বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে যাঁরা প্রার্থী হবেন তাঁদের কাউকেই না বলবে না আওয়ামী লীগ৷ যে জিততে পারেন৷ চবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে ঢাকায় দুই মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নে আরো মনযোগী হবে আওয়ামী লীগ৷
এদিকে চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম বিএনপি নেতা৷ গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তখনকার মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করেন৷ মহিউদ্দিন চৌধুরী এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়র পদে তাঁর প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন৷ বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে বর্তমান মেয়র মনজুর আলম কী করবেন, তা নিশ্চিত নয়৷ তবে তিনি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না করেন তাহলে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দেবে৷ আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীও বেড়ে যাবে৷
মনজুর আলমের সমর্থকরা জানিয়েছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন৷ এমনও হতে পারে যে তিনি শেষ পর্যন্ত নাগরিক সমাজ বা অন্য কোনো ব্যানারে নির্বাচন করতে পারেন৷
বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ৬ই জানুয়ারি থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখনো আন্দোলন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অনড়৷ তাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ বলা বাহুল্য, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে৷
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ আরো ৩-৪ দিন পর বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করা হবে৷''
প্রসঙ্গত, আইনগতভাবে এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরাসরি দলীয় মনোনয়ন দেয়া যায় না৷ তবে বাস্তবে নির্বাচন হয় দলীয়ভাবেই৷