1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ মে ২০২৩

পাঁচ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে না থাকলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির শতাধিক নেতা৷ তাদেরকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স৷

বিএনপি
ফাইল ছবিছবি: Mortuza Rashed/DW

বরিশাল মহানগর বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু৷ তিনি এবার সিটি নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন৷ এর আগে তিনি দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে কারসাজি করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও তিনি কেন প্রার্থী হয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘‘আসলে কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না৷ আর আমাদের দল থেকে নিষেধ করা হয়নি যে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে পারব না৷ যে নিষেধাজ্ঞা, সেটা জাতীয় নির্বাচন এবং সিটির মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য৷ কারণ ওই দুইটি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়৷''

তার কথা, ‘‘তৃণমূলের নির্বাচন বর্জন করা ঠিক না৷ কারণ এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন৷ নির্বাচনে অংশ নিলে নেতা-কর্মীরা চাঙা থাকেন৷ বরিশালের ৩০টি ওয়ার্ডের সব কয়টিতেই বিএনপির বিভিন্ন পদে আছেন এবং বিএনপি করেন তারা প্রার্থী হয়েছেন৷''

হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, ‘‘আশা করি নির্বাচন ভালো হবে৷ এখন পর্যন্ত খারাপ কিছু দেখছি না৷ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমাদের বিএনপির প্রার্থীরা ভালো করবেন৷ আমরা আন্দোলনেও আছি, নির্বাচনেও আছি৷''

কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না: হাবিবুর

This browser does not support the audio element.

গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সভাপতি আজমল ভুঁইয়া গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন৷ তিনি ওই ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর৷ তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র বা মহানগর বিএনপি থেকে আমাদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়নি৷ আবার প্রার্থী হতে বলাও হয়নি৷ তাই আমি প্রার্থী হয়েছি৷ আর সাধারণ মানুষ আমাকে সমর্থন করেন৷ তারাও চান আমি প্রার্থী হই৷''

তিনি জানান, ‘‘আমরা বক্তৃতা-বিবৃতিতে শুনেছি বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না৷ কিন্তু লিখিত কোনো নির্দেশ পাইনি৷ এটা আসলে মেয়র প্রার্থীদের জন্য, আমাদের জন্য নয়৷ আর শেষ পর্যন্ত কোনো নির্দেশ আসলে তখন ভেবে দেখব৷''

আজমল ভুঁইয়া বলেন, ‘‘৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপির বিভিন্ন পদে আছেন এরকম কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ২৫ জন৷ আর বিএনপি করেন সেইভাবে ধরলে সব ওয়ার্ডেই বিএনপির প্রার্থী আছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের আমলে এর আগে কোনো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই দলের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি৷ এবারই দেয়া হলো৷ তবে তা এখনো অফিশিয়াল নয়৷ আশা করি শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবেনা৷''

বিএনপির সহযোগী সংগঠন মহানগর শ্রমিক দল গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ সরকার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে৷ তিনি এর আগেও দুইবার কাউন্সিলর ছিলেন৷ তারও একই কথা, ‘‘আমাদের অফিশিয়ালি নির্বাচনে প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়নি৷ তাই প্রার্থী হয়েছি৷ দল চিঠি দিয়ে নিষেধ করলে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করব৷ এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে৷ আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে৷ সব প্রস্তুতি নিয়েছি৷''

তার কথা, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি না গেলে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না, তা এখনই বলা যায় না৷ সময়ই বলে দেবে৷'' জানা গেছে গাজীপুরে বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৭ জনই বিএনপির৷

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরুল করিম রনি বলেন, ‘‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হলো এবারের সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না৷ মেয়র বা কাউন্সিলর যে পদেই হোক৷ সেটা দলীয় প্রতীক বা স্বতন্ত্র যেভাবেই হোক না কেন৷ তারপরও আমাদের এখানে কাউন্সিলর পদে অনেকে প্রার্থী হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে অনেকে সিটিং কাউন্সিলরও আছেন৷ তাদের যুক্তি হলো কাউন্সিলর পদে তো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না৷ তাদের ব্যাপারে কী করা হবে কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি৷ ফলে আমরা একটু অস্পষ্টতায় আছি৷''

দল থেকে প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়নি: আজমল

This browser does not support the audio element.

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মহানগর বিএনপি তো তাদের নিয়েই চলি৷ তারা থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা৷ তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হয়৷ তারা নির্বাচনে দাঁড়ালেও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে আছেন৷''

এই পরিস্থিতি দেশের পাঁচটি সিটিতেই৷ মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে আছে৷ আর মেয়র পদে তিন সিটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে৷

সিলেট সিটি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী৷ একটি ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক প্রার্থীও আছেন৷ ৪২টি ওয়ার্ডে বিএনপির কমপক্ষে শতাধিক নেতা-নেত্রী প্রার্থী হওয়ার তালিকায় আছেন বলে জানা গেছে৷

সিলেট ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী বিএনপির ওই ওয়ার্ডেরই সভাপতি আমির হোসেন বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনেক আগ্রহ তাই আমি প্রার্থী হয়েছি৷ এখানকার মানুষ উৎসব পছন্দ করেন তাই এখানে প্রার্থীও অন্য সিটির চেয়ে বেশি৷ আর নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়৷ আমি নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি৷ এখন শেষ পর্যন্ত দল যদি নিষেধ করে তাহলে কী করব? হয়তো নির্বাচন করতে পারব না৷ তবে এখন পর্যন্ত আমাদের স্পষ্ট করে কিছু অফিসিয়ালি বলা হয়নি৷''

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে৷ মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে৷ আর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন৷ ভোট ২১ জুন৷

আমির হোসেন বলেন, ‘‘তাই এখনো সময় আছে৷ আশা করি মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন৷ তিনি ২০ মে পর্যন্ত নাগরিক সমাজের মতামত নেবেন৷ তাকে নিয়েই আমাদের উৎসাহ৷''

তবে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল আছি৷ কেউ যাতে কাউন্সিলর বা মেয়র কোনো পদে প্রার্থী না হন সেটা নিয়ে দলের সবার সঙ্গে কথা বলছি৷ আশা করি কেউ প্রার্থী হবেন না৷ হলেও ছিটেফোটা দুই-একজন হতে পারেন৷''

আর আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তিনি তো বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, তিনি তো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না৷ আর তিনি তো লন্ডনে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন৷ আশা করি তিনি প্রার্থী হবেন না৷''

একটু অস্পষ্টতায় আছি: রনি

This browser does not support the audio element.

রাজশাহী সিটিতে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে বিএনপির পদধারী নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন৷ তবে সব ওয়ার্ডেই বিএনপির প্রার্থী আছে৷

খুলনা সিটিতে ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপি দলীয় তৃণমূল নেতারা ১৩টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন৷ পদে নেই, তবে বিএনপি করেন এরকম প্রার্থী আছেন অনেক৷

সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থীদের সরানো যাচ্ছে না৷ কেন্দ্র থেকেও অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে৷ তাদের ব্যাপারে সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না৷

যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘বিএনপি কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না৷ সেটা জাতীয় বা সিটি নির্বাচন যাই হোক না কেন৷ সেটা স্বতন্ত্র বা দলীয় প্রতীক ছাড়াও নয়৷''

তার কথা, ‘‘সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে৷ আর কেউ যাতে প্রার্থী না হন সে ব্যাপারেও বলা হয়েছে৷ এরপরও কেউ প্রার্থী হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

‘‘এই সরকার সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের ফাঁদ পেতেছে৷ কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনের কথা যারা বলছেন তারা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন,'' বলে জনান এই বিএনপি নেতা৷ তিনি ফাঁদে পা না দিতে সবাইকে সতর্ক করে দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ