1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিটি নির্বাচন দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ এপ্রিল ২০২৩

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি বড় দুই দলই এখন সিটি নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে৷ বিএনপি চাপে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আর আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জে বিদ্রোহীদের কারণে৷

Bangladesch Wahlen in Dhaka
ছবি: Asif Mahmud Ove

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা৷ দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের হলেও তা নিশ্চিতে সরকারেরও দায় আছে৷

আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনই ভোটের সবচেয়ে বড় আয়োজন৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা হবে এখানে৷ সরকারও প্রমাণ করতে চাইবে তাদের অধীনে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূল নির্বাচন সম্ভব৷ তবে প্রার্থী ও ভোটারদের অনাগ্রহ তাদের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে৷ 

গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৫৫ ভাগ৷ বিএনপি অংশ না স্বল্প ভোটের এই নির্বাচনেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ভোটে না গেলেও নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের বাইরে রাখা কঠিন৷ আর আওয়ামী লীগকে ভোটে জেতার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘কাউন্সিলর নির্বাচনে তো কোনো দলীয় প্রতীক নেই৷ আমার তাই মনে হয় সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অনেক প্রার্থী থাকবে৷ আর মেয়র পদেও দলীয় না হয়ে তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে৷”

তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে চ্যালেঞ্জে আছে৷ গাজীপুর ও বরিশালে তা স্পষ্ট হয়েছে৷ অন্যদিকে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ৷

এবার সিটি নির্বাচন যেনতেন হওয়ার আশঙ্কা কম: শান্তনু মজুমদার

This browser does not support the audio element.

অবস্থান হারানোর শঙ্কায় বিএনপির তৃণমূল
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি৷ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবারও একই কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনোভাবেই সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না৷ মেয়র, কাউন্সিলর কোনো পদেই বিএনপির কেউ নির্বাচন করবে না৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো পাঁচ সিটিতেই এখন পর্যন্ত বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে৷ গাজীপুরে সরকার শাহানুর রনি, বরিশালে কামরুল আহসান রূপম, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী৷ রাজশাহীতে এখনো কেউ বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলেও সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না৷

অন্যদিকে পাঁচ সিটিতেই কাউন্সিলর পদে বিএনপির অনেক প্রার্থী আছেন৷ মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক নেই৷ ফলে এখানে বিএনপি প্রার্থীরা সহজেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন৷

এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের উপর তৃণমূল থেকেও চাপ রয়েছে৷ কারণ পাঁচ সিটিতে দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও নেতা-কর্মীরা বসে নেই৷ তারা মেয়র পদে স্বতন্ত্র এবং নির্দলীয় কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন৷ তারা মনে করছেন ভোটে না দাঁড়ালে তাদের অবস্থান টিকে থাকবে না৷ সিলেটের বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী দুই বারের মেয়র৷ তিনি নিজে তো বটেই বিএনপির অনেক নেতা চাচ্ছেন না এই সিটি হাতছাড়া করতে৷ আরিফুল হক চৌধুরী এজন্য লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বলে জানা গেছে৷

বিদ্রোহীদের নিয়ে সংকটে আওয়ামী লীগ
সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য সংকটের কারণ হয়ে উঠেছেন৷ গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন৷ যদিও রোববার তার মনোয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ তবে অন্যায় আচরণ শিকার হয়েছেন এমন দাবি করে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন তিনি৷ তবে তার মা প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন৷ আওয়ামী লীগের প্রাথী আজমত উল্লা খান তাই বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীর চাপের মুখে আছেন৷

বরিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ প্রার্থী৷ কিন্তু তার পক্ষে মাঠে নামছেন না সাদিক আব্দুল্লাহ৷ তার লোকজনও আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে কাজ করছেন না৷ ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বিদ্রোহী নেতা-কর্মী আছে৷ সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার গ্রহণযোগ্যতার সংকট আছে৷ খুলনা ও রাজশাহীতে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই৷ তবে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে৷

বড় দুই দলই নানামুখী চ্যালেঞ্জে আছে: শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন

This browser does not support the audio element.

বিশ্লেষকরা যা বলছেন
শান্তনু মজুমদার মনে করেন এবারের সিটি নির্বাচন সাম্প্রতিক অন্য নির্বাচনগুলোর মতো হবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার সিটি নির্বাচন যেনতেন হওয়ার আশঙ্কা কম৷ নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করবে৷ আর সরকারের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ আছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে৷’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘বিএনপি চাইলেও স্থানীয় বা সিটি পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের খুব একটা ভোটের বাইরে রাখতে পারবে না৷ কারণ রাজনীতির মাধ্যমে তারা একটা পদে যেতে চান৷ এটা জাতীয় নির্বাচনেও হতে পারে৷

সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ আছে বলে মনে করেন তিনিও৷ বলেন," সিটি নির্বাচন নিয়ে আমার মনে হয় বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই নানামুখী চ্যালেঞ্জে আছে৷

টার্গেট ইসলামি দল
এদিকে জাতীয় নির্বাচন এবং আন্দোলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইসলামি দলগুলোকে জোটে ভেড়ানোর চেষ্টায় আছে৷ জামায়াতে ইসলামী এখনো বিএনপির সঙ্গে রয়েছে৷ অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল না হলেও তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপক৷ দুই সপ্তাহ আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কারাগারে থাকা তাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন৷

বাংলাদেশে ইসলামিক দল ১৫০টির বেশি হওে বিভিন্ন রাজনৈদিক দল ও জোটের সঙ্গে প্রায় ৭০টি দল যুক্ত আছে বলে জানা যায়৷ এরমধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪ দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছে চারটি ইসলামি দল৷ মিত্র হিসেবে আছে আরো ২৫ অনিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দল৷ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটে আছে মোট ৩২টি ইসলামিক দল৷ আর বিএনপির ২০ দলীয় জোটে আছে পাঁচটি ইসলামি দল৷ মিত্র হিসেবে আছে আরো কয়েকটি দল৷ এই জোটগুলো গড়ে ওঠে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে৷ তারপর অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন তারা আবার সক্রিয় হয়েছে৷ বড় দলগুলোও তাদের শক্তি বাড়াতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে৷ যারা সক্রিয় নয় তাদের মধ্য থেকেও কিছু দলকে সক্রিয় করে জোটকে ভারি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা গেছে৷

বড় ইসলামিক দলগুলো মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন কোনো জোটভুক্ত নয়৷ এবার তারা পাঁচ সিটিতেই মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে৷ বরিশালে প্রার্থী হয়েছেন চরমোনাই পীরের ছেলে ইসলামি আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম৷

শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কি উপায় আছে?

56:27

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ