ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি বড় দুই দলই এখন সিটি নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে৷ বিএনপি চাপে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আর আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জে বিদ্রোহীদের কারণে৷
বিজ্ঞাপন
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা৷ দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের হলেও তা নিশ্চিতে সরকারেরও দায় আছে৷
আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনই ভোটের সবচেয়ে বড় আয়োজন৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা হবে এখানে৷ সরকারও প্রমাণ করতে চাইবে তাদের অধীনে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূল নির্বাচন সম্ভব৷ তবে প্রার্থী ও ভোটারদের অনাগ্রহ তাদের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে৷
গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৫৫ ভাগ৷ বিএনপি অংশ না স্বল্প ভোটের এই নির্বাচনেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ভোটে না গেলেও নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের বাইরে রাখা কঠিন৷ আর আওয়ামী লীগকে ভোটে জেতার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘কাউন্সিলর নির্বাচনে তো কোনো দলীয় প্রতীক নেই৷ আমার তাই মনে হয় সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অনেক প্রার্থী থাকবে৷ আর মেয়র পদেও দলীয় না হয়ে তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে৷”
তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে চ্যালেঞ্জে আছে৷ গাজীপুর ও বরিশালে তা স্পষ্ট হয়েছে৷ অন্যদিকে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ৷
এবার সিটি নির্বাচন যেনতেন হওয়ার আশঙ্কা কম: শান্তনু মজুমদার
অবস্থান হারানোর শঙ্কায় বিএনপির তৃণমূল
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি৷ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবারও একই কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনোভাবেই সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না৷ মেয়র, কাউন্সিলর কোনো পদেই বিএনপির কেউ নির্বাচন করবে না৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো পাঁচ সিটিতেই এখন পর্যন্ত বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে৷ গাজীপুরে সরকার শাহানুর রনি, বরিশালে কামরুল আহসান রূপম, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী৷ রাজশাহীতে এখনো কেউ বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলেও সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না৷
অন্যদিকে পাঁচ সিটিতেই কাউন্সিলর পদে বিএনপির অনেক প্রার্থী আছেন৷ মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক নেই৷ ফলে এখানে বিএনপি প্রার্থীরা সহজেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন৷
এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের উপর তৃণমূল থেকেও চাপ রয়েছে৷ কারণ পাঁচ সিটিতে দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও নেতা-কর্মীরা বসে নেই৷ তারা মেয়র পদে স্বতন্ত্র এবং নির্দলীয় কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন৷ তারা মনে করছেন ভোটে না দাঁড়ালে তাদের অবস্থান টিকে থাকবে না৷ সিলেটের বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী দুই বারের মেয়র৷ তিনি নিজে তো বটেই বিএনপির অনেক নেতা চাচ্ছেন না এই সিটি হাতছাড়া করতে৷ আরিফুল হক চৌধুরী এজন্য লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বলে জানা গেছে৷
এক নজরে সব নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি এম ইদ্রিস৷ বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন কমিশনগুলো সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Asif Mahmud Ove
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি এম ইদ্রিস৷ ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি ৷ ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে এই কমিশন৷ সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। নির্বাচনে ২৯৩ আসন জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। জাসদ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ একটি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাঁচটি আসন পায়।
ছবি: AP
নুরুল ইসলাম কমিশন
বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সিইসি৷ ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই যখন দায়িত্ব নেন, তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালনের পর অব্যাহতি নেন ১৯৮৫ সালের ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি৷ ৷ ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় তার তত্ত্বাবধানে। বিএনপি পায় ২০৭ আসন, আবদুল মালেক উকিলের আওয়ামী লীগ ৩৯ আসন৷
ছবি: imago stock&people
তিন রাষ্ট্রপতির কমিশন
পরপর দুই সামরিক শাসকের অধীনে সিইসির দায়িত্ব পালন করেছেন নুরুল ইসলাম৷ ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমান নিহত হলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ‘সামরিক অভ্যুত্থানে’ ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। পরবর্তীতে এরশাদের সরকারে আইনমন্ত্রী ও পরে উপ রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Rahman
মসউদ কমিশন
বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মসউদ দায়িত্ব নেন ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি৷ তিনি পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করেন ১৯৯০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি৷ এরশাদের আমলে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুটো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই কমিশনের অধীনে৷ তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোট গেলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোট তা বর্জন করে। চতুর্থ জাতীয় নির্বাচন দুই জোটই বর্জন করে৷
ছবি: DW
সুলতান কমিশন
বিচারপতি সুলতান হোসেন খান ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিইসি’র দায়িত্ব নেন৷ তবে মাত্র ১০ মাস দায়িত্বে থেকে কোনো জাতীয় নির্বাচন না করেই ২৪ ডিসেম্বর সরে যেতে বাধ্য হন এরশাদের নিয়োগ পাওয়া এই সিইসি৷ গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হলে প্রধান দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্যে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ৷ এরপর তিনি ইসি পুনর্গঠন করেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রউফ কমিশন
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথম তিন সদস্যের ইসি পায় বাংলাদেশ। বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ সিইসি হিসেবে নিযু্ক্ত হন৷ ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করে তার কমিশন৷ তিনি ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন৷ রউফ কমিশন নির্বাচনি আইনে ব্যাপক সংস্কার আনে, জারি করা হয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ। ১৯৯৪ সালে মাগুরা উপ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত হন সিইসি রউফ।
ছবি: AP
সাদেক কমিশন
বিচারপতি একেএম সাদেক সিইসি পদে নিযুক্ত হন ১৯৯৫ সালের ২৭ এপ্রিল৷ ১৯৯৬ সালে এই কমিশনের অধীনেই হয় বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো ভোট বর্জন করে। বিএনপি পায় ২৭৮ আসন৷ দেড় মাস মেয়াদী সংসদের একমাত্র অধিবেশনে ত্রয়োদশ সংশোধনে সংবিধানে যুক্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা৷ এই ইসিই নির্বাচনি আচরণবিধি চালু করে৷
ছবি: AP
হেনা কমিশন
১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিরতার মধ্যে সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনা ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল সিইসি’র দায়িত্ব নেন৷ এই প্রথম কোনো আমলা এই পদে নিয়োগ পান৷ তার অধীনে ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯৯ সালে টাঙ্গাইল (সখিপুর-বাসাইল) উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির জন্য সমালোচিত হয় তার কমিশন৷ নির্বাচনের গেজেট না করেই ২০০০ সালের ৮ মে দায়িত্ব ছাড়েন আবু হেনা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সাঈদ কমিশন
রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদপূর্তির পর আওয়ামী লীগ সরকার ওই দায়িত্বে আনে একানব্বইয়ের নির্বচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে থাকা শাহাবুদ্দিন আহমেদকে। আবু হেনা সরে যাওয়ার পর সিইসি হন সাবেক আমলা এম এ সাঈদ৷ বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাঈদ কমিশনের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন হয়।
ছবি: Mustafiz Mamun
আজিজ কমিশন
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত কমিশনগুলোর একটি আজিজ কমিশন৷ বিচারপতি এমএ আজিজ ২০০৫ সালের ২২ মে সিইসি’র দায়িত্ব নেন৷ ব্যাপক রাজনৈতিক টানাপড়েনের সময় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন৷ পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ তফসিল বাতিল করেন৷ ২১ জানুয়ারি কোনো জাতীয় নির্বাচন আয়োজন না করেই পদত্যাগ করেন এম এ আজিজ৷
ছবি: DW
শামসুল হুদা কমিশন
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমএ আজিজের উত্তরসূরী হন এটিএম শামসুল হুদা৷ তার কমিশন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করে৷ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয় ওই কমিশনের সময়েই। সংলাপ করে নির্বাচনি আইন সংস্কার করা হয়। চালু হয় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম ও ইভিএম। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০, বিএনপি ৩০ ও জাতীয় পার্টি ২৭ আসন পায়।
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
রকিবুদ্দিন কমিশন
ইসি পুনর্গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর সার্চ কমিটি গঠন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ২০১২ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন সাবেক আমলা কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ৷ সংসদে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা৷ ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়৷ বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জন করা নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW
নুরুল হুদা কমিশন
এবারও সংলাপ আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবুল হামিদ৷ সিইসি করা হয় সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদাকে৷ দ্বাদশ ইসির যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নতুন কার্যালয় নির্বাচন ভবনে। তার অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ পাওয়ায় যায়৷ বর্তমান কমিশনের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ছবি: bdnews24
13 ছবি1 | 13
বিদ্রোহীদের নিয়ে সংকটে আওয়ামী লীগ
সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য সংকটের কারণ হয়ে উঠেছেন৷ গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন৷ যদিও রোববার তার মনোয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ তবে অন্যায় আচরণ শিকার হয়েছেন এমন দাবি করে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন তিনি৷ তবে তার মা প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন৷ আওয়ামী লীগের প্রাথী আজমত উল্লা খান তাই বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীর চাপের মুখে আছেন৷
বরিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ প্রার্থী৷ কিন্তু তার পক্ষে মাঠে নামছেন না সাদিক আব্দুল্লাহ৷ তার লোকজনও আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে কাজ করছেন না৷ ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বিদ্রোহী নেতা-কর্মী আছে৷ সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার গ্রহণযোগ্যতার সংকট আছে৷ খুলনা ও রাজশাহীতে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই৷ তবে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে৷
বড় দুই দলই নানামুখী চ্যালেঞ্জে আছে: শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন
বিশ্লেষকরাযাবলছেন
শান্তনু মজুমদার মনে করেন এবারের সিটি নির্বাচন সাম্প্রতিক অন্য নির্বাচনগুলোর মতো হবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার সিটি নির্বাচন যেনতেন হওয়ার আশঙ্কা কম৷ নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করবে৷ আর সরকারের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ আছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘বিএনপি চাইলেও স্থানীয় বা সিটি পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের খুব একটা ভোটের বাইরে রাখতে পারবে না৷ কারণ রাজনীতির মাধ্যমে তারা একটা পদে যেতে চান৷ এটা জাতীয় নির্বাচনেও হতে পারে৷
টার্গেটইসলামিদল
এদিকে জাতীয় নির্বাচন এবং আন্দোলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইসলামি দলগুলোকে জোটে ভেড়ানোর চেষ্টায় আছে৷ জামায়াতে ইসলামী এখনো বিএনপির সঙ্গে রয়েছে৷ অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল না হলেও তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপক৷ দুই সপ্তাহ আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কারাগারে থাকা তাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন৷
বাংলাদেশে ইসলামিক দল ১৫০টির বেশি হওে বিভিন্ন রাজনৈদিক দল ও জোটের সঙ্গে প্রায় ৭০টি দল যুক্ত আছে বলে জানা যায়৷ এরমধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪ দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছে চারটি ইসলামি দল৷ মিত্র হিসেবে আছে আরো ২৫ অনিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দল৷ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটে আছে মোট ৩২টি ইসলামিক দল৷ আর বিএনপির ২০ দলীয় জোটে আছে পাঁচটি ইসলামি দল৷ মিত্র হিসেবে আছে আরো কয়েকটি দল৷ এই জোটগুলো গড়ে ওঠে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে৷ তারপর অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন তারা আবার সক্রিয় হয়েছে৷ বড় দলগুলোও তাদের শক্তি বাড়াতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে৷ যারা সক্রিয় নয় তাদের মধ্য থেকেও কিছু দলকে সক্রিয় করে জোটকে ভারি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা গেছে৷
বড় ইসলামিক দলগুলো মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন কোনো জোটভুক্ত নয়৷ এবার তারা পাঁচ সিটিতেই মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে৷ বরিশালে প্রার্থী হয়েছেন চরমোনাই পীরের ছেলে ইসলামি আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম৷
শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কি উপায় আছে?