সিডনির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন জুলিয়ান আসাঞ্জ। অন্যদিকে গাজা দখলের হুমকি দিলেন ইসরায়েলের মন্ত্রী।
জেরুসালেমের টেম্পল মাউন্টছবি: Gazi Samad/Anadolu/picture alliance
বিজ্ঞাপন
রোববার সিডনির প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের সমর্থনে মিছিল করেন। মিছিলের সময় বন্ধ হয়ে যায় সিডনির বিখ্যাত হারবার ব্রিজ। এদিন সিডনির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জ।
অন্যদিকে, এদিনই গাজা দখল করে সেখানে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সার্বভৌম প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন-গাভির। জেরুসালেমে একটি বিতর্কিত জায়গায় রোববার এক অনুষ্ঠeনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেছেন ইটামার।
জেরুসালেমে টেম্পল মাউন্ট অবস্থিত। কিন্তু সেখানে ইসরায়েলিদের প্রার্থনা করার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। সেই নিয়ম ভেঙে এদিন সেখানে প্রার্থনার আয়োজন হয়েছিল। যোগ দিয়েছিলেন ইটামার। বস্তুত, হেবরনে ইসরায়েলিদের বসবাস নিয়ে বিতর্ক আছে। ইটামার নিজের দায়িত্বে সেখানে ইসরায়েলিদের বসবাসের ব্যবস্থা করেন। তিনি নিজেও হেবরনের কাছে একটি বিতর্কিত অঞ্চলে থাকেন। অতি দক্ষিণপন্থি এই নেতা এর আগেও গাজা দখলের হুমকি দিয়েছেন।
আল-আকসা মসজিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জেরুসালেমের পুরনো অংশে অবস্থিত আল-আকসা কমপ্লেক্স মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্র একটি স্থান৷ আর কমপ্লেক্সটি যেখানে অবস্থিত সেটি ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান৷
ছবি: Rafael Ben-Ari/Chameleons Eye/Newscom/IMAGO
মুসলমান ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র
জেরুসালেমের পুরনো অংশে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান৷ আর মসজিদটি যেখানে অবস্থিত সেটি ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান৷
ছবি: Michael Nitzschke/imageBROKER/picture alliance
কোথায় অবস্থিত?
জেরুসালেমের পুরনো অংশে অবস্থিত এক পাহাড়ে আল-আকসা কমপ্লেক্স অবস্থিত৷ সেখানেই মসজিদটি আছে৷ ইহুদিরা ঐ পাহাড়কে টেম্পল মাউন্ট বলে৷ আর মুসলমানদের কাছে এটি পরিচিত আল-হারাম আল-শরিফ নামে৷ ছবিতে সোনালি গম্বুজের স্থাপনার ডানপাশে গাছগাছালির পর যে স্থাপনা দেখা যাচ্ছে সেটি আল-আকসা মসজিদ৷ অনেকে সোনালি গম্বুজের স্থাপনাটিকে আল-আকসা মসজিদ মনে করেন৷ কিন্তু এটি আসলে কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অফ দ্য রক)৷
ছবি: David Silverman/Getty Images
মসজিদটি মুসলমানদের কাছে কেন পবিত্র
২০১৯ সালে প্রথম আলোতে এক প্রবন্ধে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী লিখেছিলেন, মুহাম্মদ (সা.) মিরাজ গমনের সময় আল-আকসা মসজিদে সব নবী-রাসুলের ইমামতি করে নামাজ আদায় করেছিলেন৷ এছাড়া ঐ এলাকা অসংখ্য নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত এবং এর আশপাশে অনেক নবী-রাসুলের সমাধি রয়েছে৷ মসজিদটি অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল৷
ছবি: Rafael Ben-Ari/Chameleons Eye/Newscom/IMAGO
ইহুদিদের কাছে পবিত্র হওয়ার কারণ
আল-আকসা কমপ্লেক্সের পাশে থাকা ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ ইহুদিদের কাছে পবিত্র একটি স্থান৷ আর যে পাহাড়ে আল-আকসা কমপ্লেক্স অবস্থিত সেটি ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান৷ ইহুদিদের বিশ্বাস, তিন হাজার বছর আগে বাইবেলের চরিত্র রাজা সলোমোন সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন৷ পরে দ্বিতীয় মন্দিরটি রোমানরা ৭০ সালে ধ্বংস করে দিয়েছিল৷
ছবি: HAZEM BADER/AFP
নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল কমপ্লেক্স এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাকি পূর্ব জেরুসালেম ও পশ্চিম তীরের সঙ্গে যুক্ত অংশের সঙ্গে জুড়ে দেয়৷ তবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি৷ বর্তমানে ‘জেরুসালেম ওয়াকফ’ সংগঠনের মাধ্যমে জর্ডান আল-আকসা কমপ্লেক্সটি পরিচালনা করছে৷ কারণ জর্ডানের শাসক হাশেমাইট পরিবার জেরুসালেমের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষক৷
ছবি: Ammar Awad/REUTERS
প্রার্থনার অনুমতি শুধু মুসলমানদের
আল-আকসা কমপ্লেক্স পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে যে নিয়ম বজায় আছে, সেটি অনুযায়ী অমুসলিমরা কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করতে পারেন, কিন্তু মসজিদ কমপ্লেক্সে প্রার্থনা করার অনুমতি একমাত্র মুসলমানদের৷ কিন্তু ইহুদি দর্শনার্থীদের মধ্যে নিয়ম না মেনে সেখানে প্রায় প্রকাশ্যে প্রার্থনা করার সংখ্যা বাড়ছে৷
ছবি: AHMAD GHARABLI/AFP
বিভিন্ন সময়ে সংঘাত
আল-আকসা কমপ্লেক্সে মুসলমানদের প্রবেশে ইসরায়েলের বাধার কারণে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ ও সংঘাত হয়েছে৷ ২০০০ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধী নেতা অ্যারিয়েল শ্যারন কয়েকজন ইসরায়েলি সাংসদকে নিয়ে টেম্পল মাউন্ট/আল-হারাম আল-শরিফ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেছিলেন৷ ফিলিস্তিনিরা এর প্রতিবাদ করলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল (ছবি)৷ পরে সেটি ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় গণবিক্ষোভে (এটি আল-আকসা ইন্তিফাদা নামেও পরিচিত) রূপ নিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ত্রাণ নিয়ে হামাসের বক্তব্য
হামাসের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েল ত্রাণের রাস্তা স্থায়ীভাবে খুলে দিলে তারা বন্দি ইসরায়েলিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবে। বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ''আমরা রেডক্রসের যে কোনো অনুরোধ মেনে নিতে রাজি আছি। ইসরায়েল স্থায়ীভাবে ত্রাণের করিডোর খুলে দিলে আমরা শত্রুপক্ষের বন্দিদের কাছে ওষুধ এবং খাবার পৌঁছে দেবো।'' হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে অ্যামেরিকা, ইসরায়েলসহ অনেক দেশ।
এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আইসিআরসি-র কাছে জানিয়েছিলেন, গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের কাছে ওষুধ এবং খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
সম্প্রতি হামাস একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি বন্দি এভিয়েটার ডেভিড একটি ভবনের নিচে সুড়ঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে গর্ত খুঁড়ছেন। তার শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, নিজের কবর নিজেই তৈরি করে রাখছেন তিনি।
এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর ইসরায়েলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়। প্রতিবাদ মিছিল হয়। তার পরেই নেতানিয়াহু রেডক্রসের সঙ্গে কথা বলেন এবং বন্দিদের কাছে যাতে ওষুধ এবং খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সে বিষয়ে চাপ তৈরি করেন। বস্তুত, নেতানিয়াহুর ওই বক্তব্যের পরেই হামাস তার বিবৃতি প্রকাশ করলো।
বিজ্ঞাপন
সিডনির মিছিল
রোববার সিডনি শহর ভরে গিয়েছিল ফিলিস্তিনের পতাকায়। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সিডনি হারবার ব্রিজ পর্যন্ত মিছিল করেন। গাজায় যাতে ঠিক মতো ত্রাণ পৌঁছায় তার দাবি জানান প্রতিবাদীরা। অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আইন মানা হচ্ছে না গাজায়। সেখানে কৃত্রিমভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। রান্না করার বাসন নিয়ে অনেকে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন, দুর্ভিক্ষের প্রতীক হিসেবে একাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এই মিছিলেই হাঁটতে দেখা যায় উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জকে।