ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাতাসের বেগে আমফান যখন বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে তখন দ্বীপ ও চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহওয়া অফিস৷
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে আমফান আরো শক্তি সঞ্চয় করে ‘সুপার সাইক্লোন’ এর রূপ নিয়েছে৷ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল৷ এটি আরো উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
সোমবার আমফানের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাওয়ায় সেটিকে সুপার সাইক্লোন ঘোষণা করা হয়৷
আমফান এই শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রথম সুপার সাইক্লোন বলে জানান ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র৷ সোমবার ফেসবুক লাইভে আমফান নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে উঠে আসার সময় আমফানের গতিবেগ কিছুটা কমবে৷ কিন্তু তারপরও সেটি সিডর ও আইলার চেয়ে বেশি বিধ্বংসী হতে পারে৷’’
আমফানের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা৷
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে৷
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
আগামী ২২ মে অমাবস্যা, যার টানে উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানির উচ্চতা বেশি থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং আশপাশের দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস৷
ভারতের আবহওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আমফান বুধবার বিকালে উপকূল অতিক্রম শুরু করলে তখন ভাটার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস কিছুটা কম থাকবে৷ তবে সন্ধ্যায় জোয়ারের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর৷
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে৷ সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে৷
ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়
ছবিঘরে ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়ের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অ্যাটলান্টিকের হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুন এবং ভারত মহাসাগরের সাইক্লোন নামে পরিচিত৷ সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: Getty Images
২০০৮: নার্গিস (মিয়ানমার)
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস৷ ২০০৮ সালের মে মাসে যেটি মিয়ানমারে আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়৷
ছবি: Hla Hla Htay/AFP/Getty Images
১৯৯১ সাল: বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেটি ২৯শে এপ্রিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হেনেছিল৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা পৌঁছে গিয়েছিল সাত মিটার উঁচুতে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছিল উপকূলের অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷
ছবি: AFP/Getty Images
১৮৭৬: দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ
১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বরিশালের বাকেরগঞ্জে৷ সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৭৫: নিনা টাইফুন, চীন
যদিও চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তবুও ১৯৭৫ সালের ৩১ শে জুলাই চীনের হেনান প্রদেশে টাইফুন নিনার ভয়াবহতা সব ঝড়কে পেছনে ফেলে দেয়৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Zc
১৮৮১ সাল: হাইফোং, ভিয়েতনাম
১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ভয়াবহ টাইফুন আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ৩ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
১৯৩৭ এবং ১৮৩৯ সাল: ভারত
১৭৩৭ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ধেয়ে এসে কলকাতায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়৷ বেশিরভাগ ইউরোপীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় তিন লাখ মানুষ৷ কিন্তু সেসময় কলকাতায় মাত্র ১০ হাজার মানুষ বসবাস করত৷ তাই এই সংখ্যাটি নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে৷ ১৮৩৯ সালের নভেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশের কোরিঙ্গা এলাকায় বিধ্বংসী ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত তিন লাখ মানুষ৷ নষ্ট হয়েছিল ২৫ হাজার জাহাজ৷
ছবি: Reuters
১৯৭০ সাল: ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ
বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে৷ ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন৷ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে এক লাখই ছিলেন জেলে৷
ছবি: Getty Images
7 ছবি1 | 7
এদিকে, সাগরে যখন ঘূর্ণিবায়ু পাক খাচ্ছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, মাইজদীকোর্ট, ফেনী, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় তখন মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে৷ সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের এ সময়ে বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় ভ্যাপসা গরমে অসহনীয় অবস্থা বিরাজ করছে সবখানে৷
‘‘তবে মধ্যরাত থেকে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশজুড়ে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে৷ যার প্রভাবে দিনের তাপমাত্রা ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে৷’’
ঢাল সুন্দরবন
২০০৭ সালে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর, তাতে তছনছ হয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, প্রাণ হারিয়েছিল দুই হাজারের বেশি মানুষ৷ এক যুগ পর সেই একই অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসা আরেক ঘূর্ণিঝড় আমফান এখন সিডরের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে৷ বিধ্বংসী সিডির ‘সুপার সাইক্লোন' ছিল না৷
বঙ্গোপসাগরের জানা ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন আমফান৷ প্রথম সুপার সাইক্লোনটি ছিল ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা সাইক্লোন৷
ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানলেও এ বিস্তৃতি থাকবে বাংলাদেশের হাতিয়া পর্যন্ত৷
সিডরের উৎপত্তি যেখানে ছিল, আমফানের উৎপত্তিও বঙ্গোপসাগরের একই এলাকায়, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে৷ গত ডিসেম্বরে আঘাত হানা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতোই এগোচ্ছে আমফান৷ গত বছরের মে মাসে আরেকটি শক্তিশালী ঝড় ফনীও একই পথে আঘাত হেনেছিল৷
সিডর আঘাত হানার সময় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল৷ বুলবুলের ক্ষেত্রেও ঢাল হয়ে ছিল সুন্দরবন৷
এক দশকের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা৷ এক নজরে দেখে নিন গত এক দশকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলি...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
ক্যার ও মাহা, ২০১৯
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ভারতের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় মাহা ও ক্যার৷ এর আঁচ এসে পড়ে ভারত-বাংলাদেশ টি টুয়েন্টি ক্রিকেট সিরিজেও৷ বিজ্ঞানীরা জানান, ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম একসাথে দুটি ঘূর্ণিঝড় একসাথে অনুভব করছে ভারত৷
(প্রতীকী ছবি)
ছবি: IANS
ফেনী, ২০১৯
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওড়িষার উপকূলে কেন্দ্রবিন্দু থাকা এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সীমিত থাকেনি ভারতে৷ বাংলাদেশেও আসে তার প্রভাব৷ ১৯৯৯ সালের পর থেকে ওড়িষার উপকূলের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ছিল এটি৷ মোট ক্ষয়ক্ষতি ছিল ৭০ কোটি টাকার সমান৷
ছবি: AFP/M.U. Zaman
তিতলি, ২০১৮
গত বছর অক্টোবর মাসে ভারতের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় তিতলি৷ নাসার তথ্য অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণকেন্দ্র ছিল কলকাতা থেকে মাত্র ৩১২ মাইল দূরে৷ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছিলেন, এই ঝড় বাংলাদেশে এসে ঢুকবে৷ কিন্তু তা না হয়ে শেষ মুহূর্তে ঝড়টি পথ বদল করে চলে যায় দক্ষিণের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
অক্ষী, ২০১৭
দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছিল বাংলাদেশ৷ ২০১৭ সালের এই ঝড় বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে জন্ম নিয়ে দক্ষিণের দিকে এগোয়৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ভারতের দ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়৷ ঝড়ে প্রাণ হারান অন্তত ২৪৫ জন এবং নিখোঁজ হন সাড়ে পাঁচশরও বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই মৎস্যজীবী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
মোরা, ২০১৭
একই বছরের আরেকটি বিদ্ধংসী ঝড় ছিল মোরা৷ শ্রীলঙ্কা, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তরপূর্ব ভারত, মিয়ানমার, ভুটান, তিব্বত ও বাংলাদেশ এই ঝড়ে আক্রান্ত হয়৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম এবং ঝড় চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম, পায়রা, মংলা ও কক্সবাজার বন্দরে বিপদসঙ্কেত জারি করা হয়৷ বন্ধ রাখা হয় বিমানবন্দরও৷
ছবি: bdnews24.com/Muhammad Mostafigur Rahman
রোয়ানু, ২০১৬
বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন, রোয়ানু দুর্বল ঘূর্ণিঝড় হওয়ার কারণে তেমন ক্ষতি হবে না৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে নতুন করে জেগে ওঠে এই ঝড়৷ মিয়ানমার উপকূলের কাছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রাথমিকভাবে আছড়ে পড়ে রোয়ানু৷ মারা যান ২৭জন৷ এরপর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সংস্পর্শে এসে শক্তিলাভ করে আরো বড় হয় ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু৷ শ্রীলঙ্কায় এই ঝড়ের কবলে প্রাণ হারান ২০১জন৷
ছবি: Imago/Zuma Press
কোমেন, ২০১৫
বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎস৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এই ঝড় আছড়ে পড়ে বাংলাদেশে৷ মিয়ানমারেরও কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: Getty Images/D. Chakraborty
হুদহুদ, ২০১৪
পূর্ব ভারত ও নেপাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত মহাসাগরের এই ঝড়ে৷ এছাড়াও, অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িষায় এসে পড়ে এর ছোঁয়া৷ প্রায় ২৪ কোটি টাকা মূল্যের ক্ষতি হয় এই ঝড়ের কারণে৷ প্রাণ হারান ১২৪ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
ফিলিন, ২০১৩
থাইল্যান্ড, ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের গায়ে আছড়ে পড়া এই ঝড় ছিল ১৯৯৯ সালের পরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় ছিল এটি৷ এর আগের ২৩ বছরে এত বড় মাপের কোনো ঝড় ভারত সামলায়নি৷ সরকারী তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২৫০ কোটি ভারতীয় রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইলা, ২০০৯
গত এক দশকে বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ছিল আইলা, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ ও ভারতে পূর্ব উপকূলের বিশাল অংশ৷ প্রায় দুই কোটি মানুষ এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ ঘরছাড়া হন অনেকে৷ শুধু কলকাতা শহরেই এই ঝড় কেড়ে নেয় ১৮টি প্রাণ, বাংলাদেশে হারিয়ে যায় প্রায় ৬০ হাজার গবাদি পশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
10 ছবি1 | 10
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার আমফানের সম্ভাব্য যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে উপকূল অতিক্রম করার সময় এ ঝড়ের কেন্দ্র বা চোখ থাকতে পারে সুন্দরবনের ওপর৷
বন অধিদপ্তরের (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, ‘‘এবারের সুপার সাইক্লোনের প্রভাব সুন্দরবনেও পড়বে৷ আমরা এর মধ্যে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ সবাইকে নিরাপদে অবস্থান নেওয়ার জন্যে সতর্ক করে দিয়েছে৷ মৎসজীবী ও বনজীবীদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্যে বলেছি৷’’
মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেলেও বনের ক্ষয়ক্ষতি ঝড় থেকে এড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
সারাদেশে নৌ চলাচল বন্ধ
আমফান বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকায় মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷
যদিও করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরুর আগে থেকেই যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷ কিন্তু পণ্যবাহী নৌযান ছুটির আওতামুক্ত ছিল৷ আমফানের কারণে সেগুলো চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷
প্রস্তুত আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় আমফান বাংলাদেশের যেসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে সেসব এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে৷
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সোমবার সচিবালয় থেকে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান৷ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৫১ লাখ ৯০ হাজার ১৪৪ জন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে৷
দেশে করোনা সংকটের এ সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের গাদাগাদিতে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় উপকূলীয় এলাকার স্কুল-কলেজ ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷
এসএনএল/কেএম(বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
আমফান মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি
মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে আমফান বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ ২০০৭ সালে আঘাত হানা সিডরের পর আমফান সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/K. Shanto
কখন আসতে পারে?
মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে আমফান বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ আবহওয়া অফিস বলছে, ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাতাসের বেগে আমফান যখন উপকূলে আঘাত হানবে তখন দ্বীপ ও চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA EOSDIS
সিডরের পর শক্তিশালী
কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানা সিডরের পর আমফান সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে৷ সিডরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এই ছবিটি ঐ বছরের ২৫ নভেম্বর তোলা৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
সতর্ক সংকেত
মঙ্গলবারই মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/K. Shanto
মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে
উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এসব কেন্দ্রে ৫১ লাখ ৯০ হাজার ১৪৪ জনকে আশ্রয় দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান৷
ছবি: bdnews24.com
আশ্রয়কেন্দ্রে মাস্ক বিতরণ
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না হয় তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে আশ্রয়গ্রহণকারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: bdnews24.com
আশ্রয়কেন্দ্রে জীবাণুনাশক স্প্রে
করোনা ভাইরাসের কারণে বরগুনা জেলার ৫০৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার দুপুর থেকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন পাঠানো শুরু হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
বেতারে বার্তা প্রচার
বরগুনার স্থানীয় কমিউনিটি রেডিও ‘লোকবেতার’ থেকে নিয়মিত আবহাওয়া বার্তা প্রচার করা হচ্ছে৷ আর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পক্ষ থেকে মাইকে সতর্কতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে৷
ছবি: bdnews24.com
মোংলায় পণ্য ওঠানামা বন্ধ
সোমবার বিকাল থেকে মোংলা বন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে৷ বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সার, ফ্লাই অ্যাশ, কয়লাবাহীসহ ১৪টি জাহাজ এখন বন্দরে অবস্থান করছে৷ ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: gemeinfrei
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমফানের কারণে জেটি থেকে ১৯টি জাহাজ সরানো হয়েছে৷ আর বর্হিনোঙ্গরে থাকা ৬১টির মধ্যে ৫১টি জাহাজ গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: Reuters
নৌ চলাচল বন্ধ
মঙ্গলবার দুপুর একটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরুর আগে থেকেই যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷ তবে পণ্যবাহী নৌযান ছুটির আওতামুক্ত ছিল৷ আমফানের কারণে সেগুলোও এবার বন্ধ করে দেয়া হলো৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সুন্দরবনের জেলেদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে
কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সু্ন্দরবনের নদী ও খালে মাছ শিকার করতে যাওয়া তিন হাজার জেলেকে ইতিমধ্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷