1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিনহার বিরুদ্ধে হুদার মামলা, তৎপর দুদকও

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ অক্টোবর ২০১৮

দেশত্যাগ ও প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়তে ‘বাধ্য হওয়ার' কারণ তুলে ধরে বই প্রকাশের পর ফের ক্ষমতাসীনদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হওয়া সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে৷

Bangladesch Surendra kumar Sinha
ছবি: bdnews24.com

বর্তমানে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বিএনপি সরকার আমলের মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এই মামলা করেছেন৷

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা আমাকে তার খাসকামরায় ডেকে মোট সোয়া তিন কোটি টাকা ঘুস চান৷ তবে আমি তাকে ওই ঘুসের টাকা দেইনি৷ কয়েকটি মামলা থেকে রেহাই এবং ব্যাংক থেকে টাকা অবমুক্ত করে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ওই টাকা দাবি করেছিলেন৷''

নাজমুল হুদা বলেন, ‘‘সিনহা ঘুস আদায়ের জন্য আমার বিরুদ্ধে খারিজ হওয়া একটি মামলা পুনরুজ্জীবিত করেন৷  আর সেই মামলাসহ আরো একটি মামলা থেকে রেহাই দিতে দুই কোটি টাকা আর ব্যাংকে আটকে যাওয়া টাকা অবমুক্ত করে দেওয়ার জন্য সেই টাকার অর্ধেক দাবি করেন৷ তাতে আসে সোয়া কোটি টাকা৷ আমি তাকে কোনো টাকা দেই নাই৷ এটা ছিল ঘুস নেয়ার প্রচেষ্টা৷''

শাহবাগ থানায় গত বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি৷ তবে তাঁর এই মামলা সম্পর্কে সোমবার জানাজানি হয়৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত ও আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় মামলাটি দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ওসি আবুল হাসান জানিয়েছেন৷

এদিকে সোমবার সকালেই দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার একটি অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন তাঁরা৷

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে গত বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তোপের মুখে পড়েন বিচারপতি সিনহা৷ এক পর্যায়ে তাঁর প্রকাশ্য বিচরণ বন্ধ হয়ে যায়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অসুস্থ বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়েছেন৷ অক্টোবরে ঢাকার মিন্টো রোডের বাসা থেকে দেশ ছাড়ার সময় সিনহা বলে যান, তিনি অসুস্থ নন, আবার ফিরে আসবেন৷

এরপর কয়েক মাস অন্তরালে থাকা সিনহা আবার আলোচনায় আসেন এই মাসেই ‘আ ব্রোকেন ড্রিম' নামে তাঁর একটি বই প্রকাশের পর৷ সেখানে দেশত্যাগ ও পদত্যাগের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন সিনহা৷ ডিজিআইএফের হুমকি পাওয়ার কথা বলেছেন তিনি৷

বইটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে তুমুল আলোচনার মধ্যে আবারও তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷

এর মধ্যে একটি টেলিভশনে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে তাঁর ভাইয়ের নামে দুই কোটির বেশি টাকা দিয়ে একটি বাড়ি কেনার খবর প্রকাশ করা হয়৷

বর্তমানে নিউ জার্সিতে অবস্থানরত বিচারপতি সিনহাকে ওই টেলিভিশনের পক্ষ থেকে বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি৷

নাজমুল হুদা

This browser does not support the audio element.

এই প্রেক্ষাপটে সকালে অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্তে নামার কথা জানায় দুদক৷

বাংলাদেশর দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

অভিযোগ তিনটি হল: তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে দুই লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি করেছেন, অবৈধভাবে অর্থপাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন৷

এই অভিযোগ তদন্তে দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷

এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘অনন্ত কুমার সিনহা কার ভাই তা আমরা জানি নাG আর তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, দেশে না বিদেশে তা-ও নিশ্চিত নই৷ তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে৷''

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে কেনো তদন্ত শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে প্রণব বলেন, ‘‘তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি৷''

তাঁর এই কথার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিনহার বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলাটি দুদকে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি৷

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা এক সময় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন; খালেদা জিয়ার সরকারে যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন তিনি৷

কয়েক বছর আগে বিএনপি ছেড়ে প্রথমে বিএনএফ এবং তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর তৃণমূল বিএনপি নামে দল গঠন করেন হুদা৷

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ) নামে একটি জোট গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে যোগ দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও হতে চান তিনি৷

সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে'র জন্য মীর জাহের হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এক মামলায় নাজমুল হুদার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল৷ জরুরি অবস্থার সময় দেওয়া ওই মামলার রায়ে হুদার স্ত্রী সিগমা হুদারও তিন বছর কারাদণ্ড হয়৷

প্রণব কুমার ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

ওই রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা ও সিগমা হুদা আপিল করলে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাই কোর্ট তাঁদের খালাস দেয়৷ কিন্তু দুদকের আপিলে আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয়৷ তখন আপিল বিভাগে ছিলেন বিচারপতি সিনহা৷ মামলার পুনঃশুনানি শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ নাজমুল হুদাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়৷

নাজমুল হুদা বলছেন, ‘বেঞ্চকে প্রভাবিত করে' তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহা তাঁর বিরুদ্ধে আদেশ দিয়েছিলেন৷

তখন কেন মামলা করেননি জানতে চাইলে নাজমুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি পত্রিকা সম্প্রতি এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে, যা আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য৷ তাই আমি এখন মামলা করেছি৷''

সিনহার অ্যাকাউন্টে ‘চার কোটি টাকার' তদন্ত

এর আগে এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা জমা দেওয়ার অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক৷

নিরঞ্জন ও শাহজাহান  নামে দুই ব্যবসায়ী ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই টাকা সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন বলে অভিযোগ৷ এদিকে ঋণ অনিয়মে ধুঁকছে কয়েক বছর আগে কার্যক্রম শুরু করা এই বেসরকারি ব্যাংকটি৷

এই ঘটনায় গত সপ্তাহে ফারমার্স ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা৷ তারা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম শামীম, নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা সুলতানা, সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক হেড অব বিজনেস ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাউদ্দিন ও ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়৷

রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা

বিচারপতি এস কে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন৷

গত শনিবার ওয়াশিংটন প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এদেশে আমার কোনো স্ট্যাটাস নেই৷ আমি একজন শরণার্থী৷ আমি এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছি, কিন্তু এখনো এর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷''

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্স, জেনেভা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আশ্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারণে তিনি সেখানে যেতে পারছেন না৷

শেখ শাহরিয়ার জামান

This browser does not support the audio element.

নিজের অবস্থা ব্যক্ত করে এস কে সিনহা বলেন, ‘‘আমি এত ভীত থাকি যে, আমি ২৪ ঘণ্টা বাসায় থাকি৷ ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে আমার বাসা সব সময় মনিটর করে এবং যারা আমার বাসায় যায়, তাদের ছবি তোলে৷''

পেশাগত কাজে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলা ট্রিবিউন-এর বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান ছিলেন ওই সংবাদ সম্মেলনে৷ তিনি টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এসকে সিনহা তাঁর প্রথম স্টেটমেন্টে বলেন, আ অ্যাম আ রিফিউজি৷ আমার এখানে কোনো স্ট্যাটাস নেই৷ এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি বলছেন আপনি রিফিউজি, তাহলে আপনি এখানে কী করতে চাচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি এখানে অ্যাসাইলাম চেয়েছি৷ তবে এখানো কোনো ডিসিশন পাইনি৷''

পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগাম কোনো তথ্য প্রকাশ করে না৷ দেওয়া হলেই তবে জানা যায়৷''

এসকে সিনহা ওই দিন নিউ জার্সিতে তাঁর ভাইয়ের বাড়ি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে কিছু বলেননি৷ তবে তিনি জানান, প্রথম দুই মাস তিনি ওই বাড়ির বেসমেন্টে ছিলেন৷ এখন পুরো বাড়িটিতেই বসবাস করছেন৷

তাঁর ভাই অনন্ত কুমার সিনহা এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন কিনা  সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি শেখ শাহরিয়ার জামান৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সমমনা লোকদের উপস্থিতি এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামের কারণেই এসকে সিনহা নিউ জার্সিতে সংবাদ সম্মেলন না করে ওয়াশিংটনে করেছেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ