সিনাগগে হামলার এক বছর: জার্মান ইহুদিরা কতটা নিরাপদ
৯ অক্টোবর ২০২০
ইহুদিদের সিনাগগে হামলার এক বছর পূর্তিতে নিহতদের স্মরণ করেছে জার্মানির হালে শহর৷ এই ঘটনার পরে ঐক্যের ডাক দেয়া হলেও ইহুদিদের মন থেকে ভয় এখনো দূর হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর৷ হালে শহরের একটি সিনাগগে ৫২ জন ইহুদি ‘ইওম কিপুর’ পালনে জড়ো হয়েছিলেন৷ পাশের শহরের ২৭ বছরের এক তরুণ সেদিন সিনাগগটিতে বন্দুক ও গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল৷
কিন্তু শক্তিশালী দরজা আর সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে হামলাকারী পুরোপুরি সফল হয়নি৷ হলোকাস্টের পরে সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় হামলার হাত থেকে সেদিন রক্ষা পান ইহুদিরা৷
তবে এই ঘটনার পর পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা৷ ‘‘বার্লিন, মিউনিখ, ফ্রাংকফুর্টের মতো আমরা আমাদের সিনাগগ ও সম্প্রদায়ের জন্য স্যাক্সনি-আনহাল্টে (হালে যে রাজ্যে অবস্থিত) পুলিশি নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলেছি বারবার৷ কিন্তু আমাদের বলা হয়েছিল সবকিছুই চমৎকার, ভালো আর স্বাভাবিক আছে,’’ ঘটনার পরদিন পাবলিক ব্রডকাস্টার এমডেআর-কে বলেছিলেন স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রধান মাক্স প্রিভোরস্কি, যিনি হামলার সময় সিনাগগটিতেই ছিলেন৷
পুলিশের এই অবহেলাকে ‘কেলেঙ্কারিজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন জার্মানির (ইহুদিদের সংগঠন) সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিউস-এর সভাপতি ইয়সেফ শুস্টার৷
বিশ্বাস ভাঙা সহজ, গড়া কঠিন
নিরাপত্তা নিয়ে যে আস্থার ঘাটতি ইহুদিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হামলার পর, তা গড়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন৷ নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে এখন হালের ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে৷
তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় নেতিবাচক চিত্রও উঠে এসেছে৷ জুনের শুরুতে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ শহরের বাইরে ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি কার্যালয়ে রাখা স্বস্তিকা (নাৎসি প্রতীক) পত্র উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয়েছিল তাকে৷ তিনি সেখানে কিছু না পাওয়ার কথা জানান৷ যদিও সিসিটিভির ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা আসলে নিজেই সেটি সরিয়ে ফেলেছিলেন৷
বার্লিনভিত্তিক ইহুদি সম্প্রদায়ের অ্যান্টি সেমিটিজম কমিশনার সিগম্যুন্ট কনিগসবের্গ বলেন, ‘‘যতদিন আন্তরিকতার অভাব থাকবে, ততদিন কিছু হবে না৷’’ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বা হালকাভাবে দেখা হয়েছে এমন অ্যান্টি সেমিটিক বা ইহুদিবিদ্বেষী অপরাধের ঘটনাগুলো তুলে ধরেন তিনি৷ যেমন, ২০১৫ সালে পশ্চিম জার্মানির ভুপারটেল সিনাগগে অগ্নিহামলার ঘটনায় আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল সেটি অ্যান্টি-সেমিটিক ছিল না৷ কেননা, অপরাধীর মধ্যে আগে থেকে অ্যান্টি-সেমিটিক কোনো লক্ষণ ছিল না৷ এই ঘটনার উদাহরণ টেনে কনিগসবের্গ বলেন, ‘‘বিশ্বাস ভাঙা সহজ, কিন্তু বিশ্বাস গড়তে দীর্ঘ সময় লাগে৷’’
শুধু তাই নয়, অনেক সময় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও ইহুদিদের জন্য সহযোগিতামূলক নয়৷ যেমন, স্যাক্সনি-আনহাল্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ইহুদিদের নিরাপত্তায় নতুন নিয়মের কারণে পুলিশ কর্মকর্তারা অন্য আহবানে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সবসময় দায়িত্ব পালন করতে পারবে না৷ এর মাধ্যমে তিনি আসলে অ্যান্টি সেমিটিজমের প্রসার ঘটালেন বলে মন্তব্য করেছেন ইয়সেফ শুস্টার৷
জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ে যত হামলা
জার্মানির হালে শহরে বুধবার ইহুদিদের একটি উপাসনালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন এক জার্মান আততায়ী৷ ছবিঘরে কয়েকটি সিনাগগে হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
কোলন, ১৯৫৯: স্বস্তিকা ও হেট স্পিচ
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ডয়চে রাইশপার্টাই’ নামের একটি চরম ডানপন্থি দলের সদস্যরা কোলনের সিনাগগে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘জার্মানদের দাবি: ইহুদিরা চলে যাও’ শব্দগুলোও লিখে দেয় তারা৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন এলাকায়ও ইহুদিবিরোধী গ্রাফিতির দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ ঐ ঘটনায় জড়িতদের ধরা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন ‘মানুষের উসকানিমূলক’ কিছু করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Joko
ল্যুবেক, ১৯৯৪: অগ্নিসংযোগ
মার্চ মাসের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল৷ চরম ডানপন্থি চার ব্যক্তি ল্যুবেকের সিনাগগে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ এই ঘটনার এক বছর পর আবারও একই সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
এসেন, ২০০০: পাথর ছোড়া
লেবানন থেকে আসা ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ২০০০ সালের অক্টোবরে এসেন শহরের পুরনো সিনাগগে পাথর ছুড়ে মেরেছিল৷ ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষে এই হামলা করা হয়৷ এই ঘটনায় একজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/B. Boensch
ড্যুসেলডর্ফ, ২০০০: অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ
ইহুদি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ১৯ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিন ও ২০ বছর বয়সি মরক্কোর এক নাগরিক আগুন ও পাথর দিয়ে ড্যুসেলডর্ফের নতুন সিনাগগে হামলা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মাইনৎস, ২০১০: মলটফ ককটেল হামলা
১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনী মাইনৎসের একটি সিনাগগ পুড়িয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে নতুন করে একটি সিনাগগ নির্মাণ করা হয়৷ তবে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সেখানে মলটফ ককটেল হামলা চালানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg/Bildarchiv Steffens
ভুপার্টাল, ২০১৪: অগ্নিসংযোগ
ফিলিস্তিনি তিন তরুণ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভুপার্টালের সিনাগগের প্রবেশ দরজায় দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরেছিল৷ তবে এই ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের পক্ষে ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালত রায় দিয়েছিলেন৷ জার্মানির ইহুদি ও বিদেশি গণমাধ্যম এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বার্লিন, ২০১৯: ছুরি নিয়ে হামলা
অক্টোবরের ৪ তারিখ শাবাতের পূর্বে বার্লিনের নতুন সিনাগগে স্থাপন করা একটি বেড়ায় ছুড়ি নিয়ে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন৷ পরে ছেড়েও দেন৷ ইহুদি নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে বিচারব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Avers
হালে, ২০১৯: গুলি
ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে ৯ অক্টোবর সিনাগগে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭০-৮০ জন মানুষ৷ অস্ত্র নিয়ে সেই সিনাগগে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৭ বছর বয়সি জার্মান আতাতয়ী৷ তবে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে রেগে গিয়ে গুলি করে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন তিনি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের কারণেই তিনি হামলা চালিয়েছেন৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
8 ছবি1 | 8
ইহুদিরা কেমন বোধ করে
হালেতে হামলার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির তেমন উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করেন না অনেক ইহুদি৷ ন্যুরেমবার্গ ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন ইলিয়া শৌকলভের মতে পরিস্থিতি মোটেই বদলায়নি৷ গত সপ্তাহে চলতি বছরের 'ইওম কিপুর' পালনের সময়ও অনেক সিনাগগে কোন পুলিশি নিরাপত্তা ছিল না বলে জানান তিনি৷
বস্তুতপক্ষে অনেক ইহুদিই জার্মানিতে এখন আর নিরাপদ বোধ করেন না৷ যেমনটা সেপ্টেম্বরে এক ভাষণে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিজেও উল্লেখ করেছেন৷ শৌকলভ বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় হল বড় শহরে চলে যাওয়া যেখানে আপনার পরিচয় হারিয়ে যাবে৷ অথবা এমন কোথাও চলে যাওয়া যেখানে বাহির থেকে আপনাকে ইহুদি মনে হবে না৷ আপনি শুধু আপনার চার দেয়ালের ভেতরে সেটি প্রকাশ করবেন৷ ‘‘আমি এখন যা দেখছি, সেটি জার্মানিতে এর আগে কখনো দেখিনি,’’ বলেন তিনি৷
জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ
জার্মানির অ্যান্টি সেমিটিজমের ভয়ঙ্কর অতীতকে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে সাম্প্রতিক ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনাগুলো৷ ২০১৫ সালে শরর্ণাথী স্রোতের পর ‘ইসলামভীতির’ সঙ্গে ইহুদিবিদ্বেষও নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ বিষয়টি উঠে এসেছে হালের সিনাগগে হামলাকারী স্টেফানের স্বীকারোক্তি থেকেও৷
তবে হালের ঘটনা অন্তত কিছু জার্মানকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি সেমিটিজম এবং উগ্র ডানপন্থা বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক গিডেওন বোতস৷
হামলার দিনই কয়েক হাজার মানুষ হালেতে প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন৷ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘হালে এবং গোটা জার্মানিতে সংহতি প্রকাশে যেসব উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা জার্মানির ইহুদি সংখ্যালঘুদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা৷’’ মানুষের শোক প্রকাশ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াকে ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি৷
বোতস বলেন, এই বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যায়েও অনেক উদ্যোগ রয়েছে৷ ফেডারেল ও রাজ্য স্তরে অ্যান্টি-সেমিটিজম কমিশনার নিয়োগ ও গবেষণা প্রকল্প নেয়া হয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে বার্লিন এগিয়ে থাকলেও অন্য রাজ্যগুলো অনেক পিছিয়ে আছে৷
অ্যান্টি সেমিটিজমের ঘটনা জানানোর জন্য একটি অনলাইন পোর্টালও খোলা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হয়েছে যে সামনে এই ধরনের ঘটনাগুলোকে আর এড়িয়ে যাওয়া হবে না, বলেন কনিগসব্যার্গ৷ বাভারিয়া রাজ্যে এই প্রকল্পের দায়িত্বরত সিডেল আরপাসি জানান, গত এক বছরে সাতটি ঘটনা নথিবদ্ধ করতে পেরেছেন তারা৷ তবে তিনি মনে করেন এটি যেসব ঘটনা ঘটে তার ক্ষুদ্র একটি অংশ৷
বেন নাইট/এফএস
নাৎসি বিচারের সাক্ষী ‘কোর্টরুম ৬০০’
হলোকস্ট ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত ‘ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়াল’৷ আদালতের যে কক্ষে ঐ বিচারকাজ হয়েছিল সেটা এখন জাদুঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
নাৎসিদের বিচার
হলোকস্টসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত ‘ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়াল’৷ ১৯৪৫ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে উচ্চপদস্থ নাৎসি কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীদের বিচার করা হয়েছিল৷ জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের ন্যুরেমব্যার্গ শহরের ‘প্যালেস অফ জাস্টিস’এর কোর্টরুম ৬০০-তে এই বিচার হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
যে কারণে ন্যুরেমব্যার্গ
নাৎসিদের বিচারের জায়গা হিসেবে ন্যুরেমব্যার্গের প্যালেস অফ জাস্টিসকে বেছে নেয়ার কারণ, স্থানটি তখন মার্কিন বাহিনীর দখলে ছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভবনটি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি৷ এছাড়া বন্দিদের রাখার জন্য পাশেই একটি কারাগার ছিল৷ আরো একটি কারণ হচ্ছে, ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ন্যুরেমব্যার্গেই নিয়মিত সমাবেশ করতো নাৎসি পার্টি৷ এবং সেখান থেকেই ইহুদিদের বিচারের আইনের ঘোষণা এসেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাৎসি শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার
ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালে বিমানবাহিনীর কমান্ডার হেয়ারমান গ্যোরিং, নাৎসি দলের উপনেতা রুডল্ফ হেস (সর্বডানে) ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম ফন রিবেনট্রপসহ নাৎসি পার্টির অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার বিচার করা হয়৷ এই তিনজনকেই তাদের অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়৷ পরে গ্যোরিং কারাগারে নিজের কক্ষে আত্মহত্যা করেন, রিবেনট্রপকে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ আর হেসকে তার বাকি জীবনটা জেলেই কাটাতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
চিকিৎসকদের বিচার
নাৎসিদের বিচার শেষ হওয়ার পর কোর্টরুম ৬০০-তে অন্য যুদ্ধাপরাধেরও বিচার হয়েছে৷ যেমন ‘ডক্টরস ট্রায়াল’ বলে বিবেচিত বিচারে ২৩ জন ব্যক্তিকে (অধিকাংশই চিকিৎসক) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দিদের উপর ভয়াবহ পরীক্ষা চালানো ও তাদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়৷ পরে ঝুলিয়ে সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago-Images/United Archives International
পুরনো কাজে ফিরে যাওয়া
নাৎসি ও যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শেষে ১৯৬০ সালের জুন মাসে কোর্টরুম ৬০০-কে বাভারিয়া রাজ্যের বিচারকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ এই কক্ষের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০০ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে সেখানে গাইডেড টুরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ অনেক পর্যটক এতে উপস্থিত থাকতেন৷ পরে ‘মেমোরিয়াম ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালস’ স্থাপনের জন্য ২০০৮ সালে ঐ টুর আয়োজন বন্ধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/D. Kalker
বিচার কার্যক্রমের সমাপ্তি
২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেষবারের মতো কোর্টরুম ৬০০-তে বিচারকাজ চলে৷ স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ঐ ঘরটি এখন মেমোরিয়াম ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালসের অংশ৷ অর্থাৎ, দর্শনার্থীরা সেটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ মেমোরিয়াম ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালস হচ্ছে একটি তথ্য ও নথিকেন্দ্র, যেখানে ঐ বিচার সংক্রান্ত কাগজপত্র সংরক্ষিত আছে৷