বুধবার ভোররাতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকা থেকে র্যাব পিনাক-৬ লঞ্চের মালিক আবু বকর সিদ্দিককে গ্রেফতার করে৷ বৃহস্পতিবার তাঁকে মুন্সিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ১৮ আগস্ট রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন৷
গত ৪ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি থেকে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়ায় আসার পথে বেলা ১১টার দিকে ডুবে যায় পিনাক-৬৷ এ ঘটনায় মোট ৪৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত না করে গত সোমবার উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া হয়৷
এ ঘটনায় মাওয়া নৌপরিবহণ পরিদর্শক (টিআই) জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বাদী হয়ে পিনাকের মালিক আবু বকর সিদ্দিকসহ ছয়জনকে আসামি করে লৌহজং থানায় মামলা দায়ের করেন৷ আবু বকর সিদ্দিক ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন৷
ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই বাড়ি ফেরেন মানুষ৷ সেজন্য অনেকেই সারারাত অপেক্ষা করেন ট্রেনের টিকেটের জন্য কিংবা লঞ্চে ওঠেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে৷ সেরকমই কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগাম টিকেট সংগ্রহের জন্য মানুষের ভিড়৷ আগের দিন রাত থেকে এসব মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন টিকেটের জন্য৷ তবে যাত্রীর তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় দিনভর অপেক্ষা শেষে অনেককেই ফিরতে হয় খালি হাতে৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ চিত্র আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভালো৷
ছবি: DW/M. Mamunজীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছে হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এতো কষ্ট করে বাড়ি ফেরা৷
ছবি: DW/M. Mamunঈদের ছুটিতে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ৷ জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও ছাদে চেপে বসেছেন এসব মানুষ৷ ছাদে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে সকল নিষেধাজ্ঞাই উপেক্ষিত৷
ছবি: DW/M. Mamunসদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ৷ অন্যান্য পথের মতো নদীপথেও তাই ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের ভিড় বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamunলঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন মানুষ৷ ঈদের সময় লঞ্চগুলোর ডেকে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার সদরঘাটে নৌকা থেকে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা৷ এভাবে উঠতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা৷ এরপরেও নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই লঞ্চে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের৷
ছবি: DW/M. Mamunলঞ্চের ডেকে জায়গা না পেয়ে খোলা ছাদে উঠে পড়েছেন হাজারো মানুষ৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক নৌযান, প্রাণ হারান অনেকেই৷ তারপরেও থেমে থাকে না অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷
ছবি: DW/M. Mamunপরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন এসব মানুষ৷ ভুলে গেছেন সরকারের নিষেধাজ্ঞা, নিজ জীবনের নিরাপত্তা৷ ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর চিত্র ছিল একই৷ এ যেন ঝুঁকির মধ্যে আনন্দ যাত্রা!
ছবি: DW/M. Mamunনৌ ও রেলপথের মতোই সড়ক পথেও যাত্রীর চাপ বেশি৷ অনেকেই তাই বাড়ি ফিরছেন বাসের ছাদে চড়ে৷ তবে এতো কষ্টের পরও কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন যাত্রীরা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ বাংলাদেশের সড়কপথে ঈদের আগে যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamunঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে ট্রাকে চড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ এসব মানুষের বেশিরভাগই দিনমজুর৷ তবে টিকেট না পাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্তকেও দেখা যায় ট্রাকে উঠতে৷ এভাবেই ট্রাকে চড়ে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রেফতার হওয়ার পর বুধবার আবু বকর সিদ্দিক এই লঞ্চ দুর্ঘটনার দায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) ও ঘাট ইজারাদারদের ওপর চাপান৷ তাঁর দাবি, লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া ছিল৷
আবু বকর সিদ্দিক মুন্সিগঞ্জের মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি৷ ব়্যাব তাঁকে গ্রেফতারের পর মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে৷
তার আগে আবু বকর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘ঘাট ইজারাদারদের অনুমতি ছাড়া লঞ্চ ছাড়া যায় না৷ তারা যাত্রী দেয়৷ ৭০-৮০ জন যাত্রী উঠলে ভাড়া পাওয়া যায় ১০-২০ জনের৷ বাকি টাকা ইজারাদার রেখে দেয়৷ মাঝখানের ঘাটে না থামলে পরের দিন সিরিয়াল মেলে না৷ বিআইডাব্লিউটিএ-র লোকজন এসব জেনেও কিছু বলে না৷''
আবু বকর সিদ্দিকের দাবি, ঘাট তদারক করেন ইয়াকুব আলী নামের এক ব্যক্তি৷ তিনি আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ এখন আওয়ামী লীগ করেন৷ ঈদের সময় যাত্রীর চাপ বেশি থাকে জানিয়ে পিনাক-৬-এর মালিক বলেন, ‘‘ঈদের সময় ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার পরও যাত্রীরা লাফিয়ে উঠে পড়েন৷''
চার বছর আগে মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১১ লাখ টাকায় লঞ্চটি কিনেছিলেন আবু বকর৷ তিনি জানান, আগের মালিক লঞ্চটির নাম পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন করেননি৷ পিনাক-৬ লঞ্চ চলাচলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার লঞ্চ স্টিল বডির৷ ফিটনেসসহ আমার লঞ্চের সব কাগজ ঠিক ছিল৷''
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, দুর্ঘটনার পর আবু বকর সিদ্দিক বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে ছিলেন৷ লঞ্চডুবির ঘটনায় করা মামলার অন্য পাঁচজন আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷ এই ঘটনায় লঞ্চের মাস্টার (চালক), সারেং, সুকানিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও মালিক ছাড়া কেউ এখনো গ্রেফতার হয়নি৷