1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিন্ডিকেটে মন্ত্রী, পিএস ও মন্ত্রী পুত্র!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ জুলাই ২০২০

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রকাশ্য পরস্পরবিরোধী বিবৃতিতে দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট৷ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের মতে, ‘‘একটি শক্ত সিন্ডিকেট আছে, যার সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের লোকজনও জড়িত৷’’

ছবি: bdnews24

এই সরকারের প্রথম মেয়াদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ডা. আ ফ ম রুহুল হক৷ তখন তিনি নিজেও যে কথিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সফল হননি তা স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে এই সিন্ডিকেটের বিস্তারিত জানিয়েছিলাম৷ তাঁকে প্রমাণ হিসেবে ডকুমেন্ট দিয়েছিলাম৷ তিনি ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন৷’’

ডা. আ ফ ম রুহুল হক মনে করেন, সেই সিন্ডিকেটগুলো এখনো সক্রিয়৷ উপরন্তু নতুন সিন্ডিকেটও যুক্ত হয়েছে৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের মে মাসে পাঠানো এক নথিতে দেখা যায়, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিঠু নামে একজন এই সিন্ডিকেটের মূল নেতৃত্বে৷ মিঠু এখন দেশের বাইরে৷ তবে তার নিয়ন্ত্রণেই এখনো সিন্ডিকেট চলে৷ ওই নথিতে সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে একজন সাবেক মন্ত্রী, একজন বর্তমান মন্ত্রী, তার পিএস ও তার ছেলের নামও রয়েছে৷ নাম রয়েছে একজন অতিরিক্ত সচিবেরও৷ বর্তমান মন্ত্রী, তার পিএস এবং মন্ত্রীর ছেলে এই সময়ে নানা অর্ডার ও কেনাকাটায় প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে নথিতে বলা হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিন্ডিকেটের বিস্তারিত জানিয়েছিলাম: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী

This browser does not support the audio element.

রিজেন্ট এবং জেকেজি
রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজি হেলথ কেয়ার নিয়ে এখন মন্ত্রণালয়এবং অধিদপ্তর পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছে৷ অধিদপ্তর বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করোনা চিকিৎসার চুক্তি করা হয়৷ তখন অন্য কোনো হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি করাতে চাইতো না৷এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে শোকজ করা হয়েছে রবিবার৷ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে৷ আরো জানতে চাওয়া হয়েছে, সরেজমিন না দেখে চুক্তি করার কারণ৷

তবে জেকেজি হেলথ কেয়ারকে বিনামূল্যে করোনা টেস্টের দায়িত্ব অধিদপ্তরই দিয়েছে৷ তাদের কথা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম হলেও প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় কাজ দেয়া হয়েছে৷ তাছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে বলেও চুক্তিতে বলা হয়েছিল৷

এ প্রসঙ্গে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক বলেন, ‘‘ডিজি মহোদয়ের বিবৃতি এবং মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শানোর নেটিশেই আসলে বোঝা যায় কাজ-কর্মে অসঙ্গতি আছে৷ তাদের যে চাপের মুখে কাজ দেয়া হয়েছে তা বোঝা যায়৷ এখন তদন্ত করলে জানা যাবে তারা কারা৷’’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটগুলো খুবই প্রভাবশালী৷ একই সিন্ডিকেট বিএনপি’র আমলেও সক্রিয় ছিল৷ সরকার বদলালেও তাদের ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন হয় না৷ রুহুল হকের দাবি, তিনি চেষ্টা করেও এই সিন্ডকেট দমনে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ তার কথা, এখানে মন্ত্রীদেরও করার কিছু থাকে না৷ তারা নানা নামে কাজ করে৷ তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের লোকজনও জড়িত৷ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর ও বাইরের প্রভাবশালীরা মিলেই সিন্ডিকেটটা করে৷  আর এ কারণেই নিয়মের বাইরে গিয়ে অবৈধ রিজেন্ট হাসপাতাল ও জিকেজি হেলথ কেয়ার চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে৷ কোনো নিয়মেই তদের সাথে চুক্তি হয় না৷ অনেক দক্ষ প্রতিষ্ঠান ও এনজিও আছে স্বাস্থ্য খাতে৷ তাদের সাথে চুক্তি করা যেতো বলে মনে করেন তিনি৷

রুহুল হক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য খাতে এই সিন্ডিকেট নিয়ে আমি যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলাম৷ আমি এর সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও বাইরের যারা সিন্ডিকেটের সদস্য, তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলাম৷ প্রধানমন্ত্রী সেগুলো দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছিলেন৷ আমি নিজে কাগজপত্র এজেন্সিকে দিয়েছিলাম৷ তারপর কী হয়েছে এখন মনে করতে পারছি না৷’’ মিঠু সিন্ডিকেট বিএনপির আমলে ছিল, এখনো আছে বলে মনে করেন তিনি৷

আমাদের কাছে সব নথি এসেছে: দুদক চেয়ারম্যান

This browser does not support the audio element.

দুদক তদন্ত শুরু করেছে
দুদক এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের  ৯০০ কোটি টাকার পিপিই এবং মাস্ক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে৷ রিজেন্ট হাসপাতাল ও জিকেজি হেলথ কেয়ারের বিষয় নিয়েও প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে৷ রিজেন্টের মালিক মো. সাহেদের সম্পদের হিসাব দেখা হচ্ছে৷ অভিযোগ রয়েছে, জেকেজি ফ্রি করোনা টেস্টের কথা বলে টাকা নিয়েছে এবং পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিয়েছে৷ তারা সরকারের টেস্টিং পিসিআর ও কিট ব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এসবে কারা কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সব নথি এসেছে৷ আমরা সংশ্লিষ্টদের ডাকা শুরু করেছি৷ প্রয়োজনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও ডাকা হবে৷’’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে ৯০০ কোটি টাকার মাস্ক ও পিপিই কিনেছে তার কোনো বৈধ অনুমতিপত্র নেই৷ বলা হচ্ছে, মৌখিক নির্দেশে কেনা হয়েছে৷ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘মৌখিক নির্দেশ বলে সরকারি ক্রয় আইনে কিছু নেই৷ এখন পরস্পরকে দোষারোপ করে কেউই রেহাই পাবেরনা৷’’

কথা বলেন মুখপাত্র
এসব ঘটনায় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সচিব ববং স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেউই আর কথা বলছেন না৷ তাদের ফোন করেও পাওয়া যায়নি৷ তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র সহকারি পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘‘বিবৃতি আর শোকজ বসদের ব্যাপার৷ এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না৷ তবে মহাপরিচালক তিন দিনের মধ্যে জবাব দেবেন৷’’

‘‘দুর্নীতি অনিয়মের তদন্তে যারা দায়ী হবেন তারা শাস্তি পবেন৷ আমাদের সবাই খারাপ না৷ আমরা জনগণের সেবায় কাজ করি৷ কিছু আছেন, যারা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকতে পারেন৷ সরল বিশ্বাসে রিজেন্ট এবং জেকেজিকে কাজ দিয়ে আমরা প্রতারিত হয়েছি,’’ বললেন আয়েশা আক্তার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ