সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রয়াত
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন তিনি। গত ১৯ অগাস্ট শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ নিয়ে তিনি এমসে ভর্তি হন। তারপর থেকে তিনি আইসিইউ-তে ছিলেন। গত সোমবার থেকে তার পরিস্থিতির অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটে নাগাদ তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে সিপিএমে একটা বিশাল শূন্যতা তৈরি হলো।
কিছুদিন আগেই চলে গেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেসময় বুদ্ধদেবকে শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতা যাওয়ার কথা থাকলেও চোখে ছানি অপারেশনের জন্য তিনি যেতে পারেননি। বুদ্ধদেবের স্মরণসভাতেও তিনি থাকতে পারেননি। কারণ, তখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি।
সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সিবিএসই-তে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে অর্থনীতির স্নাতক। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ থেকে স্নাতকোত্তর। সেখানে পড়ার সময়ই সিপিএমের প্রতি আকৃষ্ট হন। দলের সদস্য ও হোলটাইমার হন। তিনি সিপিএমের ছাত্র শাখা এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হন। তিনবার তিনি জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
হরকিষেন সিং সুরজিৎ, জ্যোতি বসুর পরবর্তী প্রজন্মের সিপিএম নেতাদের মধ্যে সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাট ছিলেন ক্ষুরধার নেতাদের মধ্যে অন্যতম। সীতারাম ১৯৯২ থেকে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০১৫ সাল থেকে তিনি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। দলের মধ্যে একাংশের বিরোধিতা অতিক্রম করে তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তার আগে ২০০৪ সালে ইউপিএ গঠনের ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল।
সীতারাম ইয়েচুরির আমলেই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম হাত মিলিয়েছিল। সেক্ষেত্রেও তাকে বিপুল বাধার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। বিশেষত দলের শক্তিশালী কেরালা লবির নেতারা চাননি, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করুক সিপিএম। কারণ, কেরালায় সিপিএমের প্রধান প্রতিপক্ষ হলো কংগ্রেস। কিন্তু সীতারাম সেই বাধাও পার করতে পেরেছিলেন।
সীতারাম ছিলেন বাস্তববাদী রাজনীতিক। তিনি অনেকবার বলেছেন, তার কাছে প্রধান কাজ হলো বিজেপি-কে আটকানো। সেজন্যই তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলার পক্ষে ছিলেন।
২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সীতারাম ইয়েচুরি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভা সাংসদ ছিলেন। তখন রাজ্যসভায় একের পর এক বিষয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও য়ুক্তিনির্ভর ভাষণ দিয়েছেন। তিনি একাধিক ভাষা জানতেন। ইংরাজি হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতের ভাষা ছাড়াও বাংলা বলতে পারতেন।
তবে সাাধারণ সম্পাদক থাকার সময়েও সিপিএমকে খুব বেশি সাফল্য এনে নিতে পারেননি সীতারাম। একসময়ে কেরালা, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। এছাড়া অনেকগুলি রাজ্যে তাদের সাংসদ বা বিধায়ক ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে সেই সাফল্যের রেখচিত্র নিচের দিকে গেছে। কেরালা ছাড়া আর কোথাও তারা সরকারে নেই। অন্য কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেস বা আঞ্চলিক দলের সাহায্য নিয়ে গুটিকয়েক আসনে তারা জিততে পারে।
তার মৃত্যুর পর রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতিন গড়করি-সহ অনেকে রাজনীতিক শোকপ্রকাশ করেছেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)