রাজ্যে একের পর এক মামলার তদন্তে সিবিআই৷ প্রকাশ্যে রাজ্য পুলিশে অনাস্থা জানাচ্ছেন অভিযোগকারীরা৷ কিন্তু সিবিআইয়ের সাফল্য নিয়েও আছে সংশয়৷
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি মামলার তদন্তভার হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই৷ আদালতের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে মামলা হস্তান্তরিত হয়েছে৷ রামপুরহাটের ঘটনা, ঝালদার কাউন্সিলর খুন থেকে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত হাতে নিয়েছে সিবিআই৷ এর আগেও রাজ্যের একাধিক মামলার তদন্ত করেছে সিবিআই৷
রামপুরহাট-কাণ্ডে পুলিশকেও জেরা
রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম কার্যত ঘিরে রেখেছে সিবিআই। চলছে একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদ। গ্রেপ্তার আরও দুই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুইয়ে সিবিআই
বগটুইতে রীতিমতো সক্রিয় সিবিআই। বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে তথ্যপ্রমাণ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসডিপিও-কে জেরা
এলাকার সাবেক এসডিপিও-কে বুধবার প্রায় চার ঘণ্টা জেরা করেছেন সিবিআইয়ের অফিসাররা। প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক চাপ কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশকে জেরা
স্থানীয় থানার সাসপেন্ড হওয়া আইসি-কেও বুধবার জেরা করা হয়েছে। পুলিশকে কারা ফোন করে যেতে নিষেধ করেছিল, সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আরো জেরার সম্ভাবনা
পুলিশের আরো উচ্চপদস্থ কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্র জানিয়েছে। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে চাইছে সিবিআই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার আট
বুধবারও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আটক ব্যক্তিরা পালিয়ে গিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনুব্রতের পাশে মুখ্যমন্ত্রী
বগটুই নিয়ে বিজেপি একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং ফাইল বানিয়েছে। সেখানে এই ঘটনায় অনুব্রত মন্ডলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, বিজেপি সিবিআই-কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গ্রামে ফিরছেন সকলে
ঘটনার পর কার্যত মানুষশূন্য হয়ে গেছিল বগটুই গ্রাম। অনেকেই প্রাণের ভয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঘটনার দিন রাতেই পরিস্থিতি আঁচ করে পুরুষরা পালিয়েছিলেন। একে একে সকলেই ফের গ্রামে ফিরছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতি এমএম নারাভানে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয়ের কথা বলেছেন৷ অতীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নির্ভরযোগ্যতার দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশে সিবিআই যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির তদন্ত করেছে, তার ইতিহাস কী বলছে?
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘১৯৯৩-এর ভিখারি পাসোয়ান, ২০০১-এর গড়বেতা হত্যা, ২০০৭ সালের রিজওয়ানুর রহমানের রহস্যমৃত্যু থেকে নোবেল চুরি, সিবিআই তদন্তে সুরাহা হয়নি৷ দেশজুড়ে এমন অসংখ্য মামলা রয়েছে৷ সাধারণ মানুষেরও অভিজ্ঞতা, বহু কোটি টাকার সারদা ও নারদ মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে বহু সময় পার হয়ে গিয়েছে৷ এখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে ভোট পরবর্তী হিংসা, কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলাও রয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা তৎপর হয়৷ বাকি সময় তদন্তের কাজ চলে ঢিমেতালে৷ সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়৷''
‘রাজ্য পুলিশ শাসক দলের কথায় চলে’
রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশ শাসক দলের কথায় চলে৷ যারা অপরাধের শিকার হচ্ছেন, তারা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছেন৷ এরা মনে করছেন, সিবিআই তদন্তভার নিলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে নেই৷ তাই ঘনঘন সিবিআই তদন্তের দাবি উঠছে৷
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য পুলিশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে৷ তাই মানুষ যখন পুলিশকে সন্দেহ করে, তখন সিবিআই চায়৷ কিন্তু সিবিআই যে নিরপেক্ষ সেটাও নয়৷''
সিবিআইকে অতীতে সুপ্রিম কোর্ট ‘খাঁচাবন্দি তোতাপাখি' আখ্যা দিয়েছিল৷ পরবর্তীতে মাদ্রাজ হাইকোর্ট একই সুরে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের অপপ্রয়োগ শুরু হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে৷ তারপর জনতা পার্টি ক্ষমতায় এসে কমিশন গড়েছিল৷ যদিও শেষমেশ কিছু বদলায়নি৷ সংসদের তিন তিনটি স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট আছে৷ কিন্তু সবই রয়ে গিয়েছে ঠান্ডা ঘরে৷
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছিল, সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ কিন্তু এটি আইনের দ্বারা তৈরি সংস্থা৷ নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তাদেরই প্রমাণ করতে হবে৷''
‘একেবারে নীচুতলা থেকে আওয়াজ না উঠলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না’
বিজেপি যখন ক্ষমতায়, সেই সময় কেন্দ্রীয় সংস্থা পি চিদম্বরমের মতো শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাকেও জেলে পাঠিয়েছে৷ দেশের সবচেয়ে বড় দুই জাতীয় দল একে অপরের দিকে আঙুল তুললেও নিজেরা ক্ষমতায় থাকার সময় সিবিআইকে ব্যবহার করেছে বলে বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ৷ অর্থাৎ একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা!
তদন্তে অসফল হওয়ার জন্য সব সময় সিবিআইকে দায়ী করতে রাজি নন নজরুল ইসলাম৷ তিনি মনে করেন, রাজ্য পুলিশ তদন্ত শুরু করার অনেকদিন পর কেন্দ্রীয় সংস্থা দায়িত্ব পাচ্ছে৷ তাদের আধিকারিকরা জাদু জানেন না৷ রাজ্য পুলিশ এর মধ্যে অনেক তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দিচ্ছে৷ এরপর তদন্তভার হাতে নিয়ে রহস্যের সমাধান কঠিন কাজ৷
বিকাশরঞ্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তদন্ত যে-ই করুক, তাকে আইনের কাছে সৎ থাকতে হবে৷ রাজনৈতিক নেতা বা ব্যক্তির কাছে নয়৷ এই সর্বত্র একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷''
শুভাশিসের মতে, আস্থার অভাব ঘটলেও কোনো রাজনৈতিক দল চলতি পরিস্থিতি বদলাতে চায় না৷ একেবারে নীচুতলা থেকে আওয়াজ না উঠলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না৷
বিকাশরঞ্জন মনে করেন, রাজ্য পুলিশ বা কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে মানুষ বিচার না পেলে বিদ্রোহ করবে৷ লাঠি হাতে রাস্তায় নামবে৷ তখন কেউ রেহাই পাবে না৷
সিবিআই তদন্তের দাবি নিহত তৃণমূল কাউন্সিলারের পরিবারের
গত রোববার পানিহাটিতে খুন হয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলার অনুপম দত্ত। বুধবার ছিল তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এখানেই খুন হন তিনি
এই সেই জায়গা, যেখানে রোববার সন্ধ্যায় অনুপম একটি স্কুটিতে ওঠার পর আততায়ী এসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনুপম। মৃত্যু হয় তার। পুর বোর্ড গঠনের কয়েকদিন আগে কেন মারা হলো তাকে? বুধবার কাউন্সিলারদের শপথের অনুষ্ঠানে ঘুরপাক খেয়েছে এই প্রশ্ন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিযুক্ত ধৃত
এই সেই হোগলার জঙ্গল যেখান থেকে ধরা হয়েছিল অনুপম-হত্যার দায়ে মূল অভিযুক্ত অমিত পণ্ডিতকে। তাকে দীর্ঘ জেরা করে তার সম্পর্কিত ভাই সঞ্জীব পণ্ডিতকে ধরে পুলিশ। সঞ্জীবই অনুপকে হত্যার বরাত দিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে। সঞ্জীব এর আগে একজন ভাড়াটে খুনিকেও এই কাজে লাগিয়েছিল। তবে সে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনুপমের পরিচয়
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছিলেন অনুপম। ২০১৩ সালে তিনি কাউন্সিলার হন। তিনি তারপর থেকে জোর করে জমি নিয়ে প্রমোটারচক্র এবং তোলাবাজির বিরোধিতা করে এসেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চার বছর আগেও
২০১৮ সালেও একবার একটি বন্ধ কারখানার সামনে তাকে পিটিয়ে মারার চক্রান্ত হয়েছিল। তিনি একটি ফোন পেয়ে সেখানে যান। কিন্তু এক সতীর্থ কাউন্সিলার সেখানে পৌঁছে যাওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান অনুপম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুর বোর্ড গঠনের আগে
পানিহাটি পুরসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন অনুপম। বুধবার নির্বাচিত কাউন্সিলাররা শপথ নিলেন। অনুপম নিতে পারেননি। তার ছবি রাখা ছিল শপথের মঞ্চে। পুর বোর্ড গঠনের আগেই তাকে হত্যা করা হলো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনুপমের বাড়িতে
অনুপমের বাড়ি এখন শোকস্তব্ধ। বৃহস্পতিবার ছিল তার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান। তার মা বলেছেন, অনেক দুর্ভাগা হলে ছেলের শ্রাদ্ধ দেখতে হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআই তদন্তের দাবি পরিবারের
অনুপমের স্ত্রী মীনাক্ষী দত্ত দাবি করেছেন, এই খুনের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দিতে হবে। তাহলে কি রাজ্যের তদন্তের উপর ভরসা রখতে পারছেন না তিনি? রাজ্য সরকার অবশ্য সিআইডি-র হাতে এই তদন্তভার দিয়েছে। ছবিতে অনুপমের মা ও বাবা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন খুন?
তদন্তে নেমে সিআইডি বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে। স্থানীয় মানুষের দাবি, অনুপম স্থানীয় প্রমোটাররাজের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অনুপম স্থানীয় দুষ্কৃতীদের বিরোধিতাও করেছিলেন। তিনি পুরসভায় কারো পথের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। উপরে বন্ধ কারখানার ছবি। এই সব জমির উপর প্রমোটার-চক্রের নজর থাকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুর নির্বাচনের পর
পুরসভা নির্বাচন শেষ হতেই পুরুলিয়ায় কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দু এবং পানিহাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলার অনুপম দত্তের হত্যা পশ্চিমবঙ্গে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তারা দুইটি হত্যার ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব আবার অভিযোগ করেছে, দুইটি ক্ষেত্রেই বিরোধীরা দায়ী।