1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিবিআইয়ের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজ্য়ের অনুমতি না দেয়া নিয়ে প্রশ্ন

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আরজি কর সহ বিভিন্ন মামলার তদন্তে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য সরকারের ভূমিকা। এমনই দাবি সিবিআই সূত্রের। অভিযোগ, রাজ্যের অনুমোদন না পাওয়ায় চার্জশিট দেয়া যাচ্ছে না । কিন্তু ব্যর্থতার দায় কি সিবিআই এড়াতে পারে?

ভারতে সিবিআইয়ের লোগো।
আরজি কর-সহ বিভিন্ন তদন্তে রাজ্য সরকারের ভূমিকা ও সিবিআইয়ের সক্রিয়তার অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ছবি: Sajjad Hussain/AFP/Getty Images

আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সিবিআই গ্রেপ্তার করেছিল সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। ৯০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থা চার্জশিট দিতে না পারায় আদালত তাদের জামিন দিয়েছে। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে নাগরিক সমাজের তোপের মুখে পড়েছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই বল ঠেলছে রাজ্যের কোর্টে।

রাজ্যের অনুমোদনের প্রশ্ন 

কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে সিবিআই আদালতের নির্দেশে যে কোনও রাজ্যের মামলার তদন্ত চালাতে পারে। কোনও রাজ্য সরকার তাদের হাতে তদন্তভার তুলে দিতে পারে।

কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের ক্ষমতা অবাধ নয়। তাদের রাজ্য সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ করতে হয়। বিশেষত কোনও সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষেত্রে এই অনুমোদন গুরুত্বপূর্ণ।

যে আইনের ধারা অনুযায়ী সিবিআই তদন্ত চালায়, তাতে স্পষ্ট বলা আছে, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া আর্থিক দুর্নীতি সহ অন্য মামলায় এফআইআর দায়ের করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অফিসারদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগে সিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে তিন দশকের বেশি সময় ধরে। অনুমোদন পেতেও সমস্যা হত না।

২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরেও সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। সিবিআই সূত্রের দাবি, ২০১৮ সালের পর থেকে রাজ্যের অনুমোদনে ভাটা পড়েছে।

আইন অনুযায়ী, সিবিআই রাজ্যের অনুমোদন না পেলে দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিক, কর্মী, ব্যাংক কর্তা, কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট আদালতে পেশ করা যাবে না। আদালত এক্ষেত্রে চার্জশিট নিতে পারে না। এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে দাবি সিবিআই সূত্রে।

সন্দীপ অভিজিৎ

গত শুক্রবার সিবিআই আদালতে আরজি কর মামলার শুনানি হয়। এই মামলায় একটি চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্র ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ছিল। তাদের গ্রেপ্তারির ৯০ দিনের মাথায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় সংস্থার। 

আদালতে সিবিআই জানায়, চার্জশিট পেশের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ। তারা চার্জশিট দিচ্ছে না। আদালত আইন মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। আদালত দু'হাজার টাকার বন্ডে দুই অভিযুক্তকে জামিন দেয়।

এর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বক্তব্য, তারা রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার পর তদন্তের অগ্রগতি থমকে গিয়েছে। ফলে বিচার পাওয়া আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিকিৎসকরা এরপর সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দপ্তরে গিয়ে তাদের ক্ষোভ জানিয়েছেন। ফের পথে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

অন্য মামলার ছবি

নিয়োগ দুর্নীতি সহ বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা হয়েছে বলে অতীতে অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীরাও একই স্বরে বলেছিল, রাজ্য সরকার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদন দিক।

অতীতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান জেলবন্দি সুবীরেশ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য অনুমতি কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এ নিয়ে রাজ্য সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ধরনের কমিটির কর্তাদের নিয়োগ রাজ্যপালের অধিকারের আওতায় পড়ে। ফলে রাজ্য সরকার, রাজভবন ও কেন্দ্রীয় সংস্থা, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয় ঠিক সময় না হওয়ায় তদন্ত প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।

সিবিআই সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছরে আর্থিক দুর্নীতির শ দুয়েক অভিযোগ এসেছে তাদের কাছে। কিন্তু প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর বিশেষ কাজ এগোয়নি। তারা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

আইনজীবী ফিরদৌস শামীম ডিডাব্লিউকে বলেন, "রাজ্য সরকার যদি অনুমোদন না দেয়, তাহলে ট্রায়াল শুরু করা যাবে না। ট্রায়াল শুরু করা না গেলে বিচার পর্বও শেষ হবে না। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই যারা দোষী, তারা শাস্তি পাবে না। আসলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দুষ্কর্ম ঘটিয়েছেন। ফলে খুব সঙ্গত কারণেই রাজ্য সরকার তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদন দিচ্ছে না, যাতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে তারা দোষী প্রমাণিত হয়।"

তিনি বলেন, "তদন্তকারী সংস্থার উচিত উপযুক্ত বিচারবিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অনুমোদন না দিলে কী করতে হয়, আশা করি তদন্তকারী সংস্থা সেটা জানে। আশা করব, অতি দ্রুত তারা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"

একইসঙ্গে এই প্রশ্ন উঠছে সিবিআই কি দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত চালাতে পারছে? তৃণমূল সাংসদ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কে অভিযুক্ত হবে, কার বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, কার বিরুদ্ধে কনভিকশন হবে সেটা আমার অনুমানের উপর নির্ভর করে না। এর জন্য সাক্ষ্য প্রমাণ চাই কিন্তু সিবিআই সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই গ্রেফতার করেছিল আন্দোলনের চাপে তাই তারা প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ৯০ দিনের মধ্যে চার্জার জমা দিলে জামিন পাওয়া স্বাভাবিক।"

রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দুষ্কর্ম ঘটিয়েছেন: ফিরদৌস শামীম

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিবিআই-এর জানা আছে যে সরকারি আধিকারিকদের গ্রেপ্তার করলে সরকারের অনুমোদন লাগে চার্জশিট দিতে। এজন্য গোড়া থেকেই এসব উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল। রাজ্যপালের অনুমতি নিলে হতে পারে কি না, দেখা উচিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সেটা হয়ে যায়। সিবিআই এই ধরনের চেষ্টা কিছু করেছে কি না দেখা দরকার। যদি না করে থাকে, তাহলে কি সিবিআই এটা অজুহাত দিচ্ছে? এদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অজুহাত? অনেকের মধ্যেই এই ধরনের সংশয় আছে। সিবিআই বোধহয় কোনও কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। এটা কি কেন্দ্রীয় সংস্থার যোগ্যতার অভাব, নাকি তাদের উপর চাপ রয়েছে, এটা এখনো পরিষ্কার নয়।"

এই পরিস্থিতিতে সিবিআই কী করতে পারে?

সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিবিআই হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছে। সিবিআই এর উচিত, হাইকোর্টে বা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যাতে রাজ্য সরকার অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়। আসলে সন্দীপ ঘোষ বা টালা থানার ওসি কেউই দুর্নীতি নিজের থেকে করেননি। তাদের দিয়ে দুর্নীতি করানো হয়েছিল। যারা দুর্নীতি করিয়েছেন, তারা তো তাদের রক্ষা করতে চাইবেন। কিন্তু সিবিআইকে যথেষ্ট উদ্যোগী হতে হবে। সেটা তারা করছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।"

পায়েল সামন্ত/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ