নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে, জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিজ্ঞাপন
এই সপ্তাহে পরপর দুই দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই যেভাবে তদন্ত করছে, তাতে তিনি একেবারেই খুশি নন। দোষীদের ধরার বদলে তারা তাদের রক্ষা করছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানানোর কথাও বলেন তিনি।
আদালতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ''এবার আমি আপনাদের পদক্ষেপ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। আপনারা দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আধিকারিকরা কী করছেন?''
এরপর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ''প্রধানমন্ত্রীকে জানালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু হবে। আমলাদের তৎপরতা বাড়বে। সেটা অনাহূত। এই পদক্ষেপ নেবেন না''। তারপর বিচারপতি জানান, ''ঠিক আছে।''
কী বলেছেন বিচারপতি
বিচারপতি বলেছেন, ''সিবিআইয়ের আধিকারিকরা নিশ্চয়ই এত অবোধ বা নির্বোধ নন। তারা নিশ্চিতভাবেই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন। ওএমআর শিট সংক্রান্ত মামলায় আদালত সিবিআইয়ের কাজে একেবারেই খুশি নয়।''
তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা অনুব্রত গ্রেপ্তার
গরুপাচার কাণ্ডে বোলপুরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআইয়ের ক্যাম্প অফিসে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বোলপুর থেকে গ্রেপ্তার
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ বোলপুরের বাড়ি থেকে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিবিআইয়ের বিশাল দল তার বাড়িতে গিয়ে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিবিআইয়ের কৌশল
বুধবার মাঝরাতে পাঁচটি গাড়ি নিয়ে বোলপুরে পৌঁছে যান সিবিআই অফিসাররা। বৃহস্পতিবার সকালে তার বাড়ি ঘিরে ফেলে সিআরপিএফ জওয়ানরা। দেড়ঘণ্টা বাড়িতে কথা বলার পর অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেপ্তার
অনুব্রতের বিরুদ্ধে গরুপাচার কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ। আগেই তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতার দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিতর্কিত নেতা
বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন অনুব্রত। এর আগে পুলিশকে বোমা মারার কথা বলেছিলেন অনুব্রত। ভোটের সময় চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর কথা বলেছেন। গাঁজা কেসে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করানোর কথা বলেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনুব্রতের লুকোচুরি
এর আগে ১০ বার অনুব্রতকে তলব করেছিল সিবিআই। একবার মাত্র সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেসে গেছেন তিনি। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গেছেন অনুব্রত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অসুখ বিতর্ক
এসএসকেএম হাসপাতালে গত সোমবার চিকিৎসার জন্য গেছিলেন অনুব্রত। সেখানে তাকে দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, বার্ধক্যজনিত কিছু রোগে ভুগছেন তিনি। তবে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বোলপুরের চিকিৎসকরা তাকে বেডরেস্টের নির্দেশ দেন।
ছবি: Subrata Goswami
আসানসোলের পথে
আসানসোল আদালতে তোলা হতে পারে অনুব্রতকে। তার আগে সিবিআই তাকে আরো জেরা করতে পারে মনে করা হচ্ছে। অনুব্রতকে সরাসরি গরুপাচার মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা বলেছেন, তাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে তিনি কতটা ক্ষুব্ধ তা যেমন সামনে এসেছে, তেমনই আস্থাহীনতাও ফুটে উঠেছে। তবে এটা তার পর্যবেক্ষণ মাত্র। তিনি এখনো সিবিআইয়ের হাত থেকে তদন্তভার প্রত্যাহার করে নেননি।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই ,সিবিআই তদন্ত করছে। এই এক বছরে তারা প্রচুর অভিযুক্তকে জেরা করেছে, বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য করেছেন, আসল দুষ্কৃতীদের তারা বাঁচাচ্ছে। তিনি কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, ''সিবিআই
আধিকারিকদের নির্বোধের মতো আচরণে আমি অবাক।''
তিনি বলেছেন, ''কম্পিউটারে সংরক্ষিত ওএমআর শিটের তথ্যকে এতদিন ডিজিটাইজড বলে শিক্ষা পর্ষদ দাবি করছিল, সেটা একেবারেই ডিজিটাইজড কপি নয়। সিবিআইয়ের আধাকিরাকরা নির্লজ্জ। এতবার এত আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের, তা সত্ত্বেও তাদের হুঁশ ফিরছে না।''
বিচারপতি বলেছেন, এ''কসময় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ মানিক ভট্টাচার্যের জমিদারি ছিল। এখন তাকে সরিয়ে দেয়ার পর তার কিছু অনুগামী গন্ডগোল করছে। তারা সিবিআই-ইডির নজরদারিতে আছেন।''
সিবিআই-জালে পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী
রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দুজনেই মুখোমুখি সিবিআইয়ের। হাইকোর্টের কড়া নির্দেশে বিপাকে রাজ্য প্রশাসন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশ
দুর্নীতি করে মেয়েকে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে। এবিষয়ে তাকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরেশ যদিও উত্তরবঙ্গে চলে যান। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিকেলের মধ্যে পরেশকে সিবিআই দপ্তরে যেতে হবে। এবিষয়ে কড়া মন্তব্য করেন বিচারপতি। অন্যদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের জেরেই সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আরেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরেশের দিনপঞ্জি
সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হবে শুনেই কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে চলে গেছিলেন পরেশ। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কড়া নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বাধ্য হয়ে বিকেলের বিমানে বাগডোগরা থেকে কলকাতায় আসেন পরেশ। বিমানবন্দরে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেখান থেকে সরাসরি সিবিআই দপ্তর নিজাম প্যালেসে রওনা হন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
নম্বর কম পাওয়া সত্ত্বেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের তালিকায় এক নম্বরে ছিল পরেশের মেয়ে অঙ্কিতার নাম। ওই তালিকাতেই ছিলেন ববিতা, লিখিত পরীক্ষায় অঙ্কিতার থেকে বেশি নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও তার নাম নীচে ছিল। তার অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসকেএমে অনুব্রত
গরুপাচার মামলায় দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করার চেষ্টা করছে সিবিআই। এর আগে কলকাতায় এসে সিবিআই দপ্তরে না গিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার সিবিআই দপ্তরে যান অনুব্রত। কিন্তু শরীর খারাপ লাগছে বলে তিনি বেশিক্ষণ থাকেননি। আবার হাসপাতাল চলে যান। পরে তিনি নিজের বাড়ি ফিরে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইয়ের বক্তব্য
সিবিআই জানিয়েছে, আগামী বুধবার অনুব্রতকে সিবিআই দপ্তরে হাজির থাকতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুপ্রিম কোর্টে পার্থ
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় তাকে 'পক্ষ' হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি, অথচ, এখন তাকে সিবিআই ডেকে পাঠাচ্ছে। তাই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন রাজ্যের সাবেক শিক্ষা ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইয়ের জেরা
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে পার্থকে সিবিআই দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পার্থ ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও লাভ হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা করে সিবিআই। পার্থের আশঙ্কা, ফের তাকে ডাকা হতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসসি দপ্তরের চেহারা
আদালতের নির্দেশে এসএসসি দপ্তর কার্যত ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারই মধ্যে দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে এদিন ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়। বুধবার এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ইস্তফা দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার জানা যায়, তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। এসএসসি মামলায় সিদ্ধার্থের বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
বিচারপতির মন্তব্যের পর প্রশ্ন
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই ভাবে সিবিআইয়ের উপর অনাস্থা প্রকাশ করার পর নানান প্রশ্ন উঠেছে।
প্রবীণ সাংবদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে সুবিচার না পেয়ে আদালতের উপর ভরসা করেন। কিন্তু আদালত যদি তদন্তকারী সংস্থাকে নিয়ে এই কথা বলেন তো তারা কার কাছে যাবেন?''
শুভাশিস জানিয়েছেন, ''সিবিআইয়ের হাতে রাজ্যের অনেকগুলি মামলা আছে। তার মধ্যে সারদা মামলাই তো বহু বছর হয়ে গেল। এখনো সেভাবে এগোয়নি। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরির মতো অনেক বিষয়ই তারা বছরের পর বছর ধরে তদন্ত করছে।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''দিল্লির সরকার যে তৃণমূলকে বাঁচাতে চায় তা স্পষ্ট। বিচারপতি বলতে বাধ্য হয়েছেন, এবার কি তবে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে, সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে বলতে হবে? দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে।''