ইউক্রেনের ডনবাসের সিভিয়েরোদোনেৎসকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনার মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। জেলেনস্কির দাবি, ইউক্রেনের সেনা জমি ছাড়েনি।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, সিভিয়েরোদোনেৎসকে প্রতিটি রাস্তায় লড়াই চলছে। ইউক্রেনের সেনা সেখানে বিন্দুমাত্র জমি ছাড়েনি। জেলেনস্কির ঘোষণা, ডনবাস ইউক্রেনের কাছেই আছে।
জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, রাশিয়া যদি ডনবাস অধিকার করে নিতো, তাহলে ইউক্রেনের পক্ষে পরিস্থিতি কঠিন হতো। তিনি বলেছেন, ''আমরা এখনো পর্যন্ত ডনবাস নিজেদের অধিকারে রাখতে পেরেছি। আমাদের সেনা পুরোদমে লড়াই করছে।'' তবে তিনি জানিয়েছেন, ''সিভিয়েরোদোনেৎসক ও তার পাশের শহরে আর কোনোকিছুই ঠিকঠাক নেই। রাশিয়া সেখানে লাগাতার বোমা ও গোলা মেরে সবকিছু গুঁড়িয়ে দিয়েছে।''
এর আগে লুহানস্কের গভর্নর জানিয়েছিলেন, সিভিয়েরোদোনেৎসকে যে লড়াই চলছে, তাlতে শক্তির পরীক্ষা হচ্ছে। রাশিয়া সমানে সিভিয়েরোদোনেৎসকে গোলা মারছে। তারা সবকিছু গুঁড়িয়ে দেয়ার নীতি নিয়ে চলছে।
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা শুরুর ১০০ দিন পার হলো৷ অন্য রাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে এমন আক্রমণ গেল ৮০ বছরে ইউরোপে আর হয়নি৷ এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে৷ সেটি কেমন? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: South Korean Defense Ministry/Getty Images
অসংখ্য শরণার্থী
রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন৷ আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন৷
ছবি: Kirsty O'Connor/empics/picture alliance
খাদ্য সংকট
বিশ্বের অর্ধেক সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেল উৎপাদন করে ইউক্রেন৷ এছাড়া দেশটি ১৫% ভুট্টা ও ১০% গম রপ্তানি করে৷ যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ কারণে এসব পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷ গেল মে মাস পর্যন্ত ২৩টি দেশ এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জ্বালানি সংকট
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ৷ তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কয়লা রপ্তানিকারক৷ ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ রাশিয়াও একাধিক ইউরোপীয় দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: ITAR-TASS/imago
দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে দাম বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের৷ বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম৷ ইউরোজোনে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৮.১%৷ সারা বিশ্বেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে৷
ছবি: Emre Eser/DW
ন্যাটোর পুনর্জন্ম
রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
ছবি: Gints Ivuskans /AFP
5 ছবি1 | 5
মাঝখানে রাশিয়ার সেনা শহরের বেশ কিছুটা ভিতরে ঢুকে যেতে পেরেছিল। সম্প্রতি ইউক্রেনের বাহিনী আবার তাদের কিছুটা পিছিয়ে দিতে পেরেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবে সিভিয়েরোদোনেৎসক শহরের কতটা ইউক্রেনের সেনা অধিকার করে রাখতে পেরেছে তা ডিডাব্লিউ যাচাই করে দেখতে পারেনি। ডিডাব্লিউর নিক কনোলি জানিয়েছেন, শহরের একটা শিল্পাঞ্চল ইউক্রেনের সেনার দখলে আছে।
ইইউ-র সদস্য
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের ইইউ সদস্য হওয়া খুবই জরুরি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সদস্য হওয়ার আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করবে ইইউ। তিনি ইতিমধ্যেই পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জেলেনস্কি জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইইউ যে সিদ্ধান্ত নেবে তা শুধু ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই নয়, গোটা ইউরোপের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করবে ইইউ শক্তিশালী ইউনিয়ন হিসাবে থাকবে কি না।
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
বাখমুত শহরের এ হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে এত রোগী আসবে কোনোদিন ভাবেনি কেউ৷ এখন সেখানে নিত্য রোগীর আসা-যাওয়া৷ পুরোনো অ্যম্বুলেন্স, স্ট্রেচারের বদলে কাঠের দরজা নিয়েই চলছে যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকি’সা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
দরজায় চড়ে ‘নরক’ থেকে হাসপাতালে
যুদ্ধাহত সৈনিক ইগর বলছিলেন, ‘‘আমরা নরক থেকে এখানে এসেছি৷’’ বাখমুতের এই হাসপাতালে তিনি এসেছেন বাঁচার আশায়৷ হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার এবং প্যারামেডিক্স প্রাণপণ লড়ছেন তাদের বাঁচাতে৷ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে গেলে কিছুই নেই৷ পর্যাপ্ত স্ট্রেচারও না থাকায় ওপরের ছবির মতো কাঠের দরজায় তুলে আনতে হচ্ছে আহত সৈন্যদের৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স
এমনকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের নিয়ে আসার জন্য ভালো কোনো অ্যাম্বুলেন্সও নেই৷ জার্মানি এবং পোল্যান্ডের তৈরি কয়েকটি সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা বাখমুতের এই হাসপাতালের৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
ক্যানাডা থেকে ইউক্রেনে
ছবির এই নারীর নাম এলেনা বুলাখতিনা৷ রুশ বংশোদ্ভূত এই ক্যানাডিয়ান কাজ করছেন পিরোগভ ফার্স্ট ভলান্টিয়ার মোবাইল হসপিট্যালে৷ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালটির মূল কাজ লুহানস্ক অঞ্চলের পোপসানা শহরের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈনিকদের বাখমুতের হাসপাতালে নিয়ে আসা৷ আহতদের সব চিকিৎসা হয় না এখানে৷ প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তপাত বন্ধ করে, কিছুটা সুস্থ করে সব রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের বড় কোনো হাসপাতালে৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘এত রোগী আসবে ভাবিনি’
বুলাখতিনার ‘বস’ সভেতলানা ড্রুজেনকো জানালেন এত আহত সৈনিকের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখনও ভাবিনি এত লোক আহত হয়ে আসবে৷ এখন যে হারে আসছে, সংখ্যাটা সত্যিই বিশাল৷ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, সব শহরেই মারা যাচ্ছে মানুষ৷’’
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘পোপাসনা এখন ধ্বংসস্তূপ‘
আহত সৈন্য ইগরের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা খুব ভয়াবহ৷ বলছিলেন, ‘‘ওরা (রুশ বাহিনী) ভূমি থেকে এবং বিমান থেকে হামলা চালিয়েছে, সব জায়গায় বোমা ফেলছে, দিনে-রাতে হামলা চালাচ্ছে৷ পোপাসনা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে৷’’
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
আহত আলেসান্দ্রোর স্বস্তি
যুদ্ধাহত সৈনিক আলেসান্দ্রোর পরিবার যুদ্ধ শুরুর পরই ইউক্রেন ছেড়ে চলে গেছে পোল্যান্ডে৷ সেখানে তারা নিরাপদে আছেন৷ হাসপাতালে নিজের শরীরের ব্যথা ভুলে সন্তানের সঙ্গে কথা বলছেন আলেসান্দ্রো৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
6 ছবি1 | 6
সেনার সমস্যা
ডিডাব্লিউর নিক কনোলি জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইউক্রেনের সেনা বিপাকে পড়েছে। কারণ, তারা যত দ্রুত পশ্চিমা দেশগুলি থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চাইছে, ততটা তাড়াতাড়ি তা এসে পৌঁছচ্ছে না। রাতের ভাষণে জেলেনস্কি যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ দিয়েছেন, তারা মালটিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে বলে। জেলেনস্কি বলেছেন, এই সব অস্ত্র ইউক্রেনের মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য খুবই জরুরি।
কনোলি জানিয়েছেন, অস্ত্র আসার পর সেনাকে তা ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাতে সময় লাগে। রাশিয়ার হাতে যে পরিমাণ অস্ত্র আছে, তা ইউক্রেনের নেই।