শুরুটা করা যাক আন্তর্জাতিক এক প্রতারকের কাহিনী দিয়ে৷ এই ব্যক্তির ছদ্মনাম সাইমন লেভিয়েভ৷ আসল নাম সিমন হায়ুত৷ গত বছর তাকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সাড়া ফেলেছিল নরওয়ের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ভিজি৷
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলি এই যুবক ডেটিং-অ্যাপ ‘টিন্ডারের’ মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামর্থ্যবান তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতান৷ নিজেকে পরিচয় দেন বিরাট ধনী হিসেবে৷ এরপর পরিচয় হওয়া নারীদের সঙ্গে তিনি ডেটিং শুরু করেন৷
ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে তাদের নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ান৷ বিলাসবহুল হোটেলে থাকেন৷ সঙ্গে রাখেন ভাড়া করা বডিগার্ড৷ ভুয়া ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও ব্যবসায়িক সফরসঙ্গী৷ একেকজন নারীর সঙ্গে মাসের পর মাস বা বছর অবধি এই সম্পর্ক গড়াতে থাকে৷
এক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন বিপদের কথা বলে প্রেমিকাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা ধার করতে শুরু করেন৷ তাকে উদ্ধারের জন্য কেউ কেউ ব্যাংক ঋণ করেও কয়েক কোটি টাকা ধার দেন৷ যেমন নরওয়ের সিসিলিয়ে৷ সিমনের জন্য তিনি দশটি ব্যাংক থেকে ঋণ করেছিলেন৷ পরবর্তীতে সেই টাকা পরিশোধের ভুয়া ডকুমেন্ট পাঠান সিমন সেসিলিয়ের কাছে৷ এর মধ্যেই সিমন পার্নিলা খয়াহোলম নামের আরেক সুইডিশ তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের ভিত গড়তে শুরু করে দিয়েছেন টিন্ডারে৷
ভিজির অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেসিলিয়ের পাঠানো টাকা থেকে সিমন পার্নিলাকে চার লাখ ক্রোনা আর সেই সঙ্গে ব্যাংকক যাওয়ার টিকেট কিনে পাঠিয়েছিলেন৷ সেসিলিয়ে কিংবা পার্নিলা যতক্ষণে তার অভিসন্ধি আঁচ করতে পারেন ততক্ষণে একজনকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে ডেটিং শুরু করেন সিমন৷ নতুন প্রেমিকার জন্য একই উপায়ে বিছান প্রতারণার জাল৷
বিশ্বাসে চিড় ধরায় এমন কয়েকটি খবর
কিছু মানুষের কিছু অপরাধ বা অপরাধের অভিযোগ প্রবলভাবে বিস্মিতই শুধু করে না, পারস্পরিক বিশ্বাসেও ফাটল ধরায়৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু সাম্প্রতিক খবর নিয়েই এই ছবিঘর৷ ছবিগুলো সব প্রতীকী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
প্রতিবন্ধী ছেলের বৌ-কে যৌন নিপীড়ন
ঢাকার পল্লবীতে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলের বৌ-কে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ২০ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ৷ পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াজেদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, প্রায় চার মাস ধরে প্রতিবন্ধী ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক করে আসছিলেন সেই ব্যক্তি৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
নিপীড়নের অভিযোগ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র কেন্দ্রীয় নেত্রী জলি তালুকদার সম্প্রতি তার দলের ঢাকা কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন খানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন৷ ২৮ ফেব্রুয়ারির ঐ ঘটনার পর দলের উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়ে সাড়া না পাওয়ায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ঢাকায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন শুরু করেছিলেন জলি৷ বিচারের আশ্বাস পেয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
দুই ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় গত জানুয়ারি মাসে দশম শ্রেণির দুই ছাত্রকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে৷ এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম আটক
আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত মার্চে ঢাকার এক মসজিদের ইমামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুর্মিটোলার এক মসজিদে আরবি পড়তে গেলে তাকে মসজিদের পাশে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় পুরোহিত আটক
গতবছর এপ্রিলে যশোরে একটি মন্দিরের পুরোহিত প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে৷ মন্দিরে পুজো দেখতে যাওয়া মেয়েটিকে চকলেট দেয়ার নাম করে পর্দা টানানো একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছিল৷ পরে পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগ
যশোরে তৃতীয় লিঙ্গের এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন ঢাকা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷ ঘটনাটি ঘটে ১৫ সেপ্টেম্বর৷
ছবি: Imago/Imagebroker
৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
গত জুন মাসে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয়৷ এরপর দায়ের হওয়া মামলায় ৩০ বছরের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ নেশা করে চিৎকার করতে থাকায় ঐ বৃদ্ধা ঐ ব্যক্তি ও তার বন্ধুদের শাসন করেছিলেন৷ সেই ঘটনার জেরে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ছেলের বিরুদ্ধে মা হত্যার অভিযোগ
বসতভিটা নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধের এক পর্যায়ে কক্সবাজারে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি তার মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ পেকুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন সরকার মায়ের মরদেহ উদ্ধার ও তার এক ছেলেকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Reuters
শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার এক ব্যক্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন৷ এপ্রিল মাসে এই ঘটনা ঘটে বলে ২২ সেপ্টেম্বের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঐ মেয়ের বাবা৷ বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোর এক ফাঁকে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ এখন তার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান ঐ বাবা৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে কনস্টেবল আটক
খুলনায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়৷ তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Kazi Borhan Uddini/AFP/Getty Images
ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আইনজীবী গ্রেপ্তার
পঞ্চগড়ে দশম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ১১ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে৷ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রাশেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্থানীয়রা ঐ আইনজীবীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpaW. Langenstrassen
‘বয়স্ক পাত্র চাই’
সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮) নামে একজন পত্রিকায় ‘কানাডাপ্রবাসীর জন্য বয়স্ক পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ টাকার অংকটি প্রাথমিক হিসাব বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার৷ ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এভাবে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW
প্রতারণার অস্ত্র বিয়ে
প্রতারণার মাধ্যমে একে একে নয়জনকে বিয়ে করা মোহাম্মদ সুলায়মানকে (২৯) ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন সুলায়মান৷ বিয়ে করার পর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেক টাকা নিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া স্ত্রীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরে তিনি লাপাত্তা হয়ে যেতেন বলেও অভিযোগ৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
13 ছবি1 | 13
কয়েক বছর ধরে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বিভিন্ন দেশের একাধিক নারীকে এমন অভিনব প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন সিমন৷ ২০১১ সালেই ইসরায়েলে তার বিরুদ্ধে চুরি, জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা হয়েছিল৷ কিন্তু গোটা ইউরোপ চষে বেড়ানো এই সিমনের টিকির দেখাও পাচ্ছিল না দেশটির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ২০১৫ সালে ফিনল্যান্ডে তিন নারীর সঙ্গে প্রতারনায়ও অভিযুক্ত হন তিনি৷ শুধু ইসরায়েল বা ফিনল্যান্ড নয় সিমনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল সুইডেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ডেনমার্ক আর নরওয়ের পুলিশও৷ অবশেষে তিনি ধরা পড়েন ২০১৯ সালের জুনে গ্রিক পুলিশের হাতে৷
সম্প্রতি বাংলাদেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এক নারীকে গ্রেপ্তার করে৷ তার ছদ্মনাম জান্নাতুল ফেরদৌস৷ আসল নাম সাদিয়া জান্নাত৷ সাংবাদিক সম্মেলনে সিআইডির দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৫-৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন৷ সিমনের ফাঁদ পাতার মাধ্যম ছিল টিন্ডার অ্যাপ৷ আর সাদিয়ার ছিল সংবাদপত্রে ক্যানাডা প্রবাসী ধণাঢ্য নারীর জন্য ‘ধার্মিক ও সুপাত্র’ চেয়ে বিজ্ঞাপন৷ বিয়ের পর সেই পাত্র পাবেন ক্যানাডায় বসবাসের সুযোগ৷ এই বিজ্ঞাপন দেয়ার পর সাদিয়াকে তার সম্ভাব্য ‘পাত্রদের’ পিছনে সিমনের মতো তেমন বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হয়নি৷ উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর যুবা, এমনকি বৃদ্ধরাও এসে ধরা দেন তার জালে৷ উল্টো তারাই কাড়ি কাড়ি টাকা তুলে দেন তার হাতে৷ হয়ে যান সর্বস্বান্ত৷ (সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১৯ সেপ্টেম্বর)
তার মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ ৭০ বছর বয়সি ঢাকার এক ব্যবসায়ীর প্রতারিত হওয়ার কাহিনি৷ সংবাদপত্রে প্রকাশিত বর্ণনা অনুযায়ী ক্যানাডায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে তিন দফায় টাকা নেন সাদিয়া৷ ভিসা আবেদনের জন্য দেড় লাখ, ভিসার জন্য ৭০ হাজার, ট্রাভেল ডকুমেন্টস তৈরির জন্য ছয় লাখ, ক্যানাডার সোশ্যাল সিকিউরিটির জন্য ৬০ লাখ টাকা তুলে দেন তিনি৷ টাকা দেয়ার কিছুদিন পর সাদিয়া ঐ ব্যক্তিকে বলেন ক্যানাডায় অনেক শীত, যে কারণে তিনি থাকতে পারবেন না৷ তার চেয়ে সাদিয়া তার নিজের ২০০ কোটি টাকাও ক্যানাডা থেকে নিয়ে আসবেন৷ বিয়ে করে দুজনে ঢাকাতেই বসবাস করবেন৷ এরপর শুরু হয় ঐ ব্যক্তির এবং সাদিয়ার কথিত টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া! এজন্য আরো তিন ধাপে সাদিয়াকে ২৩ লাখ, ৭২ লাখ ও ১০ লাখ টাকা দেন ব্যবসায়ী৷ একসময় সাদিয়া তাকে ২০০ কোটি টাকা দেয়ার কথা বলে একটি প্যাকেট তুলে দেন৷ বাসায় নিয়ে খোলার পর যেখানে পেয়েছেন ‘এ-ফোর সাইজের ৫০০ টি সাদা কাগজের একটি বান্ডিল’৷ এর মধ্যেই মোট এক কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নাই হয়ে গেল সত্তরের প্রৌঢ় ব্যবসায়ীর (সূত্র: প্রথম আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর)৷
সিমন আর সাদিয়া বিশ্বের দুই প্রান্তের দুই জন৷ তাদের প্রতারণার ধরনে আছে অনেক মিল আবার অনেক অমিলও৷ সিমন এক প্রেমিকার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেক প্রেমিকার পেছনে খরচ করেন৷ নিজেও বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন৷ সাদিয়ার কোনো বিনিয়োগ বা দেয়া-নেয়া নেই৷ পুরোটাই আত্মসাৎ করেন৷ সিমনের প্রেমিকারা ভালোবেসে প্রেমিককে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য টাকা দেন৷ আর সাদিয়ার ‘পাত্ররা’ তাকে টাকা দেন বিদেশে পাড়ি জমিয়ে উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে৷ একটি কাহিনির চরিত্ররা ইউরোপের উন্নত দেশের আরেকটি এশিয়ার স্বল্পোন্নত (জাতিসংঘের তালিকায়) কিংবা স্বল্প মধ্যম আয়ের দেশের (বিশ্বব্যাংকের তালিকা)৷ যেখানে ৭০ বছরের একজন অবস্থাসম্পন্ন ব্যবসায়ীও বিদেশ পাড়ি জমাতে চান, প্রয়োজনে কাউকে বিয়ে করে হলেও৷
শুধু পাত্র চাই বিজ্ঞাপন নয়, ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে, পত্রিকায়, লিফলেটে সহজে ক্যানাডা-অ্যামেরিকা, ইউরোপ যাওয়ার লোভনীয় অফার চলে৷ সেই অফারে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত থাকেন কত হাজার, লাখোজন! কত রকমের প্রতারণা যে পথে পথে তাদের অপেক্ষায় থাকে তার খবর প্রায়ই মিলে৷ ইউরোপের স্বপ্ন থেমে যায় লিবিয়ায় কিংবা ভূমধ্যসাগরে৷ অনেকের পরিবার সর্বস্বান্ত হয় বন্দিদের জন্য দালাল, দস্যুদের মুক্তিপণের অর্থ দিতে দিতেই৷ মালয়েশিয়ার স্বপ্ন আটকে যায় অনেকের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে৷ এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ভিয়েতনাম কিংবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ নিঃস্ব হয়ে ফিরলে বিহিত না করে রাষ্ট্রও যেন আরেক দফা প্রতারণা করে৷ প্রতারকদের না ধরে ভুক্তভোগীদেরই জেলে পোরে৷ বিশ্বাস ভঙ্গের ফাঁদ ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার, হাত ধরাধরি করেই যেন আছে৷
প্রতারণার গল্প নিয়ে যত সিনেমা
ব্যাংক হিসাব শূন্য, অথচ চেক দিয়ে কোটি কোটি ডলার তুলছেন৷ আবার তিনিই বনে যাচ্ছেন পাইলট, ডাক্তার কিংবা আইনজীবী৷ মুচি ক্যাপ্টেন বনে গ্রেপ্তার করলেন সিটি মেয়রকে৷ বিশ্বব্যাপী এমন অনেক প্রতারণার গল্প উঠে এসেছে বিভিন্ন সিনেমায়৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ (২০০২)
বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার সূচনা হয় ফ্রাঙ্ক আবাগনালের৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সেই রেখেছিলেন প্রতারক হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর৷ পর্যায়ক্রমে পাইলট, এরপর ডাক্তার এবং আইনজীবীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাকে৷ স্টিভেন স্পিলবার্গের মনোমুগ্ধকর সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যান ইউ এভার ফরগিভ মি?’ (২০১৮)
আপনার লেখার হাত যদি ভালো হয়, তাহলে অর্থকষ্ট আপনার কাছে ব্যাপারই না! তেমনই এক দৃষ্টান্ত আর্থার লি ইসরায়েল, যিনি তারকাদের নাম করে ৪০০টি চিঠি লিখেন এবং সেগুলো বিক্রি করে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ৷ এক সময় এফবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লে অপরাধ স্বীকার করে নেন তিনি৷ পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় সিনেমাটি৷ এটি ২০১৯ সালের অস্কারে ৩টি ক্যাটেগরিতে মনোনয়ন পায়৷
জার্মানির হিয়ারোনিমুস কার্ল ফ্রিডরিশ ফ্রাইহার ফন ম্যুনশাউজেন একজন প্রতিভাবান গল্পকথকও ছিলেন৷ গ্রামের বাড়িতে অভিজাত ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন এবং ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিজের গল্প বলতেন৷ কীভাবে তিনি কামানের গোলায় ভর করে বহুদূর পাড়ি দিয়েছেন, এমন গল্প শুনতেও মানুষ আসতো সেখানে৷ ‘মিথ্যাবাদী’ এই ব্যারনের গল্প বিভিন্ন সিনেমায় ঠাঁই পেয়েছে৷ এর একটি ১৯৪৩ সালের ‘ম্যুনশাউজেন’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’ (২০০৯)
চার বার জেল থেকে পালাতে পেরেছেন স্টিভেন জে রাসেল৷ এই প্রতারক তার প্রতিভা দিয়ে বিচারক, ডাক্তার ও মিলিয়নেয়ারসহ বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছিলেন৷ আর এসব করেই ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন৷ কমেডি চলচ্চিত্র ‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’-এ রাসেলের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়৷ কারাগারের সহবন্দি ফিলিপ মরিসের সঙ্গে তার প্রেমের নানা দিকও আছে ওই সিনেমায়৷
ছবি: Imago/EntertainmentPictures
‘অ্যামেরিকান হাসেল’ (২০১৩)
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ১৯৭০ সালে এফবিআইয়ের একটি অভিযানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা৷ একজন প্রতারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযানে৷ সিনেমাটি মোট ১০টি অস্কার নমিনেশন পেলেও পুরস্কার ঘরে তুলতে পারেনি৷
ছবি: imago/Unimedia Images
‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’ (১৯৫৬)
১৯০৬ সালে ক্যাপ্টেনের সাজ নিয়ে ক্যোপেনিকের টাউন হলে যান মুচি ফ্রিডরিশ ভিলহাইম ফোইগট৷ মেয়রকে গ্রেপ্তারের পর ট্রেজারিতে ডাকাতিও করেন তিনি৷ এই ডাকাতিতে তিনি কিছু সৈন্যকেও কাজে লাগাতে পেরেছিলেন৷ সত্য ওই ঘটনার উপর অনেকগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে, তার একটি ‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’৷