সিরিয়ায় ভূমিকম্প: রাজনীতি আগে, না ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য?
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের নানাভাবে সহযোগিতা করে তাদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। তবে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
বিজ্ঞাপন
ভোরের আগে প্রথমবার কম্পনের পর খাওলা তার দুই ভাইকে জাগিয়ে তোলে৷ পরিবারটি দক্ষিণ সিরিয়ার ইদলিবে বসবাস করে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে যা বেশি দূরে না৷
“আমরা অনেক ভয় পাই৷ প্রথমে বুঝতে পারিনি কি ঘটছে,” ৪৭ বছর বয়সি খাওলা ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন৷ “আমার দুই ভাই অসুস্থ ছিল৷ আর বাইরে প্রচণ্ড শীত৷ এই অবস্থায় আমরা কোথায় যেতে পারি?”
তার পরিবার এবং আরও কয়েক প্রতিবেশী পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ঘরের ভিতরেই থাকবে৷ তারা অনেক ভাগ্যবান যে কম্পনে আবার তাদের ভবন কেঁপে উঠলেও তা ভেঙ্গে পড়েনি৷
‘‘এখানকার অনেক বাড়ি কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ অথচ কোন জরুরী বাসস্থানের ব্যবস্থা নাই৷ কোথাও যাওয়া নিরাপদ না,” বলছিলেন খাওলা৷ নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি তার পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি৷
তিনি বলেন, অনেক ঠান্ডা সত্ত্বেও অনেকে তাদের ঘরের বাইরে অবস্থান করেছে, অনেকে তাদের গাড়িতেও অবস্থান নেয়৷
তুর্কি সীমান্তের কাছে অবস্থিত ইদলিব সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নেয়া বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে৷ অনেক বছরের যুদ্ধে এই এলাকার ভবন ও রাস্তাঘাটগুলো ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত৷ অথচ ভূমিকম্পের পর পরই সিরিয়ার বাহিনী সেখানে বিদ্রোহীদের অবস্থানে শেল নিক্ষেপ করে৷
প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও উদ্ধারকারীর অভাবের সেখানকার মানুষই আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে আছে৷
সিরিয়ায় ত্রাণ বিতরণ কঠিন চ্যালেঞ্জ
“বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং এমনকি তার আশেপাশের অঞ্চলে ত্রাণ-সামগ্রী নেয়া বড় ধরনের চ্যলেঞ্জ,” জানান ফ্রাঙ্কফুর্টভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা মেডিকো ইন্টারন্যাশনালের হয়ে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সহায়তায় নিয়োজিত অনিতা স্টারোস্তা৷
আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আলেপ্পোর মত জায়গায় সাহায্য পাঠানোও কঠিন, তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “এর মানে হচ্ছে, এসব এলাকায় আসাদ সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয় করা যাবে না৷“
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, সরকারের মাধ্যমে যে সমস্ত সাহায্যের অর্থ যায় তা সরকারকে অর্থায়নে সহায়তা করে৷ কারণ এসব সহায়তা আসাদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্থাগুলোতে যায়৷ ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে উঠে কোভিড-১৯ মহামারির সময়৷
“এটা বড় ধরনের সমস্যা,’’ স্টারোস্তা জানান৷
হামবুর্গভিত্তিক জিআইজিএ ইনস্টিটিউট অব মিডল ইস্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আন্দ্রে ব্যাংক বলেন, কোভিডের সময় আসাদ সরকার তার পছন্দের এলাকাগুলোতে ভ্যাকসিন বিতরণ করেছে এবং বিরোধীদের বঞ্চিত করে৷
“সাহায্য সহযোগিতার বেলায় আসাদ সরকার কতটা নির্বাচনমূলক এবং কীভাবে আধিপত্য বজায় রাখতে চায় তার প্রমাণ এটা,” ডয়চে ভেলেকে বলেন ব্যাংক৷ “ফলে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আসাদ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারে না৷’’
ধ্বংসস্তূপ সরানোর অসম লড়াইয়ে তুরস্ক-সিরিয়া
চারদিকে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা৷ ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা৷ অথচ নানা প্রতিকূলতায় দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Hussein Malla/AP Photo/picture alliance
ভয়ঙ্কর ভোর
ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর সোয়া চারটা৷ বেশিরভাগ মানুষ তখনও ঘুমন্ত৷ এ সময় সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল৷ মুহূর্তেই ধসে পড়ে হাজারো ভবন৷
ছবি: Omer Yasin Ergin/AA/picture alliance
শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা
ভূমিকম্পের পাশাপাশি অঞ্চলটিতে বয়ে যাচ্ছে তীব্র হিমেল হাওয়া৷ বেঁচে যাওয়া মানুষেরা বাইরে খোলা আকাশের নীচে আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
ধূলিসাৎ হাজারো ভবন
শুধু তুরস্কেই অন্তত দুই হাজার ৮০০ ভবন ধসে পড়েছে, যার একটি কাহরামানমারাসের এই ভবনটি৷
ছবি: IHA/REUTERS
খালি হাতে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে জীবিতদের সন্ধান করতে থাকেন তারা৷ অনেকেই উদ্ধারের যন্ত্রপাতি ছাড়া খালি হাতেই অনুসন্ধান চালান৷
ছবি: DHA
জীবিতের খোঁজে
তুরস্কে ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি কাহরামানমারাস৷ সেখানে ধসে পড়া ভবনের ভিতরে প্রাণের স্পন্দন আছে কিনা তা বোঝার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন একজন৷
ছবি: Cagla Gurdogan/Reuters
অর্ধশত কম্পন
মূল ভূমিকম্পের পর অন্তত অর্ধশত আফটার শক বা পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ এর মধ্যে সোমবার দুপুরে সবচেয়ে ভয়াবহটি ছিল ৭.৫ মাত্রার৷
ছবি: Sertac Kayar/Reuters
বন্দরে আগুন
ভূমিকম্প আঘাত হানা তুর্কি শহর ইস্কেনবেরুনের সমুদ্র বন্দরে মঙ্গলবার আগুন লাগে৷ এতে বহু কন্টেইনার পুড়ে যায়৷ টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়৷ ভূমিকম্পের কারণে একটির উপর আরেকটি কন্টেইনার উঠে আগুন লেগে যায় বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা৷
ছবি: Serdar Ozsoy/Depo Photos via AP/picture alliance
বিধ্বস্ত ইদলিব
ভূমকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ ইদলিব৷ গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়লো দেশটির মানুষ৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ভূমিকম্পের কারণে আরেক দফা চললো ধ্বংসলীলা৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
হতভাগা সিরীয়রা
সিরিয়ার এক স্থানীয় সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় ভয়ে বাড়িঘরেই আশ্রয় নেন ইদলিবেব মানুষ৷ রাশিয়ার বিমান হামলায় আগে থেকেই নাজুক বাড়ি-ঘরগুলো দ্রুতই ধসে পড়ে৷ নতুন ভবনগুলোও রেহাই পায়নি৷ পুরো পরিবারশুদ্ধ মানুষ চাপা পড়েন ভবনের নীচে৷’’
ছবি: Omar Albam
উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকরা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মানুষকে সহায়তার জন্য গঠিত স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন দ্য হোয়াইট হেলমেটস উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করে৷ জারদানায় জীবিত মানুষের খোঁজ করছেন এই দুইজন৷
ছবি: Ahmad al-Atrash/AFP
উদ্ধার হওয়া শিশু
ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়া বাড়িগুলোর ভিতর থেকে অনেক জীবিতদেরও উদ্ধার করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার তুরস্কের হাতায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেন এই কর্মীরা৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
ভেঙে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ভবন
ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও৷ তুরস্কের মাল্টায়া প্রদেশে ১৩ শতকের একটি বিখ্যাত মসজিদ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিকে সোমবার তুষার ঝড়ে কর্মীদের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Volkan Kasik/AA/picture alliance
ইউনেস্কো সাইট
সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত একটি দুর্গের ভিতরে অবস্থিত একটি মসজিদ৷ ভূমিকম্পের আগে ও পরে মিনারের চিত্র দেখুন৷
ছবি: AFP
ন্যাটো ও ইইউর সাহায্য কামনা
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো ও ইইউর কাছে সহায়তা চেয়েছে তুরস্ক৷ তাতে সাড়া দিয়ে ১৭টি দেশ থেকে উদ্ধারকর্মীর ২০টি দল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই এমনকি ইউক্রেনও তুরস্কের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP
২০ হাজার ছাড়াতে পারে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুযায়ী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে৷ কর্তৃপক্ষের মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক-সিরিয়া মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ বিরূপ আবহাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যাচ্ছে না৷
ভূমিকম্প আঘাত হানার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সিরিয়ার সরকার কীভাবে এই দুর্যোগকে তার নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহারের পায়তারা করছে৷
"সিরিয়ান আরব রেড ক্রিসেন্ট সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ৷ ইতিমধ্যে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছে এই ত্রাণ সংস্থা, যেন ভূমিকম্পের পর ত্রাণ সহায়তা কাজ সহজ হয়," ব্যাংক উল্লেখ করেন৷ "দেশটির রাজনৈতিক এলিটরা কীভাবে এই দুর্যোগকে কৌশলে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে৷“
বার্লিনে জার্মান-সিরিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশনের (ভিডিএসএইচ) বোর্ডের ডেপুটি চেয়ার সাফোহ লাবানিহও একই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷ “অতীত অভিজ্ঞতা বলছে সিরিয়ার সরকার তার জনগণকে সহায়তা করতে চায় না৷ সরকার এই ট্র্যাজেডিকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বৈধতা ফিরে পেতে চেষ্টা করছে, "লাবানিহ বলেন৷
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে এই ধরণের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান৷ ইদলিব ও বিরোধীদের নিয়ন্ত্রাধীন অন্যান্য অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ আরও কঠিন৷ ইদলিবে প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে৷
গবেষক ব্যাংক এই মতের পক্ষে৷ দীর্ঘ সীমান্তে ২০টিরও বেশি ক্রসিং রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সিরিয়ার দিক থেকে, এলাকাগুলোর বেশিরভাগই আসাদ সরকারের বিরোধী সিরীয় মিলিশিয়াদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ এরা তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ৷ তাই আসাদ সরকার, রাশিয়া বা ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা না করে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মাধ্যমে কাজ করা যায়৷“
এটা করা গেলে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সেখানে ত্রাণ বিতরণে সক্ষম হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন ব্যাংক৷ তবে এমনটা সম্ভব হচ্ছে না৷ আর তাই খাওলা, তার ভাই ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ পেতে আরও অপেক্ষা করতে৷ ইদলিবে অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই৷
ডায়ানা হোদালি, কারস্টেন নিপ/ একেএ
সিরিয়া- ভুলো না আমায়!
যুদ্ধ যেন ‘প্রকৃত’ সিরিয়াকে ভুলিয়েই দিচ্ছে৷ যে দেশে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকতো, যে দেশের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির নিদর্শন মিলেছে মানবসভ্যতার সূচণালগ্নে- সেই সিরিয়াকে মনে করিয়ে দিতে জার্মানিতে চলছে অন্যরকম এক প্রদর্শনী৷
ছবি: Lutz Jaekel
‘সিরিয়া- বিস্মরণের বিরুদ্ধে’
সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১১ বছর আগে৷ যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার উদার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অতীত আজ প্রায় বিলীন৷ এখন সিরিয়ার কথা বললেই চোখে ভাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশের ছবি৷ কিন্তু সিরিয়া মানে তো শুধু যুদ্ধ আর হানাহানি নয়৷ সিরিয়ার অতীত খুব উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয়৷ সেই অতীতকে মনে করিয়ে দিতেই জার্মানির কোলন শহরে শুরু হয়েছে দারুণ এক প্রদর্শনী৷ প্রদর্শনীর নাম দেয়া হয়েছে, ‘সিরিয়া- এগেইনস্ট ফরগেটিং’৷
ছবি: Dieter Cöllen
প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য
কোলনের রাউটেনট্রাউশ-জোয়েস্ট জাদুঘরে চলমান এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য- সিরিয়া আসলে কেমন দেশ ছিল আর পশ্চিমা বিশ্ব সে বিষয়ে কত কম জানে তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা৷ প্রদর্শনীর কিউরেটর জব্বার আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘ প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধ নিয়েই শুধু কথা না বলা৷ আমরা অন্য এক সিরিয়া দেখাতে চাই এবং জন্মভূমি সম্পর্কে সিরীয়দের মনেও ইতিবাচক স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনতে চাই৷’’
ছবি: Fadi Elias/In-Haus Media 2022
সিরিয়ায় বিরল সিরিয়ার অতীত!
সিরিয়ার প্রায় সব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই ধ্বংস করে দিয়েছে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া অনেক প্রাচীন নিদর্শনই গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা৷ জব্বার আব্দুল্লাহর জন্ম সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমিরায়৷ সেখানে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া যত স্থাপনা ছিল তার অধিকাংশই শেষ করে দিয়েছে আইএস৷ প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ছবিগুলো জার্মানির সংগ্রহশালা থেকে ধার করেছেন আয়োজকেরা৷
ছবি: Lutz Jaekel
ধর্মীয় ঐক্য ছিল
এক সময় সিরিয়ায় সব ধর্মের মানুষই খুব শান্তিতে বাস করতো৷ ছবিতে সিরিয়ার ধর্মীয় ঐতিহ্যের ছোট্ট এক নিদর্শন৷
ছবি: Lutz Jaekel
ইহুদিরাও ছিলেন
২০১৪ সালে সিরিয়া থেকে মিশর হয়ে জার্মানিতে চলে আসা জব্বার আব্দুল্লাহ চান সিরিয়ার উদার ধর্মীয় সংস্কৃতির অতীতের কথা সবাইকে জানাতে৷এক সময় ইহুদিদের জন্যও সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাসের পরিবেশ ছিল সিরিয়ায়৷ কিন্তু এখন মাত্র একটা সিনাগগ আছে সিরিয়ায়৷ ১৯৪৭ সালে ইহুদিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটে৷ ইহুদিরা তারপর থেকে সিরিয়া ছাড়তে শুরু করেন৷ নব্বই দশকের গোড়ার দিকে অনেক ইহুদিই দেশ ছাড়েন৷