সিরিয়া এবং ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত সিরীয় শরণার্থীদের সহায়তার জন্য জার্মানি আরও এক বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বুধবার ব্রাসেলসে এই তথ্য জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার থেকে ব্রাসেলসে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগে সিরিয়ার জন্য ত্রাণ নিয়ে আলোচনা করতে দু'দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হচ্ছে৷ বিভিন্ন দেশের ৮০ জনের বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নিচ্ছেন৷
জার্মানি ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিরিয়ার জন্য সাড়ে চার বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে৷ জার্মান সরকারের বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার পর সিরিয়ার জন্য আরও ৩০০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করা হতে পারে বলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
Maas on Russia’s Syria role
00:34
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শুধুমাত্র সিরিয়াতেই ১৩ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন৷ সিরিয়ার নাগরিকদের একা ছেড়ে দেয়া আমাদের উচিত হবে না৷''
তিনি বলেন, সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে জার্মানি উদ্বিগ্ন৷ পাশাপাশি সিরিয়ার সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় জার্মানি, বলেন হাইকো মাস৷
এদিকে, ব্রাসেলসে যে ত্রাণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে গতবছরের তুলনায় এবার অঙ্গীকারের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো৷ গতবছরের সম্মেলনে মোট ছয় বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ অবশ্য এর মধ্যে মাত্র এখন পর্যন্ত মাত্র ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে বলে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে৷
২০১১ সালে সিরিয়ায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইইউ-র দেশগুলো এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়েছে, যার পরিমাণ ১০.৬ বিলিয়ন ইউরো৷ অবশ্য ব্রাসেলসের ত্রাণ সম্মেলন নিয়ে আলাদা একটি লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফ্রেডেরিকা মোঘেরিনি৷ এই সম্মেলনকে কাজে লাগিয়ে তিনি সিরিয়া বিষয়ে স্থগিত থাকা জেনেভা শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চান, এবং এর মাধ্যমে সমস্যার একটি সমাধান চান তিনি৷
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির অনেক নাগরিক তুরস্ক, লেবানন, জর্ডানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ জার্মানিতেও অনেক সিরীয় নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন৷
জেডএইচ/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)
ভালোবাসার জয় দেখালো সিরীয় যুগল
তাদের শহরে চলছে অনবরত বোমা বর্ষণ৷ তা সত্ত্বেও হোমসের এক জুটি হারতে মানতে রাজি হয়নি৷ বার্তা সংস্থা এএফপি-র আলোকচিত্রির তোলা তাদের কিছু দুর্লভ ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
‘সিরিয়াকে পুর্ননির্মাণ করছে ভালোবাসা’
জাফর মেরাই তোলা ছবিগুলোর চারপাশে চমৎকার কোনো স্থাপনা নেই, নেই সবুজ প্রকৃতির ছোয়া৷ বরং সেগুলো ঘিরে আছে যুদ্ধের বিভীষিকা৷ এসব ছবি মাসখানেক আগে তোলা৷ কিছু ছবি তিনি নিজেই ফেসবুকে দিয়েছেন, কিছু প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি৷ শিরোনাম, ‘সিরিয়াকে পুর্ননির্মাণ করছে ভালোবাসা’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে জীবন এবং ভালোবাসা
১৮-বছর বয়সি নাদা মেহরি এবং ২৭ বছর বয়সি হাসান ইউসুফ তাঁদের বিয়ের ছবি তোলার জন্য বেছে নিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত হোমসের কিছু স্থান৷ আর মেরাই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘জীবন মৃত্যুর চেয়ে শক্তিশালী’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
চারিদিকে যুদ্ধে বিভীষিকা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি, তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক৷ দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস মূলত আক্রান্ত হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সেনাদের দ্বারা৷ কেননা, ২০১২ সালে আসাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল যেসব শহরে, তার একটি হোমস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
সাদা পোশাক, ধূসর পাথরকুঁচি
একসময়ের সমৃদ্ধ শহরটির মাঝখানে বিয়ের সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন নাদা, তাঁর হবু স্বামী যুদ্ধের পোশাকে৷ যুদ্ধবিগ্রহের মাঝের সিরিয়ার তরুণ জুটিদের অবস্থা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিতে৷ পেছনে দেখা যাচ্ছে গোলার আঘাতে জর্জরিত বিভিন্ন ভবন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
অনবরত হামলা
হোমসে এখনো নিয়মিত হামলা চালানো হচ্ছে৷ গত ২৬ জানুয়ারি এক আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২২ জন, আহত শতাধিক৷ সেই হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
হোমস একা নয়
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো আসাদের বাহিনীর পক্ষ নিয়ে সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির রাজধানী দামেস্ক থেকে ১৭০ মাইল দূরে একটি হাসপাতালে রাশিয়ার বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে নয় ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসাদ জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন৷ তবে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আডেল আল-জুবের এক জার্মান পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘‘ভবিষ্যতে বাশার আল-আসাদ বলে কেউ থাকবে না৷....সিরিয়ার দায়িত্ব আর তাঁর কাঁধে থাকবে না৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের মূল বিষয়
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছিল সদ্য সমাপ্ত মিউনিখ সম্মেলনে অন্যতম আলোচনার বিষয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সেই সম্মেলনে বলেন, আমাদের মতে, রাশিয়া অধিকাংশ হামলা চালাচ্ছে সিরিয়ার আইনসম্মত বিরোধী গোষ্ঠীর উপরে৷ রাশিয়া অবশ্য দাবি করছে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে দমনে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
যুদ্ধের সময় ভালোবাসা
কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী মেরাই-এর ছবিতে আবেগপূর্ণ মন্তব্য করেছেন৷ একজন লিখেছেন, ‘নিজেকে ছবির বরের মতো মনে হচ্ছে৷’ আরেকজন লিখেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আপনার এবং সিরিয়ার সব মানুষের সহায় হোন৷ এ সব ছবি গোটা বিশ্বের সঙ্গে শেয়ার করায় ধন্যবাদ৷’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
জীবন বয়ে যাওয়ার প্রমাণ
মেরাই-এর ছবিগুলো ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ অনেকে সেসব ছবি দিয়ে গ্যালারি, এমনকি ভিডিও তৈরি করেছেন৷ একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘মেরাই-এর ছবিগুলো প্রমাণ করছে যুদ্ধের মাঝেও মানুষের জীবন থেমে নেই, একরকম কেটে যাচ্ছে৷’’