‘সিরিয়াকে ভুলে গেলে চলবে না'
১৩ মার্চ ২০১৫আলেপ্পো শহরের সাত বছরের বালিকা সারা বলছে, ‘‘গোটা বিশ্বকে বলো, তারা যেন সিরিয়াকে ভুলে না যায়৷'' দামেস্কের ইউনেস্কো দপ্তরের প্রধান হানা সিংগার একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে মেয়েটির দেখা পান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চান৷ বার্লিনে সংবাদ সম্মেলনে সারার কথা বলতে গিয়ে হানা সিংগার চেখের জল আটকাতে পারছিলেন না৷
গত পাঁচ বছর ধরে মিশরের হানা সিংগার দামেস্কের ইউনিসেফ দপ্তর পরিচালনা করছেন৷ সিরিয়ায় প্রায় ৫৬ লক্ষ শিশু সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ হানা সেই সাহায্যের সমন্বয়ের কাজ করেন৷ তবে এই মুহূর্তে ২০ লক্ষ শিশুর কাছে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই৷ তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত অথবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট' নিয়ন্ত্রিত কোনো এলাকায় রয়েছে৷ সেখানে প্রতিদিন তারা প্রবল হিংসার মোকাবিলা করে চলেছে৷ হানা জানিয়েছেন, আইএস-এর মূল ঘাঁটি রাকা শহরে শিশুদের জোর করে মৃত্যুদণ্ডের ভিডিও দেখানো হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মধ্যযুগ নয়, আজকের সিরিয়ায় এমনটা ঘটছে৷ এই একটি দৃষ্টান্তই দেখা যাচ্ছে, যে শিশুরা কীভাবে নৃশংস যুদ্ধের শিকার হতে পারে৷''
‘সংকটের কুফল শিশুরাই সবচেয়ে বেশি বহন করে
প্রায় ৪ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ কমপক্ষে ১০,০০০ শিশু এখনো পর্যন্ত তার শিকার হয়েছে৷ হাজার হাজার শিশু গুরুতরভাবে আহত৷ হানা সিংগার বলেন, ‘‘একটা গোটা প্রজন্ম এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যাদের সারা জীবন সহায়তার প্রয়োজন পড়বে৷'' এমনকি এই মুহূর্তে সংকট মিটে গেলেও সিরিয়ার সমাজকে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি সামলাতে হবে বলে তিনি মনে করেন৷
আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের উপর সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে৷ হানা সিংগার বলেন, অনেক ক্ষেত্রে শার্প-শুটাররা শিশুদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বা স্কুলকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে৷ সিরিয়ায় ৬৯টি স্কুলের উপর বোমা বা গুলির হামলা চালানো হয়েছে৷ ফলে গোটা দেশে প্রায় ৪,২০০ স্কুল ব্যবহারের উপযোগী হয়ে পড়ছে৷ দেশের অর্ধেক – অর্থাৎ প্রায় ৫০,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা হয় নিহত হয়েছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন৷
প্রাথমিক শিক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা
ইউনিসেফের জন্য স্কুল শিক্ষা অন্যতম প্রধান বিষয়৷ সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির শরণার্থী শিবিরে এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ লক্ষ শিশুর জন্য পাঠ্যবই সহ শিক্ষার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করেছে৷ স্কুলে যাবার অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলে মনে করেন হানা সিংগার৷ সিরিয়ার শিশুদের কাছে এই সুযোগটা ওষুধের মতো কাজ করে৷ শরণার্থী শিবিরে অনেক শিশুর মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে৷ তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে চায়৷
এর পাশাপাশি ইউনিসেফ মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে৷ ২০১৩ সালে পোলিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় ২৯ কোটি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়৷ তবে প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় নেওয়া সিরীয় শিশুদের সাহায্য করতে ইউনিসেফ-এর কমপক্ষে ৯০ লক্ষ ডলার প্রয়োজন৷ এখনো পর্যন্ত এর মাত্র এক সপ্তামাংশের অঙ্গীকার পাওয়া গেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানিই ইউনিসেফ-এর সবচেয়ে বড় দাতা দেশ৷