দাগি সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের কি এ বার ফেরত পাঠাবে জার্মানি? বৃহস্পতিবারের এক বৈঠক ঘিরে নতুন করে এই আলোচনা শুরু হয়েছে জার্মানিতে। তবে এর ফলে সাধারণ সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের কোনও ক্ষতি হবে না বলেই প্রশাসনের বক্তব্য।
বিজ্ঞাপন
জার্মানি কি এ বার সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের দেশে ফেরানো শুরু করবে? বৃহস্পতিবার জার্মানির ১৬টি রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর বৈঠকের পর এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও বাস্তবে তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়নি বলেই বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দাগি সিরিয়ান অপরাধীদের কেবলমাত্র ফেরত পাঠানো হবে বা দেশ থেকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা করা হবে। তবে সাধারণ সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের উপর কোনও চাপ তৈরি করা হবে না।
জার্মান বিদেশ মন্ত্রণালয় অবশ্য আগেই জানিয়েছে, সিরিয়ানদের ফেরত পাঠানোর মতো অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। কারণ সিরিয়ার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। ফেরত পাঠালে উদ্বাস্তুদের জীবনসংশয় হতে পারে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর জার্মান মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন,সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানো হবে না, এ হেন সিদ্ধান্তের কোনও পরিবর্তন হয়নি। সে কথা তাঁরা বলছেনও না। তাঁদের কেবল বক্তব্য দাগি অপরাধীদের নিয়ে।
‘আঙ্কের’ অভিবাসী ট্রানজিট সেন্টার খুলল বাভেরিয়া
অস্ট্রিয়া সীমান্ত দিয়ে জার্মানিতে প্রবেশ করা অভিবাসীদের জন্য প্রথম বিতর্কিত ট্রানজিট সেন্টার চালু করেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় বাভেরিয়া প্রদেশ৷ আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
বাভেরিয়ায় প্রথম ট্রানজিট সেন্টার
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের অভিবাসন বিষয়ক মহাপরিকল্পনার অংশ এসব সেন্টার৷ আশ্রয়প্রার্থীকে এদেশে থাকতে দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের এসব কেন্দ্রে রাখার পরিকল্পনা থেকে এগুলো করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন
বাভেরিয়া মোট সাতটি ‘আঙ্কের’ সেন্টার চালু করবে৷ প্রতিটিতে এক থেকে দেড় হাজার শরণার্থীকে রাখা যাবে৷ জার্মান শব্দ ‘আনকুন্ফট’, এনশাইডুং ও রুকফুরুং (পৌঁছানো, সিদ্ধান্ত, ফেরত) থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
বিচ্ছিন্নতার সতর্কবার্তা
সেন্টারগুলোকে বিতাড়ন শিবির আখ্যায়িত করে উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন চার্চ গ্রুপ, শরণার্থীদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার কর্মী এবং বিরোধী দলগুলো৷ এর মধ্য দিয়ে অভিবাসী কমিউনিটিগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে সতর্ক করেছেন তারা৷ বেসরকারি সংস্থা সেইভ দ্য চিলেড্রন বলছে, এসব সেন্টার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দুশ্চিন্তা এবং তাদের ওপর বলপ্রয়োগের জায়গা হবে বলে সেগুলো শিশুদের জন্য সহায়ক হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
সমঝোতার ফসল
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের শেষ মুহূর্তের রাজনৈতিক সমঝোতার ফল হিসেবে এসেছে এসব সেন্টার৷ অভিবাসীদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার সেহোফারের প্রাথমিক পরিকল্পনা বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছিল, যাতে ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি, তাদের বাভেরিয়ায় সহযোগী দল সিএসইউ ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোট সরকার উৎখাতের উপক্রম হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
জার্মানিতে উৎসাহে ভাটা
এসব সেন্টার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে হলেও এগুলোর দায়দায়িত্ব মূলত রাজ্যগুলোর ওপর৷ বাভেরিয়া প্রথম এই উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে আগামী অক্টোবরে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের লড়াইয়ে নামতে হবে সেহোফারের রক্ষণশীল সিএসইউকে৷ তবে অন্য রাজ্যগুলোর কতগুলো মাইগ্রেন্ট ট্রান্সফার সেন্টার তৈরিতে সময় নিচ্ছে, আর অন্যগুলো এটা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
5 ছবি1 | 5
তবে প্রশ্ন উঠছে মুখে বললেও বাস্তবে কি দাগি অপরাধীদের খুঁজে বার করে ফেরত পাঠানো কি সম্ভব হবে? সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে জার্মানির এই মুহূর্তে কার্যত কোনও সম্পর্ক নেই। কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইলে জার্মান প্রশাসন কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে?
জার্মান বিদেশ মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, সিরিয়া থেকে যাঁরা পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হলে প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে। কারণ সিরিয়ার সরকার তাঁদের বিরোধী পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে মেরে দিতে পারে।
উদ্বাস্তু সমস্যা এখন গোটা ইউরোপেই আলোচিত বিষয়। সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের নিয়ে কী করা উচিত, তা নিয়ে ইউরোপের নানা দেশের নানা মত। জার্মানি অবশ্য বরাবরই উদ্বাস্তুদের প্রতি মানবিকতা দেখিয়েছে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যখন দক্ষিণপন্থী শক্তি ক্রমশ ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, তখন উদ্বাস্তুদের নিয়ে জার্মানি কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে নানা মহলে জল্পনা চলছে। তারই মধ্যে বৃহস্পতিবারের বৈঠক ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।