দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ শেষে ২০১১ সালে সুদান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল দক্ষিণ সুদান৷ কিন্তু তারপরও গৃহযুদ্ধ তার পিছু ছাড়েনি৷
বিজ্ঞাপন
স্বাধীন হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের মধ্যে বিবাদ দেখা দিলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়৷ ঐসময় প্রেসিডেন্ট কির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাচারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনেছিলেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ব্রিটেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণা বলছে, দক্ষিণ সুদানের গৃহযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে তিন লক্ষ ৮২ হাজার ৯০০৷ এদের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের শিকার হয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা ছাড়াও, সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় যাঁরা মারা গেছেন, তারাও আছেন৷
শান্তি চুক্তি হলেও ঘরে ফিরছেন না তাঁরা
দক্ষিণ সুদানের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সম্প্রতি একটি শান্তি চুক্তি সই হয়েছে৷ তবুও ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছেন না দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দারা৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
নতুন দেশ
২০১১ সালে সুদান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানের যাত্রা শুরু হয়৷ কিন্তু মাত্র দুই বছর পরই দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও তখনকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে বিবাদের পর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়৷
ছবি: Reuters
শান্তিচুক্তি
সম্প্রতি সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়েছে৷ গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/M. Hjaj
তবে ভয় কাটেনি
দক্ষিণ সুদানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মালাকাল৷ গৃহযুদ্ধের কারণে সেখানকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে শহরের কাছে স্থাপিত জাতিসংঘের শিবিরে বাস করছেন৷ শান্তিচুক্তি হলেও তারা এখনো বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
মৃত্যুর ভয়
জোসেফিন আদিমিস নামের এক নারী তাঁর পরিবারের আট সদস্যের সঙ্গে জাতিসংঘের ঐ শিবিরে থাকেন৷ তিনি বলছেন, চুক্তি হলেও তিনি এখনো ফিরতে চান না, কারণ, তাঁর আশংকা কেউ তাঁর বাড়ি দখল করে আছে৷ ফলে বাড়িতে গেলে তারা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
মালাকালে যুদ্ধ
গৃহযুদ্ধের সময় এলাকাটি একেকবার এক পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ ফলে শহরটির প্রায় পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Lynch
বসবাসের অনুপযুক্ত
কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে শহরের অবকাঠামো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে৷ যেমন, স্কুলের এই শ্রেণিকক্ষটি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
ব্যস্ততা নেই
মালাকাল একসময় ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল৷ সেখান থেকে সুদানে মালপত্র রপ্তানি করা হতো৷ কিন্তু যুদ্ধ সেই ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে৷ এখন জাতিসংঘের শিবিরের কাছে ব্যস্ত বাজার গড়ে উঠেছে৷ ফলে নীল নদের মাছ মালাকালে না গিয়ে জাতিসংঘের বাজারেই যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উৎসাহ
দেশটির আপার নীল অঞ্চলের তথ্যমন্ত্রী ঘরছাড়া মানুষদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন৷ তিনি তাঁদের বলছেন, মালাকালে এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে৷ ফলে সেখানকার সবকিছু ঠিকঠাক চলছে বলে দাবি করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
8 ছবি1 | 8
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের সংখ্যা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আটেনি ওয়েক আটেনি বলেছেন, সরকারি তথ্য দেখার পর তিনি গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে মন্তব্য করবেন৷
এদিকে, দক্ষিণ সুদানে নিহতের সংখ্যা ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় চলে আসা গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যার চেয়ে বেশি৷ কারণ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তিন লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়৷
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও ‘ইউএস ইন্সটিটিউট অফ পিস’ এর যৌথ উদ্যোগে ‘লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাটি পরিচালনা করেছে৷ মঙ্গলবার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়৷
নিহতের সংখ্যা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার করা ২২৭টি জরিপ বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে৷
গবেষকরা বলছেন, তাদের পাওয়া তথ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, দক্ষিণ সুদানে ত্রাণ কার্যক্রম আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং সেখানকার সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷
অবশ্য সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট কির ও বিদ্রোহী নেতা মাচারের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সই হয়েছে৷ তবে সেটি কতদিন কার্যকর থাকবে তা বলা মুশকিল৷ কারণ, এর আগে ২০১৫ সালে সই হওয়া একটি শান্তি চুক্তি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ভেঙে গিয়েছিল৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
কোন কোন দেশে রয়েছে শিশু যোদ্ধা
পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় চলছে সংঘর্ষ৷ আর এসব সংঘর্ষে শিশুরা যে কেবল সহিংসতার শিকার হচ্ছে তা নয়, তাদের হাতেও উঠছে হাতিয়ার৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব দেশের কথা৷
ছবি: Guillaume Briquet/AFP/Getty Images
ভারত
ছত্তিশগড়ের মতো মাওবাদীর প্রভাব আছে এমন এলাকাগুলোতে অনেক শিশুর হাতে বন্দুক তুলে দেয়া হয়েছে৷ পুলিশের সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষে বেশ কিছু শিশু নিহতও হয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে তালিবানসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন শিশুদের যুদ্ধে শামিল করে৷ বিশেষ করে এদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এমনকি আফগান পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে শিশুদের পুলিশে ভর্তি করানোর৷
ছবি: picture alliance/Tone Koene
মিয়ানমার
মিয়ানমারে বহু বছর আগে থেকে শিশুদের জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করিয়ে দেয়ার চল রয়েছে এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় লড়াইয়ে পাঠানো হয় তাদের৷ এদের মধ্যে ১১ বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Kittiwongsakul
মধ্য আফ্রিকা
মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে ১২ বছরের শিশুদের বিভিন্ন বিদ্রোহী দলে বন্দুকের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2012-0881/Sokol
চাদ
সেই দেশে কেবল বিদ্রোহী দলগুলোই নয়, সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠনেও শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালে সরকার সেনাবাহিনীতে শিশুদের ভর্তি না করার বিষয়ে সরকার এক সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2010-1152/Asselin
কলম্বিয়া
দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দেশটিতে সম্প্রতি গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে৷ কিন্তু এর আগে ফার্ক বিদ্রোহীরা শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিত৷
ছবি: AP
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গো
যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপ বলছে, এক সময় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গোয় ৩০ হাজার কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন গ্রুপের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিত৷ এমনকি যৌনদাসী হিসেবেও কিশোরীদের ব্যবহার করত এসব গোষ্ঠী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
ইরাক
আল কায়েদা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শিশুদের কেবল যোদ্ধা হিসেবেই নয়, গুপ্তচর হিসেবেও ব্যবহার করে৷ এছাড়া আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সোমালিয়া
জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব ১০ বছরের শিশুদেরও জোর করে তাদের দলের যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলে৷ বেশিরভাগ সময়ই শিশুদের স্কুল বা বাড়ি থেকে অপহরণ করে দলে নেয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Abdi Warsameh
দক্ষিণ সুদান
২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পর শিশুদের সেনাবাহিনীতে ঢোকানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ তারপরও বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী শিশুদের ব্যবহার করছে৷