দু’দিন আগেই সহযোদ্ধাদের প্রতি প্রতিপক্ষের পায়ের নীচের মাটি কাঁপিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ইসলামিক স্টের-এর (আইএস) এক মুখপাত্র৷ বৃহস্পতিবারই হামলা এবং সে হামলায় দু’টি শহরে মারা গেছে অন্তত ৮৫ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিজ্ঞাপন
ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর মুখপাত্র আবু মোহাম্মদ আল-আদনানি ঠিক দু'দিন আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, চলমান যুদ্ধে তারা কিছু খণ্ডযুদ্ধে হেরে যেতে পারেন৷ তবে পাশাপাশি এ কথাও বলেছিলেন, এমন হারের মাধ্যমে কখনোই তাদের সার্বিক পরাজয় সূচিত হবে না৷ সতীর্থদের প্রতি পবিত্র রমজান মাসেই প্রতিপক্ষের ‘পায়ের নীচের মাটি কাঁপিয়ে দেয়া'-র আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি৷
বৃহস্পতিবার সিরিয়ার হাসাকেহ ও কোবানি শহরে যুগপৎ হামলা চালায় আইএস৷ উত্তরাঞ্চলের শহর হাসাকেহর একাংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ শহরের দুই অংশে এতদিন কুর্দি এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
গত জানুয়ারিতে সিরিয়ার আরেক শহর কোবানি থেকে আইএস জঙ্গিদের বিতাড়িত করেছিল কুর্দিরা৷ বৃহস্পতিবার সেই শহরেও ঢুকে পড়ে আইএস৷ কুর্দিশ পিপলস প্রটেকশন ইউনিট ওয়াইপিজি-র এক মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, সরাসরি যুদ্ধ করে আইএস জঙ্গিরা কোবানিতে প্রবেশ করেনি৷ তিনি জানান, জঙ্গিরা সিরীয় বিদ্রোহীদের পোশাক পরে এবং তাদের পতাকা হাতে নিয়ে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছে৷ শহরে প্রবেশ করে প্রচণ্ড হামলা শুরু করে আইএস৷ এক প্রত্যক্ষদর্শীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে কিছু ভবনের দখল নিয়ে নিলেও তাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে কুর্দিরা৷ নিজেদের রক্ষা করতে আইএস জঙ্গিরা সাধারণ মানুষকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
ব্রিটেন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, কোবানিতে ৩৫ জন মারা গেছে৷ অন্যদিকে হাসাকেহ-তে নিহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন৷