এক মার্কিন বিমানবাহী রণতরি সম্ভবত এক সপ্তাহের মধ্যেই কোরীয় উপদ্বীপের কাছেই অবস্থান নিতে চলেছে৷ উত্তর কোরিয়া তার ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে নানা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
ফলে উত্তেজনার পারদ চড়ছে৷ এই অবস্থায় হামলার শিকার হলে উত্তর কোরিয়া কী করে বসবে, তা অনুমান করা কঠিন৷ এই অবস্থায় প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া আশা করছে, এমন হামলা হলে ওয়াশিংটন আগেভাগেই তাদের সতর্ক করে দেবে৷
চীনও তার দোরগোড়ায় এমন সামরিক উত্তেজনা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় ভুগছে৷ এই উত্তেজনা কমাতে শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র চাইছে সে দেশ৷ তারই অঙ্গ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি বাতিল করার ডাক দিয়েছে বেইজিং৷ রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট পত্রিকা ‘গ্লোবাল টাইমস'-এর এক সম্পাদকীয়তে উত্তর কোরিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, যে মুহূর্তে চীনের পরামর্শ মেনে সে দেশ পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করবে, তখন থেকেই চীন পরমাণু অস্ত্র-মুক্ত এক কোরীয় উপদ্বীপের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্রিয় হয়ে উঠবে৷
এমন পরিস্থিতিতে জাপান সরাসরি উত্তর কোরিয়ার হামলার শিকার হবে বলে আশঙ্কা করছে৷ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সংসদে বলেছেন, পিয়ং ইয়ং ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে জাপানের উপর সারিন নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করতে পারে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া কোনো রকম প্ররোচণা করলে তা সহ্য করা হবে না৷ তবে মার্কিন কর্মকর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন, আপাতত আরও কড়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷
উত্তর কোরিয়া এই পরিস্থিতিতেও আস্ফালন চালিয়ে যাচ্ছে৷ পিয়ংইয়ংয়ে কর্মরত বিদেশি সাংবাদিকদের জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সবচেয়ে বড় উৎসবের এক ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা'-র জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ তবে সেটি ছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে নতুন এক রাস্তার উদ্বোধন অনুষ্ঠান৷ এ দিন আরও কোনো বড় ঘটনা ঘটবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ সে দেশের নেতা কিম জং উন জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া যে কোনো রকম যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত৷ তিনি সম্প্রতি ‘স্পেশাল ফোর্সেস' বাহিনীর একটি মহড়াও পরিদর্শন করেছেন৷
বিশেষজ্ঞদের অনেক পূর্বাভাষ ভুল প্রমাণ করে এখনো টিকে আছে কিম জং উন-এর স্বৈরাচারী শাসনযন্ত্র৷ শুধু তাই নয়, একের পর এক সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ এই সাফল্যের রহস্য কী?
ছবি: Reuters/KCNAকোনো ব্যক্তিকে সামান্যতম হুমকি মনে করলেই পথের কাঁটা হিসেবে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে পিছপা হন না কিম জং উন৷ সম্প্রতি তাঁর সৎ-ভাইকে যেভাবে মালয়েশিয়ায় খুন করা হয়েছে, তার পেছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এর আগেও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashiনিজের পারিবারিক শাসনতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখতে ঘরে-বাইরে আস্ফালন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর কিম জং উন৷ ঘরের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বাইরের জগতকে ক্ষেপণাস্ত্র ও আণবিক অস্ত্র দেখিয়ে ঠেকিয়ে রাখার নীতি অনুসরণ করে চলেছেন ‘মহান নেতা’৷ সেই কৌশল কাজ করছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: Reuters/KCNAউত্তর কোরিয়ার অনেক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিফল হয়েছে৷ কিন্তু একের পর এক প্রচেষ্টা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার উপর সামরিক হামলার কথাও এতকাল ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Jeপ্রশ্ন ওঠে, কার্যত একঘরে হয়ে থাকা একটি দেশ কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে? সেই ১৯৫০-এর দশকের মার্কিন, রুশ বা চিনা প্রযুক্তির ভিত্তিতেই উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ তাই সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে সাইবার হামলা চালানোরও কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kcnaআন্তর্জাতিক স্তরে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশ উত্তর কোরিয়া সাধারণ সীমান্তসহ একাধিক কারণে চীনের উপর নির্ভরশীল৷ তবে পিয়ংইয়ং ও বেইজিং-এর মধ্যে খোলাখুলি মতবিরোধ এখন আর বিরল ঘটনা নয়৷ এমন অবস্থা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতার স্বার্থে চীন সে দেশের প্রতি সংযম দেখিয়ে চলেছে এবং অন্যান্য দেশকেও সেই পরামর্শ দিচ্ছে৷
ছবি: MARK RALSTON/AFP/Getty Imagesউত্তর কোরিয়ার উপর প্রভাব কমে যাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলিও আর চিনের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই চীনের দোরগড়ায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ফলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে চিনের নিজস্ব স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Department of Defense/Missile Defense Agency এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)