প্রসঙ্গ সিরিয়া
২ নভেম্বর ২০১২প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রশাসনের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস ধরে লড়াই করে সিরিয়ার বিরোধীরা কিছুটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে৷ একে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের অভাবের ফলে দেশে-বিদেশে তাদের দুর্বলতা গোপন নেই৷ সিরিয়ার বিরোধীদের প্রধান গোষ্ঠী ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল'ও সব পক্ষের সমর্থন পাচ্ছে না৷ মূলত নির্বাসিত বিক্ষুব্ধদের এই জোটের প্রতি সিরিয়া ভিত্তিক বিদ্রোহীদের মনোভাব তেমন ইতিবাচক নয়৷ তার উপর বিদেশ থেকে যে মাত্রায় সহায়তা আশা করা হয়েছিল, বিদ্রোহীরা তা পাচ্ছে না৷ এমন অচলাবস্থা আরও কতদিন চলবে, তাও স্পষ্ট নয়৷
এই অবস্থায় মার্কিন প্রশাসন সক্রিয়ভাবে সিরিয়ার বিরোধীদের সঙ্ঘবদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন এসএনসি'র কাজে হতাশা প্রকাশ করে নতুন এক সংগঠন গঠনের আহ্বান জানান, যেখানে সিরিয়ার ভিতরে যারা আসাদ প্রশাসনের বিরোধিতা করছে, তাদেরও অন্তর্গত করা যায়৷ যারা মাঠ পর্যায়ে আসাদের বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে, তাদের প্রতিনিধিত্বের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন ক্লিন্টন৷ তাছাড়া তিনি মনে করেন, কট্টর ইসলামপন্থীরা যাতে সিরিয়ার বিপ্লব বেদখল করে না নেয়, তার দিকেও নজর রাখতে হবে৷
তাতে অবশ্য ক্ষুব্ধ বিরোধীদের প্রধান গোষ্ঠী ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল'৷ শুক্রবার তারা অভিযোগ করেছে যে, ওয়াশিংটন সিরিয়ার বিপ্লবকে খাটো করে দেখছে৷ কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের দুই দিনব্যাপী আলোচনার আগে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে তারা৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল'কে পাশ কাটিয়ে যাওয়া বা তার বদলে নতুন জোট তৈরি করার প্রচেষ্টার অর্থই হলো সিরিয়ার বিপ্লবকে অবমাননা করা৷ বিভাজনের এই বীজ বপন করার পরিণাম ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেছে এসএনসি৷ আসাদ বিরোধী সব শক্তি এসএনসি'তে স্থান পাচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার জবাবে সংগঠন বলেছে, শুরুতে ২৮০ জন সদস্য ছিল ঠিকই৷ কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২০তে৷ তাদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মাঠ পর্যায়ে লড়াই করছে৷ প্রায় ১৫ শতাংশ সদস্য নারী৷ বৃহস্পতিবার এসএনসি জানিয়েছে, তারা প্রায় ৪০ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে৷ লিবিয়া, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সাহায্য করছে৷
বিরোধীদের নতুন করে সংঘবদ্ধ করার এই মার্কিন প্রচেষ্টা সম্পর্কে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া৷ রুশ উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী গেনাদি গাতিলভ বলেছেন, সিরিয়ার পরবর্তী নেতৃত্ব স্থির করার এই উদ্যোগ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাঁর মতে, সিরিয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কে গত জুন মাসে জেনিভায় যে আলোচনা হয়েছে, ওয়াশিংটনের এই উদ্যোগ তা অমান্য করছে৷
এদিকে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে৷ আসাদ বাহিনী দেশের উত্তরে সারাকেব শহর থেকে সরে গেছে৷ ফলে উত্তরাঞ্চলে তাদের উপস্থিতি কার্যত আর রইলো না বলা চলে৷ ১৯ মাস ধরে চলে আসা সংগ্রামের পর এই অঞ্চলের উপর বিদ্রোহীদের কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে৷
এসবি/ডিজি (এপি, এফপি, রয়টার্স)