জাতিসংঘের উদ্যোগে সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া তিন দফা শান্তি আলোচনা সফল না হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন মোহাম্মদ আলুশ৷ তিনি সিরিয়ার প্রধান বিরোধী গোষ্ঠী এইচএনসি-র প্রধান ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার সৌদি সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আর্মি অফ ইসলাম' এর সদস্য আলুশ৷ আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশ নেয়ার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাঁকে ‘হাই নেগোসিয়েশনস কমিটি' (এইচএনসি)-র প্রধান করা হয়েছিল৷ জাতিসংঘের উদ্যোগে হয়ে যাওয়া তিন দফা শান্তি আলোচনায় আলুশ অংশ নিয়েছেন৷ কিন্তু এসব আলোচনা ‘অসফল' হওয়ায় রবিবার পদত্যাগ করেন তিনি৷ টুইটারে আলুশ লিখেছেন, ‘‘সিরীয় সরকারের একগুঁয়েমি ও সিরিয়ার সাধারণ জনগণের উপর তাদের প্রতিনিয়ত বোমা বর্ষণের কারণে তিন দফা আলোচনা অসফল হয়েছে৷'' এছাড়া অবরোধ তুলে নেয়া, সিরিয়ায় সাহায্য পাঠানো ও বন্দি মুক্তির মতো বিষয়গুলোতে সিরিয়ার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অক্ষমতারও সমালোচনা করেন তিনি৷ আলুশ বলেন, ‘‘একের পর এক আলোচনা সিরিয়ার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কোনো কাজে আসছে না৷''
মেয়ের ক্যানভাসে যুদ্ধের বিভীষিকা
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
7 ছবি1 | 7
উল্লেখ্য, তিন দফা আলোচনা শেষে চলতি মাসের শেষে আরও এক দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সিরিয়ায় জাতিসংঘের শান্তি দূত স্টেফান ডি মিস্টুরা বৃহস্পতিবার জানান, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷
সিরিয়ায় গত পাঁচ বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে একটি রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ এই শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু বিরোধী ও সরকারপক্ষ তাদের দাবিতে অনড় থাকায় আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ বিরোধী পক্ষের দাবি, শান্তি চুক্তিতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ তবে সরকার পক্ষের আলোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না৷
সিরিয়ার যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দুই লক্ষ ৮০ হাজার জন৷ গৃহহীণ হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
সিরিয়ার সমস্যা সমাধানের উপায় কী? জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...