জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়ায় জার্মান সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিলেন৷ সৌদি আরব সহ আঞ্চলিক ইসলামি দেশগুলিকেই আইএস দমনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় দেখতে চান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
আপাতত আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করে আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি৷ তবে তাদের পুরোপুরি পরাস্ত করতে স্থলবাহিনীর প্রয়োজন, এ নিয়ে আর তেমন কোনো সন্দেহ নেই৷ আপাতত কুর্দি সহ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ তাদের আরও শক্তিশালী করে তোলার উপর জোর দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ যেমন জার্মানি ইরাকের উত্তরে কুর্দি বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে৷ কিন্তু নিজস্ব সৈন্য পাঠিয়ে আইএস দমন করার পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে না৷ এমন সিদ্ধান্ত আইএস-এর অনুকূলে যাবে বলেও মনে করছে অনেক মহল৷
জার্মানিও আন্তর্জাতিক উদ্যোগের আওতায় সিরিয়ায় চলমান সামরিক অভিযানে অংশ নিচ্ছে৷ সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধানসূত্র খোঁজার কূটনৈতিক উদ্যোগেও জার্মানি যথেষ্ট সক্রিয়৷
কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার সিরিয়ায় জার্মান সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন৷
সে ক্ষেত্রে সুদূর সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে আদৌ অংশ নেবার প্রয়োজন কী? জার্মানির ফুংকে মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্টাইনমায়ার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জার্মানির সীমান্তে থেমে থাকছে না৷ অতএব দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ার জো নেই৷ হাতপা ঝেড়ে ফেললে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধও নিজে থেকে বন্ধ হবে না৷
আইএস-এর তাণ্ডব বন্ধ করতে আঞ্চলিক ইসলামি দেশগুলিকেই মূল ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করেন স্টাইনমায়ার৷ বিশেষ করে সৌদি আরবকে এই উদ্যোগে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চান তিনি৷ উল্লেখ্য, আইসিস সহ সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে সৌদি আরব এরই মধ্যে নিজস্ব এক জোট গঠন করেছে বলে দাবি করছে৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷