সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রচুর বেসামরিক মানুষও মারা গেছেন। এই একাডেমিতে একটি ব্য়াচের শিক্ষা-শেষের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে তাই শিক্ষাপ্রাপ্তদের পরিবারের মানুষরাও ছিলেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হিউম্যান রাইটস অবসারভেটারি জানিয়েছে, ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ জন বেসামরিক মানুষ। সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮৯ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২৩৯ জন। তবে তারা এটাও জানিয়েছে, তারা যে মৃতের সংখ্যা দিয়েছে তা চূড়ান্ত নয়।
বিস্ফোরক-ভর্তি ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তেনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনায় খুবই বিচলিত বোধ করছেন।
এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে
সরকারি সংবাদসংস্থা সানা জানিয়েছে, মিলিটারি একাডেমির তরফে জানানো হয়েছে, অফিসারদের শিক্ষা-শেষের অনুষ্ঠানে এই হামলা হয়।
এখনো পর্যন্ত কেউ এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি। তবে হিউম্যান রাইটস অবসারভেটারি জানিয়েছে, আইএসের সঙ্গে যুক্ত তাহরির-আল-শাম এই আক্রমণের পিছনে থাকতে পারে।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ''অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর সবাই একাডেমির চত্বরে এসে জড়ো হয়েছিলেন। তখনই ড্রোন-হামলা হয়। কোথা থেকে এই ড্রোন এসেছিল তা বলতে পারব না। হামলার পরেই প্রচুর মানুষের দেহ ওই চত্বরে পড়েছিল।''
সিরিয়ায় অ্যামেরিকার নয়শ জন সেনা আছে। ছবি: Hedil Amir /AA/picture alliance
তুরস্কের ড্রোন ধবংস করলো মার্কিন সেনা
উত্তরপশ্চিম সিরিয়ায় তুরস্কের একটি ড্রোন ধ্বংস করেছে মার্কিন সেনা। এই ড্রোনটি সেনার খুব কাছে এসে গিয়েছিল বলে পেন্টাগন জানিয়েছে। ড্রোনটি রেস্ট্রিকটেড এলাকায় ঢুকে পড়েছিল।
অ্যামেরিকার এফ ১৬ যুদ্ধবিমান এই ড্রোনটিকে ধ্বংস করে। এই ড্রোন থেকে মার্কিন সেনার উপর হামলা চালানো হয়নি। কিন্তু এটা মার্কিন সেনার কাছে এসে যাওয়ায় তা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে আত্মরক্ষার স্বার্থে মার্কিন সেনা এই কাজ করেছে বলে অ্যামেরিকা জানিয়েছে।
সিরিয়ায় নয়শ জন মার্কিন সেনা সদস্য আছে। আইএসের মোকাবিলা করার জন্য তারা সেখানে আছে বলে অ্যামেরিকার দাবি।
যুদ্ধ আর ভূমিকম্পে সিরিয়ায় বাড়ছে পঙ্গুত্ব
এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ অভিশাপ হয়ে এসেছে সিরিয়ার মানুষের জীবনে৷ তার সাথে যুক্ত হয়েছে ভূমিকম্প৷ যুদ্ধে মৃত্যুর মিছিল তো আছেই, বেঁচে থাকাদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে তাকিয়ে আছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে৷
ছবি: WFP/Photolibrary
চোখ আর পা হারালো রুয়া ও দোয়া
সিরিয়ার ইডলিবে শরণার্থী শিবিরের বাইরে খেলাধুলা করছিল ছোট্ট দুই বোন রুয়া আল-হাসান আর দোয়া-আল হাসান৷ শিশু দুটি জানতো না, ক্যাম্পে পদে পদে লুকিয়ে আছে অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার বোমা৷ রাশিয়ার ফেলা এমনই এক অবিস্ফোরিত বোমার হঠাৎ বিস্ফোরণে চোখ হারায় রুয়া৷ আর বোমার আঘাতে পা হারায় ছোট্ট দোয়া৷
ছবি: Omar alBam/DW
বাবাকে হারিয়েছে দুই শিশু
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রুয়া-দুয়ার পরিবার দুইবার বোমা হামলার শিকার হয়৷ প্রথমবার হামলার শিকার হয়ে মারা যান তাদের বাবা৷
ছবি: SANA/REUTERS
দশক ধরে চলা যুদ্ধ
এক সময়ের সমৃদ্ধ দেশ সিরিয়িা এখন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ৷ ২০১১ সালের মার্চে দেশটিতে যে সংকটের সূচনা তার আজও সমাধান হয়নি৷ এর ফল- হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু৷ সেই সাথে আরেক বাস্তবতা নীরবে অভিশাপের মতো দেখা দিয়েছে৷ তা হলো- দেশটিতে ক্রমেই বাড়ছে পঙ্গু হওয়া লোকের সংখ্যা৷
ছবি: Firas Makdesi/REUTERS
চার জনে একজন পঙ্গু!
জাতিসংঘের তথ্যমতে, দেশটির দুই বছরের বেশি বয়সি মোট জনসংখ্যার ২৮ ভাগ কোনো-না-কোনো ধরনের পঙ্গুত্বের শিকার৷ উত্তর সিরিয়ায় এমন মানুষ সবচেয়ে বেশি৷ সেখানে পঙ্গুত্ব বরণ করা লোকের সংখ্যা ৩৭ ভাগ৷ এর বড় কারণ হলো দশক ধরে চলা যুদ্ধ৷
ছবি: Omar Haj Kadour/AFP/Getty Images
৬৭ ভাগ যুদ্ধ-পঙ্গু
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানায়, দেশটিতে পঙ্গু হয়ে পড়া লোকেদের ৬৭ ভাগের পঙ্গুত্বের কারণ হলো যুদ্ধ৷ অর্থাৎ, বোমার আঘাত, গুলির আঘাত বা ক্লাস্টার বোমার বিস্ফোরণে পঙ্গুত্ব বরণ করছে তারা৷
ছবি: AFP
ভূমিকম্প আর পঙ্গুত্ব
একদিকে যুদ্ধের ভয়াবহতা কেড়ে নিচ্ছে জীবন আর পঙ্গু করে দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে৷ আরেকদিকে চলতি বছর ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহাণির পাশাপাশি শত শত মানুষ পঙ্গু হয়েছেন৷ ভূমিকম্পে ঠিক কতজন মানুষ পঙ্গু হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা বলা না গেলেও, হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল, সিরিয়ার প্রধান মিরিয়াম আবোর্দ-হুগোন জানান, ভূমিকম্পের কারণে পঙ্গু হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা কম নয়৷
ছবি: Muhammed Said/AA/picture alliance
কেমন আছে রুয়া, দোয়া
স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সংগ্রাম করছে রুয়া আর দোয়া৷ বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দোয়ার হাত কেটে ফেলা হয়েছে৷ চোখ হারিয়ে বোন রুয়াও সংগ্রাম করছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার৷
ছবি: Omar alBam/DW
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
শারীরিক পঙ্গুত্ব মানে চাকরি পাওয়ায় অনিশ্চয়তা, জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা৷ আছে সামাজিক এবং মানসিক চাপও৷ গবেষক রায়া আল-জাদির বলেন, আরব সংস্কৃতিতে ডিজঅ্যাবিলিটি থাকলে সমাজের চোখে আপনি ‘ব্যার্থ’৷ এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় পঙ্গুত্ব বরণ করা হাজারো মানুষ৷
ছবি: Khalid Mohammed/File/AP/picture-alliance
8 ছবি1 | 8
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই ড্রোনটি তুরস্কের সেনার ছিল না। তবে কাদের ড্রোন ছিল, তারা তা জানায়নি।