‘এক দল বিদেশি যোদ্ধাকে মাঝখানে রেখে’ রাকায় শেষ লড়াই-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী৷ অপরদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট এই জঙ্গিদের নিরাপদ পশ্চাদপসারণের সুযোগ দিতে নারাজ৷
বিজ্ঞাপন
ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের হাত থেকে সিরিয়ার রাকা শহরকে মুক্ত করার যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ অবশিষ্ট আইএস যোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, বলে ধরে নিচ্ছেন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র কর্নেল রায়ান ডিলন৷
ইসলামিক স্টেটের ভয়ংকর আত্মঘাতী গাড়িবোমা
মোসুল শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বিপুল পরিমাণ গাড়িবোমা উদ্ধার করেছে ইরাকি বাহিনী৷ কোনটা ছিল বিস্ফোরকভর্তি, আবার কোনটা প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে৷ সেগুলো এখন সাজিয়ে রাখা হয়েছে শহরটির ফেডারেল পুলিশ দপ্তরের সামনে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
গাড়ি বনাম গাড়িবোমা
সাধারণ মালবাহী ট্রাক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রিবাহী গাড়িও ব্যবহার করা হতো গাড়িবোমা তৈরির জন্য৷ ভেতরের যন্ত্রপাতি ঠিক থেকে বাইরেটাকে মুড়ে দেয়া হতো পুরু ইস্পাতে৷ উদ্দেশ্য ছিল বন্দুকের গুলি থেকে ভেতরের আত্মঘাতী চালককে রক্ষা করা৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
এড়াতে হবে ড্রোন
জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে প্রায়ই চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালাতো মার্কিন সেনারা৷ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই যাতে ধরা না পড়তে হয়, সেজন্য গাড়িগুলোকে রং করা হতো সাধারণ গাড়ির মতো৷ কখনও লাল রং, কখনও সাদা দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো ইস্পাতের আবরণ৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
অস্বাভাবিক গতি
গাড়ির যন্ত্রপাতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে সেগুলোকে দেয়া হতো অস্বাভাবিক গতির সুবিধা৷ পাশাপাশি, বেশিরভাগ গাড়িরই সামনের অংশ এমনভাবে তৈরি করা হতো, যাতে যে কোনো বাধা ভেঙে গাড়িগুলো এগোতে পারে সামনে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
কী ধরনের বিস্ফোরক?
বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ৷ সবচেয়ে বেশি গাড়িতে পাওয়া গেছে ক্লোরিন গ্যাসের উপস্থিতি৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
প্রচণ্ড ধ্বংস ক্ষমতা
ব্যাপক আকারে বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা আছে এই গাড়ি বোমার৷ এক একটি গাড়িতে যে পরিমাণ বিস্ফোরক মজুদ করা যায়, তাতে দুই তিনটে বাড়ি উড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
আরো গাড়িবোমার মজুদ
মোসুল শহরে ইরাকি সেনা যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে স্নাইপার আর গাড়িবোমা হামলাই ছিল আইএস জঙ্গিদের মূল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা৷ ইরাকি বাহিনী আশংকা করছে এখন শহরের বিভিন্ন ভবনের গ্যারেজে বিপুল পরিমাণ গাড়িবোমা থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
গাড়িবোমার প্রদর্শনী!
উদ্ধার করা গাড়িবোমাগুলো রাখা হয়েছে মোসুলে ইরাকি পুলিশের সদরদপ্তরের সামনে৷ যে কেউ চাইলেই দেখে আসতে পারেন ভয়ংকর সেই গাড়িগুলো৷ তবে পুলিশের নিয়মিত পাহারা অবশ্য থাকছেই৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
7 ছবি1 | 7
তিনি জানান, ৪০০ অবধি জঙ্গি এখনও রাকায় অবস্থান করছে, বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ দৃশ্যত তাদের অধিকাংশ রয়েছে রাকার ঐতিহাসিক কেন্দ্রে, যেখানে আইএস তাদের শত্রুদের প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ ও ক্রশবিদ্ধ করত৷
‘‘বিদেশি যোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালাবে, বলে আমরা প্রত্যাশা করছি৷ আইএস যোদ্ধাদের মধ্যে বিদেশি যোদ্ধাদের একটি কট্টর গোষ্ঠী রয়েছে,'' বলেন ডিলন৷ ‘‘কিন্তু গতমাসে আমরা প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচজন আইসিস যোদ্ধাকে আত্মসমর্পণ করতে দেখেছি, যাদের মধ্যে আমিররাও আছে,'' বলে ডিলন মন্তব্য করেন৷ এই আমিররা হলো রাকায় আইএস-এর স্থানীয় নেতৃবর্গ৷
গত জুন মাসে মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) রাকা অবরোধ করে একটি বহুমুখী অভিযান শুরু করে৷ এসডিএফ প্রধানত কুর্দি ও আরব যোদ্ধাদের একটি জোট৷ রাকা অভিযানে এসডিএফ-কে আকাশ থেকে সাহায্য করছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জেট৷
রাকা অবরোধে বেসামরিক ব্যক্তিরা আটক
জাতিসংঘের বিবৃতি অনুযায়ী প্রায় ৮,০০০ বেসামরিক ব্যক্তি রাকায় আটকা পড়ে থাকতে পারেন৷ তাদের ‘মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় রাকা সিভিক কাউন্সিল বা রাকা পৌর পরিষদ আইএস-এর সঙ্গে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছে৷ আইএস-এর পতনের পর রাকার অস্থায়ী প্রশাসন হিসেবে এসডিএফ এই পৌর পরিষদ সৃষ্টি করে৷
ইসলামিক স্টেটের জেলখানার ভেতরটা কেমন?
ইরাকের মসুল শহরকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে অভিযান চলছে৷ এরই মধ্যে একটি জেলখানার সন্ধান পান ইরাকি সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সাধারণ ভবন
বাইরে থেকে দেখে কেউ যেন বুঝতে না পারে সেজন্য শহরের আবাসিক এলাকার এই বাড়িতে জেলখানা স্থাপন করেছিল ইসলামিক স্টেট৷ সম্প্রতি এই কারাগারের সন্ধান পান ইরাকি সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
তবে সব ব্যবস্থা ছিল
শুধু বাইরে থেকে বোঝা যেত না, এই যা৷ কিন্তু জেলখানাটির ব্যবস্থাপনা ছিল সাধারণ কারাগারের মতোই৷ ফলে বন্দিদের সেখানে নেয়ার পর তাদের জামাকাপড় সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে নেয়া হত৷ পরে কোনো বন্দি ছাড়া পেলে তা ফেরত দেয়া হতো৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
যাদের আটক রাখা হত
আইএস-এর হাতে বন্দি ইরাকি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকজনদের ধরে এখানে রাখা হতো৷ স্টিলের এই দরজার পেছনেই ছিল কারাগারের শুরু৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
অভিযানের বয়স আট মাস
মসুল থেকে আইএসকে হটাতে অভিযান চলছে৷ তবে সাধারণ মানুষ বাস করে এমন এলাকায় আইএস সদস্যরা চলে যাওয়ায় অভিযানের গতি কমে গেছে৷ ছবিতে আইএস এর জেলখানার ভেতরে একজন ইরাকি সেনাকে পাহারা দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
বোমা তৈরির সরঞ্জাম
জেলখানার একটি ঘরের মেঝেতে বোমা তৈরির সরঞ্জাম পড়ে রয়েছে৷ কোনো স্থান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আইএস সাধারণ ঐ স্থানে ‘বুবি ট্র্যাপ’, অর্থাৎ এমন কিছু ফেলে যায় যা অন্যদের ক্ষতি করে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
অমুসলিমদের মাংস খাওয়ার পরামর্শ!
যুদ্ধের সময় প্রয়োজন হলে আইএস তার অনুসারীদের অমুসলিমদের মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা
বন্দিদের উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখার জন্য জেলখানার ঘরগুলোতে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা বসিয়েছিল আইএস৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
7 ছবি1 | 7
‘‘দায়েশ-এর হাতে আটক বেসামরিক বাসিন্দাদের (রাকা) শহর পরিত্যাগের শ্রেষ্ঠ উপায় সম্পর্কে রাকা পৌর পরিষদ কথাবার্তা চালাচ্ছে৷ সন্ত্রাসবাদীরা বেসামরিক বাসিন্দাদের একাংশকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে,'' বলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের তরফ থেকে বলা হয়৷ ‘‘রাকা থেকে পলায়নপর ব্যক্তিদের মধ্যে যারা দায়েশ-এর হয়ে লড়াই করেছে, বলে জানা যাবে, তাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে বিচারের জন্য তুলে দেওয়া হবে৷''
এখনও ঝুঁকি
আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহ ও স্থানীয় গোষ্ঠীবর্গের আক্রমণে গত এক বছরে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ক্রমেই আরো ছোট হয়ে এসেছে৷ ইরাকের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী এ বছরের গোড়ায় মোসুলকে মুক্ত করে, যা আইএস-এর বিরুদ্ধে একটি বড় জয় হিসেবে উদযাপিত হয়৷
২০১৪ সালে আইএস ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে অভিযান চালিয়ে শেষমেষ মোসুল দখল করে, যেখানে আইএস নেতা আবু-বকর আল-বাগদাদি ঐতিহাসিক আল-নুরি মসজিদ থেকে ইসলামিক স্টেটের খেলাফত ঘোষণা করেন৷
আইএস তার দখলীকৃত এলাকার একটি লক্ষণীয় অংশ হারালেও, আইএস-এর বিদেশি যোদ্ধাদের একাংশ ইউরোপে প্রত্যাবর্তন করার পর তারা যে ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারে, সে ব্যাপারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন৷