সিরিয়ার সওয়েইদা প্রদেশে সুন্নি বেদুঈন ও দ্রুজ গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের মধ্যে টানা পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬০ জনে৷ দুই গোষ্ঠী নতুন করে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
রবিবার দামেস্ক ও সওয়েইদার মধ্যবর্তী একটি হাইওয়েতে সুন্নি বেদুইন সম্প্রদায়ের সদস্যরা একজন দ্রুজ যুবককে মারধরের ঘটনার পর সংঘর্ষ শুরু হয়৷ছবি: Sam Hariri/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৩৬০ জনে দাঁড়িয়েছে৷ যুদ্ধ পর্যবেক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দিন ধরে চলা সাম্প্রদায়িক রক্তপাতের পর সিরিয়ার সরকারি বাহিনী পুরো সওয়েইদা প্রদেশ ছেড়ে চলে গেছে।
সংঘর্ষের কারণ
রবিবার দামেস্ক ও সওয়েইদার মধ্যবর্তী একটি হাইওয়েতে সুন্নি বেদুইন সম্প্রদায়ের সদস্যরা একজন দ্রুজ যুবককে মারধর ও ছিনতাই করে। এই ঘটনার পর সংঘর্ষ শুরু হয়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুজ যোদ্ধারা বেদুইনদের অপহরণ করে, যা আরও সংঘাতের জন্ম দেয়৷
সরকারি হস্তক্ষেপ
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে সরকার রাজধানী দামেস্ক থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই এলাকায় সৈন্য পাঠায়৷ প্রাথমিকভাবে দ্রুজ যোদ্ধারা সৈন্যদের প্রতিরোধ করলেও পরবর্তীতে তারা অস্ত্র সমর্পণ করে৷ মঙ্গলবার, সরকারি বাহিনী ১৯ জন দ্রুজ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ
দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার দাবি করে ইসরায়েল বুধবার দামেস্ক ও সওয়েইদা অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে আক্রমণ চালায়৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘এই হামলার উদ্দেশ্য দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া৷''
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিরিয়াকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ও দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন৷
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘর্ষ সিরিয়ার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের ফল৷ প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা'র সরকারের পক্ষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে সুরক্ষা দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ৷
জার্মানির হাইনরিশ বল ফাউন্ডেশনের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের প্রধান বেন্তে শেলার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিরিয়ায় অনেক গোষ্ঠী মনে করে তাদের উদ্বেগ বা অধিকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না৷'' অর্থনৈতিক সমস্যা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দাবি মেটানো সরকারের জন্য কঠিন কাজ বলে মনি করেন তিনি৷
এসএসজি/এপিবি (ডিপিএ, এএফপি)
সিরিয়ায় প্রাচীন রোমান নগর পালমিরার ধ্বংসস্তূপ
ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করার কারণে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর স্বীকৃতি পেয়েছে সিরিয়ার রোমান আমলের নগর পালমিরা৷ কিন্তু দশকেরও বেশি সময়ের গৃহযুদ্ধে তছনছ হয়ে গেছে শহরের প্রাচীন স্থাপনাগুলো৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
মন্দিরের কঙ্কাল
ইউনেস্কো ঘোষিত সিরিয়ার ঐতিহাসিক ছয়টি সাইটের একটি পালমিরা শহর৷ দুই হাজার বছরের পুরোনো এই শহরটি প্রাচীন সিল্ক রোডে অবস্থিত৷ গত ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর শহরটিতে এখন প্রাচীন মন্দিরের এমন ধ্বংসস্তূপই চোখে পড়ে৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
পর্যটক শহর
হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে বলে ১৯৮০ সালে শহরটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে ইউনেস্কো৷ ইতিহাসের পথ ধরে প্রাচীন ঐতিহ্যের সন্ধানে সেখানে ভিড় করতেন পর্যটকেরাও৷ ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক শহরটিতে বেড়াতে যেতেন৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
আইএস সন্ত্রাসীদের ধ্বংসযজ্ঞ
গৃহযুদ্ধ শুরুর পর শহরটির দখল নেয় আইএস সন্ত্রাসীরা৷ এরপর সন্ত্রাসীরা সেখানকার ঐতিহাসিক বেল ও বালশামিন মন্দির এবং আর্ক অব ট্রায়াম্পসহ নানা স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলে৷ এই জায়গাগুলোতে ‘মূর্তিপূজা হতো’ বলে তারা এই স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
ক্ষয়ক্ষতি
ধ্বংসযজ্ঞের ফলে প্রাচীন এই শহরটির ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে৷ অবৈধ খনন, ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা, লুটপাট চালানো, ছবি মুছে দেওয়া- সব মিলিয়ে কোনো কিছুই আর আগের মতো নেই৷ সিরিয়ার ঐতিহাসিক স্থাপনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইমান নাবুর মতে, বর্তমানে শহরটির শোকাবহ পরিস্থিতি৷ ঐতিহাসিক দলিলাদি এবং হস্তনির্মিত কারুকার্য হারিয়ে গিয়েছে৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
যেমন ছিল
২০১০ সালের পালমিরার এই ছবিটি দেখে বোঝা যায়, কেমন ছিল সেখানকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ইসলামিক স্টেট শহরের অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়৷
ছবি: Giovanni Ausserhofer/JOKER/picture alliance
ইউনেস্কো সাইট থেকে রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি
শহরটির পাশের একটি পাহাড়ের উপর ১৩ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে নির্মিত দুর্গ ফখর-আল-দিন আল-মাআনি৷ গৃহযুদ্ধের সময় শহরটি প্রথমে আইএস-এর দখলে যায়৷ এরপর দখল নেয় বাশার আল-আসাদের সেনারা৷ সেই সময় এই দুর্গটিতে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হয়৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
পুনর্গঠনে কাজ
২০১৫ সাল থেকে স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে সিরিয়ার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ওপর নজর রাখছিল ইউনেস্কো৷ সেই সময় থেকেই তারা এই জায়গাগুলোকে সুরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছিল৷ কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে জায়গাগুলো পরিদর্শন করতে পারেনি ইউনেস্কো৷ ২০১৯ সালে সংস্থাটি জানায়, ক্ষয়ক্ষতির পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়ার পরই পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা যেতে পারে৷