সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস বা আইসিস) জঙ্গিদের ওপর প্রথমবারের মতো বিমান হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব মিত্ররা৷ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জর্ডান ও বাহরাইনও অভিযানে অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন৷
বিজ্ঞাপন
পেন্টাগনের বিবৃতি
পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র শক্তি কেবল আইএস ঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে না, সেখানকার অন্য জঙ্গি দলগুলো উচ্ছেদেও অভিযান চালাচ্ছে৷'' সব বিমানই সফলভাবে হামলা চালাচ্ছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে৷ বিবৃতিতে জানানো হয় বোমা হামলার সাথে সাথে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী৷
অন্য জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা
মঙ্গলবার সিরিয়ায় অবস্থানরত আল-কায়েদা গ্রুপ আল-নুসরার ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী৷ এই হামলা চালানো হয় পশ্চিমাঞ্চলের আলেপ্পো প্রদেশে৷ এতে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে আটজন বেসামরিক এবং সাতজন জঙ্গি সদস্য বলে দাবি করেছে ব্রিটেন ভিত্তিক সিরিয়া অবজারভেটরি মানবাধিকার সংগঠন৷ জঙ্গি সংগঠন খোরাসান গ্রুপ লক্ষ্য করেও আটটি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্র শক্তিদের মধ্যে জর্ডান হামলায় যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ জর্ডান সরকারের মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর ঘাঁটি নির্মূলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হামলায় যোগ দিয়েছি৷''
যেসব স্থানে হামলা
আইএসআইএল-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে অন্তত ১৪টি বিমান হামলা চালানো হয়েছে৷ তাদের সদরদপ্তর, অস্ত্র মজুদ কারখানা, ট্রাক ও অস্ত্র ভর্তি যানেও হামলা চালানো হয়েছে৷ মোট ৪৭টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চালানো হয়েছেন লোহিত সাগর এবং উত্তর আরব উপসাগর থেকে৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বক্তব্য
এদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে স্বাগত জানিয়েছে৷ মঙ্গলবার তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘এই হামলা প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করবে৷ তাছাড়া আমাদের বিশ্বাস, এ হামলা সিরিয়ার মাটি থেকে ইসলামিক স্টেটকে চিরতরে উৎখাত করবে৷ ''
খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে আইএস
সিরিয়া ও ইরাকের সীমান্তবর্তী একটি বড় এলাকা দখলে নিয়ে সেখানে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে আইএস৷ ইরাকের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷ জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে থামাতে দেশ দুটির সরকার কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ গণহত্যা, শিরশ্ছেদ, ধর্ষণ, অপহরণের মতো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে সংগঠনটি৷