তবে এখনও পর্যন্ত আইএস-এর সঙ্গে লড়াই করা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ইউরোপের দেশগুলোর কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় আটক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর ইউরোপীয় সদস্যদের যার যার দেশে ফেরত নিতে চাপ বাড়াচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷
এখন পর্যন্ত কয়েক শত বিদেশি আইএস যোদ্ধাকে সিরিয়ায় আটক করেছে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ান কুর্দিশ যোদ্ধারা৷ তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত নেয়ার জন্য শনিবার আহ্বান জানিয়েছেন ডোলান্ড ট্রাম্প৷
এক টুইটে তিনি বলেন, ‘‘সিরিয়ায় প্রায় ৮০০ আইএস যোদ্ধাকে আটক করে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে এবং তাদের ফেরত নিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং অন্য ইউরোপীয় মিত্রদের আহ্বান জানাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ খিলাফতের পতন ঘটেছে৷ বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমরা যদি তাদের মুক্তি দিয়ে দেই, তা খুব একটা ভালো কিছু হবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র চায় না তারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ুক, কিন্তু সেটাই হওয়ার ভয় রয়েছে৷ আমরা অনেক কিছু করেছি, অনেক অর্থ ব্যয় করেছি৷ এখন অন্যদের এগিয়ে আসার সময়, যা করার সামর্থ্যও তাদের রয়েছে৷ আমরা খিলাফতের বিরুদ্ধে শতভাগ বিজয়ের পর ফেরত আসছি৷''
বেশ কিছু দেশ থেকে আইএস-এর পক্ষে লড়াই করতে আসা ৮০০ যোদ্ধা, ৬০০ নারী ও ১,২০০ শিশুকে আটক করেছে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটির ফোর্সেস৷
দাড়ি-গোঁফ কেটে পালাচ্ছে আইএস
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর দখল থেকে মসুল মুক্ত হয়েছে আগেই৷ এখন চলছে তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার অভিযান৷ তবে এখন দাড়ি-গোঁফ কেটে মানুষের সাথে মিশে পালাচ্ছে তারা৷ ফলে সাধারণ মানুষকেও পড়তে হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর সন্দেহে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
মোসুল ঘেরাও
প্রতিদিনই মুক্ত হচ্ছে মোসুলের নতুন নতুন এলাকা৷ মুক্ত হচ্ছেন শহরটিতে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সাধারণ ইরাকিরাও৷ কমান্ডাররা বলছেন, এখন হাতে গোনা দু-তিনশ’ আইএস জঙ্গি বিভিন্ন গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিয়ে আছে৷ তারা যাতে পার্শ্ববর্তী সিরিয়ায় পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য শহর ঘেরাও করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
জঙ্গি খুঁজতে ড্রোন
আগের মতো আইএসে প্রকাশ্য কোনো আস্তানা মসুলে আর নেই৷ আজ এ বাড়িতে তো কাল ঐ ভবনে, এমন করেই যুদ্ধ চালাচ্ছে অবশিষ্ট জঙ্গিরা৷ ফলে নির্দিষ্ট করে হামলা চালানো বেশ কষ্টকরই হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর জন্য৷ এই কাজ সহজ করতে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ ড্রোন ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হচ্ছে জঙ্গিদের অবস্থান৷ তারপর আক্রমণ৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
কারা জঙ্গি?
চারপাশ থেকে ঘেরাও হওয়ায় প্রাণে বাঁচতে আইএস জঙ্গিরাও আশ্রয় নিচ্ছে নতুন কৌশলের৷ ইসলামি কায়দা অনুযায়ী দাড়ি-গোঁফ রাখলেও, এখন সবাই ‘ক্লিন শেভড’৷ যতক্ষণ পারছে যুদ্ধ, হেরে যাওয়ার শঙ্কা দেখলে পোশাক পালটে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/A. Saad
নতুন বিপদ আত্মঘাতি নারী
অগ্রসর হতে থাকা ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে আরেক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে আইএস জঙ্গিরা৷ নারী জঙ্গিরা বোমা বেঁধে সাধারণ নারীদের সাথে মিশে যাচ্ছে৷ চেষ্টা চালাচ্ছে ইরাকি বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে হামলা চালানোর৷ গেল এক সপ্তাহে এমন বেশকটি হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/Stringer
সাধারণের বিপদ
দীর্ঘদিন আইএসের নির্যাতনে জরাজীর্ণ অবস্থা, তা থেকে মুক্তির পরও কমছে না সাধারণ মানুষের ঝামেলা৷ সেই কারণটাও আইএস৷ লুকিয়ে থাকা জঙ্গি খুঁজতে গিয়ে সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখছে ইরাকি বাহিনী৷ না থেমে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হচ্ছে তাদের৷ একাধিকবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচয়৷ মাঝে মধ্যেই করা হচ্ছে শরীর তল্লাশি৷ রেহাই পাচ্ছেন না শিশু-বুড়োরাও৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
শিশুদের জন্য সহায়তা
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ৷ জরুরি ওষুধ তো দূরের কথা, একেবারেই সাধারণ ঠান্ডার ওষুধও মসুলবাসীর কাছে ছিলো আকাশের চাঁদ৷ তবে দ্রুতই পালটাচ্ছে এই অবস্থা৷ মুক্ত অঞ্চল এবং জঙ্গি এলাকা থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা পাচ্ছে বিভিন্ন রোগের টিকা৷ সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা থেকে মিলছে জরুরি ত্রাণও৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
6 ছবি1 | 6
তবে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসে যোগ দেয়া নিজদেশের নাগরিকদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ইউরোপের সরকারগুলো৷ আইএস-এর চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হামলার ঘটনার পর জঙ্গিদের দেশে ফেরত আনলে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করছে দেশগুলোর সরকার৷
কিন্তু সিরিয়া থেকে মার্কিনসেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷ ইউরোপীয় আইএস যোদ্ধারা দেশে ফিরে ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছে দেশগুলো৷
কুর্দি যোদ্ধাদের এক মুখপাত্র এ মাসের শুরুতে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, অর্ধশতাধিক জার্মান আইএস যোদ্ধা, নারী ও শিশু তাদের কাছে বন্দি রয়েছে৷
জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিরাপত্তার অভাব ও দামাস্কাসের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় আটক ব্যক্তিদের ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না৷
ফ্রান্স অবশ্য সম্প্রতি সিরিয়ায় আটক ফরাসি আইএস যোদ্ধাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার আভাস দিয়েছে৷