সিরিয়ায় ইউরোপের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তুরস্ক ও রাশিয়াকে সাথে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অঞ্চল গঠন করা যেতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্ক ও রাশিয়াকে সাথে নিয়ে সিরিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অঞ্চল গঠন করার সুপারিশ দিয়েছেন জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রাম্প কারেনবাউয়ার৷ যার মূল লক্ষ্য হবে সন্ত্রাস এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে আবারও লড়াই শুরু করা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে যা সেখানকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন আবারও নিশ্চিত করবে এবং যারা বিতাড়িত হয়েছে তারাও স্বেচ্ছায় ফিরে আসতে পারবে৷''
সুপারিশটি সম্পর্কে জার্মানি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল অবগত আছেন বলেও জানান দেশটির ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দলের এই নেতা৷ তবে যেকোন সিদ্ধান্তই জার্মান মন্ত্রীসভা এবং সংসদ বুন্ডেসটাগের মাধ্যমে নেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি৷
কারেনবাউয়ার বলেন, ‘‘ইউরোপ এখানে শুধু দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না৷ আমাদেরকে অবশ্যই নিজেদের সুপারিশ ও পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে হবে৷''
গত ৯ অক্টোবর সিরিয়ার উত্তর পূর্বের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে কুর্দি বিদ্রোহীদের দমনে অভিযান শুরু করে তুরস্ক৷ এর ফলে সেখানে বন্দী ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে৷ যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে জার্মানি ও ইউরোপ৷
কারেনবাউয়ার বলেন, উত্তরপূর্ব সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ইউরোপ এবং জার্মানির নিরাপত্তা স্বার্থের সঙ্গে জড়িত৷ যে কারণে এই বিষয়ে ইউরোপের একটি শক্ত পদক্ষেপ জরুরি৷ তিনি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অঞ্চল গঠনের আলোচনায় তুরস্ক ও রাশিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী৷ বলেন, কেউ পছন্দ করুক আর না করুক সিরিয়ায় রাশিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্ষ৷ এজন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে সিরিয়া সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷
ম্যাক্সিমিলান কসচিক, অস্টিন ডেভিস, এফএস/ কেএম
সিরিয়ায় কে, কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ মাঝে আইএস-এর কারণে সেই যুদ্ধে বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়েছে৷ কে আসলে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
যুদ্ধ যেন শেষই হচ্ছে না
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে দেশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান৷ এরপর সেই যুদ্ধে একসময় বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়ে৷
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
আসাদের সমর্থক
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ‘সিরিয়ান আরব আর্মি’ বা এসএএ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ আসাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে৷ এছাড়াও ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’সহ আসাদের সমর্থক কয়েকটি বাহিনী এবং রাশিয়া ও ইরান আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Presidency
তুরস্কের ভূমিকা
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ ছিল তুরস্ক৷ এছাড়া আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দিয়ে আসছে দেশটি৷ তবে কুর্দিদের সহায়তা করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, কারণ সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ পিকেকে-র সম্পর্ক রয়েছে বলে তুরস্কের অভিযোগ৷ ১৯৮৪ সাল থেকে তুর্কি সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে আছে পিকেক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
রাশিয়ার ভূমিকা
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রাশিয়া৷ অবশ্য তারও আগে থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছিল দেশটি৷ রাশিয়ার আকাশ হামলায় সিরিয়ার বহু সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ রয়েছে৷ রাশিয়ার কারণে যুদ্ধের ঢেউ এখন আসাদের অনুকূলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২০১৪ সালের শেষ দিকে আইএস-সব অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে লক্ষ্য করে আকাশ হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট৷ জার্মানিসহ প্রায় ৫০টি দেশ রয়েছে সেই জোটে৷ আইএসবিরোধী এই জোটের কারণে সিরিয়ায় আইএস-এর পরাজয় হয়েছে৷ জোটকে সহায়তা করেছে কুর্দি ও আরব মিলিশিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ এসডিএফ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Brandon
বিদ্রোহীদের কথা
‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র মতো নন-জিহাদি গোষ্ঠীগুলো আসাদের পদত্যাগ চাইছে৷ এরপর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনেরও দাবি আছে তাদের৷ তবে বেশ কয়েকটি পরাজয়ের পর এই সংগঠনের অনেক সদস্য কট্টরপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters
ইরানের সমর্থন
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দামেস্ককে কৌশলগত ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান৷ ইরানের সমর্থনপ্রাপ্ত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হেজবোল্লাহও আসাদ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে৷