ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডর লিবারমান বৃহস্পতিবার জানান, তাঁর দেশ গতরাতে সিরিয়ায় থাকা ‘ইরানের প্রায় সব কাঠামো’-তে আঘাত হেনেছে৷ এটি ইরানের হামলার জবাব বলে দাবি তাঁর৷
বিজ্ঞাপন
ইরানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘তাদের মনে রাখতে হবে, যদি তারা আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করে, আমরা তাদের উপর ঝড় বইয়ে দিব৷ আশা করছি, এই অধ্যায় শেষ হয়েছে এবং সবাই বুঝতে পেরেছে৷''
বুধবার দিবাগত মধ্যরাতের পর ইরান ইসরায়েল অধিকৃত গোলান হাইটস লক্ষ্য করে ২০টি রকেট ছোঁড়ে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের৷ তবে সেগুলোর একটিও গোলান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি৷ এর মধ্যে চারটি রকেট ‘আয়রন ডোম' আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী৷
ইসরায়েলের স্বাধীনতার ৭০ বছর: প্রতিশ্রুত ভূমি, নাকি শত্রুভূমি?
হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সত্তর বছর আগে ঠিক এ সময়েই ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল৷ ইউরোপে গণহত্যার শিকারের পর ইহুদিদের জন্য সেই রাষ্ট্র গঠন ঘুরে দাঁড়ানোর একটি পদক্ষেপ৷ দেখা যাক ইসরায়েলের ৭০ বছর...
ছবি: picture-alliance/dpa/akg-images
বহুল প্রতীক্ষিত জয়
১৯৪৮ সালের মে মাসের এই ছবিতে ডেভিড বেন-গুরিয়ানকে ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে দেখা যাচ্ছে৷ এসময় তিনি বলছেন, এ পুণ্যভূমির প্রতি মানুষের সবসময় আকুতি ছিল এবং কখনোই তাঁরা রাজনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এই ভূমিতে ফিরে আসার আশা ছাড়েননি৷ এটিই বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ইহুদি রাষ্ট্রের সূচনালগ্ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্ধকারতম সময়
বাইবেল অনুযায়ী, ইহুদিদের বিতর্কিত দাবি হচ্ছে, ‘ঈশ্বর তাদের একটি পবিত্রভূমি’ বরাদ্দ করেছেন৷ ইউরোপজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬০ লাখ ইহুদি গণহত্যার শিকার হলে নিজস্ব ভূমির যৌক্তিকতা শক্ত হয় ইহুদিদের৷ যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে৷ চালানো হয় নিপীড়ণ আর জোর করে কাজ করানো হয়৷ উপরের ছবিটি আউসভিৎস ক্যাম্পে থাকা জীবিতদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/akg-images
‘নাকবা’ বা আকস্মিক বিপর্যয়
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকামীরা ইহুদিদের ইউরোপ থেকে আগমনকে নাকবা বা বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করে৷ ইহুদিরা যখন প্যালেস্টাইনে বসতির জন্য আসে, তখন সেখানকার জনসংখ্যা ছিল ৭ লাখ৷ বিপুল সংখ্যক ইহুদির আগমনে এক ধরনের বিপর্যয় তৈরি হয়৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media
কিব্বুজ
শুরুতে বসতি স্থাপনের পর ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনে যৌথ খামার বা কমিউনিটি গড়ে বসবাস শুরু করে৷ এসব কমিউনিটিকে তাঁরা কিব্বুজ বলতেন৷ কিব্বুজগুলোর অনেকগুলোই সেকুল্যার বা সোশ্যালিস্ট মনোভাবাপন্ন ইহুদিদের দ্বারা পরিচালিত হতো, যাতে সমাজ সম্পর্কে ইহুদি জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বচ্ছতা গড়ে ওঠে৷
ছবি: G. Pickow/Three Lions/Hulton Archive/Getty Images
যুদ্ধ
১৯৬৭ সালের জুনে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সাথে ছয় দিনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইসরায়েল৷ যুদ্ধে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে তারা মিশর, জর্ডান এবং সিরিয়ার বাহিনীকে পরাজিত করে সিনাই উপত্যকা, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম এবং গোলান হাইটস নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়৷ এই জয় ইহুদি বসতি গড়ায় সহায়তা করে, আর মধ্যপ্রাচ্যে ছড়ায় উৎকণ্ঠা৷
ছবি: Keystone/ZUMA/IMAGO
বিতর্কিত বসতি
ভূমি মালিকানা নিয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে আন্তর্জাতিক সব চাপ অগ্রাহ্য করে ইহুদি বসতি স্থাপন করা হতে থাকে৷ বসতি স্থাপনের সময় জায়গাটিকে হয় তারা নিজেদের বলে দাবি করেছে, নতুবা বলেছে নিরাপত্তার খাতিরে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/newscom/D. Hill
ইন্তিফাদা
নিজভূমিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৯৮৭ সালে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে ফিলিস্তিনিরা৷ এটি প্রথম ইন্তিফাদা হিসেবে পরিচিত৷ ১৯৮৭ সালে থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ওই ইন্তিফাদা চলে৷ এরপর ইসরায়েল সরকার এবং ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র মধ্যে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷
ছবি: picture-alliance/AFP/E. Baitel
অবশেষে শান্তি!
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের সময় আরব ও ইসরায়েল শান্তি চুক্তি হয়৷ তাতে দুই দেশ একই অপরকে স্বীকৃতি দেয়৷ ইসরায়েলের পক্ষে আইজাক রবিন এবং পিএলও-র পক্ষে ইয়াসির আরাফাত এতে স্বাক্ষর করেন৷ এই চুক্তির কারণে দুই বছর পর রবিন নিহত হন৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media
ইসরায়েলে অন্তর্দ্বন্দ্ব
উগ্রপন্থিরা প্রধানমন্ত্রী রবিনকে হত্যা করে ১৯৯৫ সালে ৪ নভেম্বরে৷ সেসময় তিনি রাজধানী তেল আবিবের একটি শান্তি র্যালি থেকে বের হচ্ছিলেন৷ রবিনের হত্যার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে উদারপন্থি, মধ্যপন্থি, চরমপন্থি ও ধার্মিক গোষ্ঠীর বিরোধ সামনে চলে আসে৷ রবিনের স্থলাভিষিক্ত হন সিমন পেরেস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Delay
যা বলা হয়নি
২০০০ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ইয়োহানেস রাউ ইসরায়েলি আইনসভার কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদি গণহত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷ যা দুই দেশের শিথিল সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়
ছবি: picture-alliance/dpa
ইসরায়েলের দেয়াল
২০০২ সালে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় গণবিক্ষোভ বা ইন্তিফাদার সময়ই ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি ও ফিলিস্তিনি বসতির মধ্যে ১০৭ কিলোমিটার লম্বা কাঁটাতার ও কংক্রিটের দেয়াল নির্মাণ করে৷ নিরাপত্তা ফাঁড়িও বসায় তারা৷ এটি সাময়িকভাবে সংঘাত থামালেও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সম্পর্কে আরো দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত তৈরি করে৷ বর্তমানে ইসরালের নিরাপত্তা বেষ্টনির দৈর্ঘ্য ৭০০ কিলোমিটারে ঠেকেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb/S. Nackstrand
মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা
জার্মানির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এ বছরের মার্চে ইসরায়েল সফর করেন৷ জেরুসালেমে তিনি একটি গণহত্যা জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং গণহত্যার শিকার ইহুদিদের প্রতি সম্মান জানান৷ জার্মান-ইহুদি সম্পর্ক এর মধ্য দিয়ে অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হৃদ্যতাপূর্ণ হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Yefimovich
12 ছবি1 | 12
কুদস ফোর্স নামে ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ডের একটি অংশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই হামলার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জনাথন কনরিকাসের৷
ইরানের হামলার জবাবে সিরিয়ায় থাকা ইরানের কয়েক ডজন সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলে জানান ঐ মুখপাত্র৷
এদিকে, লন্ডনভিত্তিক ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' বা এসওএইচআর সিরিয়া থেকে গোলান হাইটস লক্ষ্য করে রকেট ছোঁড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, কারা এর জন্য দায়ী তা উল্লেখ করেনি৷
উল্লেখ্য, সিরিয়া গৃহযুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ সেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছে বলে আশঙ্কা করে ইসরায়েল৷ তাই মাঝেমধ্যেই তারা সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে থাকে৷ গতমাসে সিরিয়ার এক বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলের চালানো এমনই এক হামলায় ইরানের সাত সামরিক সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি ইরানের৷ ঐ ঘটনার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল ইরান৷
আফ্রিকান অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে ইসরায়েলের উদ্যোগ
01:15
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সিরিয়ার এক সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েল রকেট হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন সিরিয়ার সরকারপন্থি এক কমান্ডার৷ এসওএইচআর বলছে, ঐ হামলায় ইরানের আট নাগরিকসহ ১৫ জন নিহত হয়েছে৷ তবে ঐ কমান্ডারের দাবি, হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷ ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করেনি৷
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়৷ আজই দিনের শেষে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে মাক্রোঁ কথা বলবেন বলেও ঐ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷