সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের উপর অ্যামেরিকার হামলা
৯ নভেম্বর ২০২৩
অ্যামেরিকা জানিয়েছে, ওই ঘাঁটি থেকে ইরাক এবং সিরিয়ায় অস্ত্র, গোলা-বারুদ সরবরাহ করা হতো।
মার্কিন যুদ্ধবিমানছবি: Sra Olivia Gibson/U.S Air/Planet Pix/ZUMA Press Wire/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বুধবার সিরিয়ার পূর্বদিকে একটি অঞ্চলে বিমান হামলা চালায় অ্যামেরিকা। পেন্টাগনের দাবি, ওই এলাকায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের একটি ঘাঁটি ছিল।
গত কয়েকদিন ইরাকে ঘাঁটি করে থাকা মার্কিন সেনার উপর একের পর এক হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ইরানের প্ররোচনায় বেড়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠী ওই হামলা চালিয়েছে বলে পেন্টাগনের অভিযোগ। তারই উত্তরে এদিন অ্যামেরিকা হামলা চালায় বলে পেন্টাগনের দাবি।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতি বলেছেন, ''মার্কিন নাগরিক, সেনা জওয়ান এবং মার্কিন প্রয়োজন রক্ষা করা প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে বড় কর্তব্য। সেই কর্তব্যবোধ থেকেই এদিন সিরিয়ায় আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।''
সিরিয়া নিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর অবস্থানের সেকাল-একাল
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ১২ বছর পর গত শুক্রবার আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন৷ ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সৌদি আরব, কাতারসহ কয়েকটি দেশ বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল৷
ছবি: SANA/REUTERS
আসাদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের কঠোর অবস্থান
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সেখানে অধ্যুষিত দেশ শিয়া ইরানের প্রভাব বাড়তে পারে, সেই আশঙ্কায় আসাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল সৌদি আরব৷ সিরিয়ার সুন্নি বিদ্রোহীদের অস্ত্র, অর্থ ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছিল দেশটি৷ উপরে ২০১২ সালের ছবিতে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: dapd
সৌদি মন্ত্রীদের মন্তব্য
২০১৪ সালে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল-ফয়সাল (ছবি) বলেছিলেন, সিরিয়ায় ভবিষ্যতে যে পরিবর্তন আসবে, সেখানে আসাদ এবং যাদের হাত ‘রক্তে রঞ্জিত’ তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না৷ এরপর ২০১৬ সালে আরেক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আসাদ সিরিয়া শাসন করবেন না এবং রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ তাকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করবে না৷
ছবি: Reuters
যে কারণে মত পরিবর্তন
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র আসাদের বিষয়ে মতামত পরিবর্তন করলেও সৌদি আরব শুরুতে মত দেয়নি৷ তবে গত কয়েকমাসে, বিশেষ করে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর, আসাদ বিষয়ে সৌদি আরবের মতামতে পরিবর্তন আসে৷ ছবিতে গত শুক্রবার সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমানের সঙ্গে আসাদকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Al Ekhbariya Tv/REUTERS
কাতারে অনুষ্ঠিত আরব লিগ সম্মেলনে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের আমন্ত্রণ
গৃহযুদ্ধের শুরুতে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের শক্ত সমর্থন দিয়েছিল কাতার৷ ২০১৩ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে কাতারের আমিরের অনুরোধে সিরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে সিরিয়ার বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আরব লিগের নেতারা৷ এছাড়া ২০১৮ সালে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বলেছিলেন, আসাদের মতো ‘একজন যুদ্ধাপরাধীকে’ এই অঞ্চল সহ্য করতে পারে না৷
ছবি: Reuters
কাতারের মত পরিবর্তন
পরবর্তীতে আরব লিগে সিরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার সৌদি আরবের উদ্যোগের বিরোধিতা থেকে সরে এসেছিল কাতার৷ এর কারণ হিসেবে তারা বলেছিল, আরব ঐকমত্যের পথে তারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না৷
ছবি: Al Ekhbariya Tv/REUTERS
সংযুক্ত আরব আমিরাত
একসময় আসাদবিরোধীদের সমর্থন করেছিল দেশটি৷ তবে সেটা সৌদি আরব ও কাতারের মতো এত উল্লেখযোগ্য ছিল না৷ ইসলামি গোষ্ঠীগুলো যেন বিদ্রোহের নিয়ন্ত্রণ না নিতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত৷
ছবি: Imago/imagebroker
আসাদকে ফেরানোর উদ্যোগ
রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায় আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা থেকে বিদ্রোহীদের সরিয়ে দিতে সমর্থ হওয়ার পর তাকে আরব লিগে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু করে আবু ধাবি৷ এর পেছনে আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল, সিরিয়ার উপর নন-আরব দেশ ইরান ও তুরস্কের প্রভাব কমানো৷ উপরের ছবিতে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর দামেস্কে আসাদের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: SANA/REUTERS
আসাদের প্রথম আরব দেশ সফর
২০২১ সালের শেষদিকে দামেস্ক সফরে গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ পরের বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যান আসাদ৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সেটিই ছিল আরব কোনো রাষ্ট্রে আসাদের প্রথম সফর৷ গতমার্চে আবার স্ত্রীসহ আরব আমিরাত সফর করেন আসাদ৷ উপরের ছবিটি ২০২২ সালের মার্চে আসাদের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় তোলা৷
সিরিয়ার দক্ষিণের প্রতিবেশী জর্ডানও আসাদবিরোধীদের সমর্থন দিয়েছিল৷ তবে তার কারণ ছিল, সীমান্ত এলাকায় সুরক্ষা নিশ্চিত করা৷ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল যেন কট্টর ইসলামি জঙ্গিদের স্বর্গ হয়ে না উঠতে পারে সেই চেষ্টা করেছিল জর্ডান৷ এদিকে, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শুরুতে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, তিনি আসাদের অবস্থানে থাকলে পদত্যাগ করতেন৷ তবে জর্ডান কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেনি৷
ছবি: Bernd Elmenthaler/IMAGO
9 ছবি1 | 9
লন্ডনে বসবাসকারী একটি সিরিয়ান মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, ইরানের হয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের নয়জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বুধবারের আক্রমণে।
অস্টিন জানিয়েছেন, দুইটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান আক্রমণ চালায় একটি অস্ত্রের গুদামে। ইরানের রেভেলিউশনারি গার্ড ওই গুদামের সঙ্গে যুক্ত। বস্তুত, ওই গুদামটি রেভেলিউশনারি গার্ডের লোকেরাই চালায় বলে পেন্টাগন জানিয়েছে।
অক্টোবরে অ্যামেরিকা এবং যৌথবাহিনী ইরাক এবং সিরিয়ায় অন্তত ৪০বার আক্রমণ চালিয়েছে বলে সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে। অ্যামেরিকার বক্তব্য, প্রতিটি আক্রমণই চালানো হয়েছে ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি লক্ষ্য করে।
সিরিয়ায় ৯০০ এবং ইরাকে আড়াই হাজার সেনা আছে অ্যামেরিকার। ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তাদের এই দুই অঞ্চলে রাখা হয়েছে বলে পেন্টাগনের দাবি। এই দুই মার্কিন ঘাঁটিতেই গত কয়েকদিনে একাধিকবার হামলা হয়।
বস্তুত, ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পরে এই দুই অঞ্চলেও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।