সিরিয়ার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হানা ইসরায়েলের। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করার আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি সিরিয়ার সেনার।
বিজ্ঞাপন
রোববার সন্ধ্যায় গোলান হাইটস থেকে দামাস্ক লক্ষ্য করে ইসরায়েল একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে বলে দাবি সিরিয়ার সরকারি মিডিয়ার।
সরকারি সংবাদসংস্থা সানা জানিয়েছে, ''ইসরায়েল অধিকৃত গোলান হাইটস থেকে দামাস্ক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। সিরিয়ার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পেরেছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।''
২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে সিরিয়ায় ইরানপন্থি ও হেজবোল্লাহদের লক্ষ্য করে একাধিক আক্রমণ করেছে ইসরায়েল। কয়েকদিন আগেই অ্যামেরিকাও সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে ইরানপন্থি মিলিশিয়ার উপর আক্রমণ চালিয়েছিল।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটারি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, দামাস্কের দক্ষিণে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালানো হয়। এখানেই ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড ও হেজবোল্লাহদের ঘাঁটি।
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র এনিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। তবে ইসয়ালের সরকারি সংস্থা কান জানিয়েছে, সেখানকার সেনা কর্তারা রোববার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসোছিলেন। তাঁরা গালফ অফ ওমানে ইসরায়েলের একটি জাহাজে ইরানের আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের পণ্য জাহাজে ইরানই আক্রমণ শানিয়েছিল বলে তাঁর বিশ্বাস। সিরিয়ায় ইরানের দখলদারি ঠেকাতে ইসরায়েল এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই হানা দিচ্ছে।
ইসরায়েলের দাবি, ইরানের বাহিনীর সিরিয়ায় থাকার কোনো অধিকার নেই। ইরান যাতে সেখানে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, তার জন্য ইসরায়েল সক্রিয়। পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে ইসরায়েল।