মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বাহিনী জানিয়েছে যে সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেটের’ সর্বশেষ ঘাঁটিটিরও পতন ঘটেছে৷ কুর্দি সেনারা এই জয়কে আখ্যা দিয়েছে ‘এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ) শনিবার সিরিয়ায় ‘ইসলামিক স্টেটের' (আইএস) বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেছে৷ সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের সর্বশেষ ঘাঁটিটির পতন ঘটানোর মাধ্যমে এই বিজয় অর্জন করেছেন তারা৷
এই ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত জঙ্গি গোষ্ঠীটির স্বঘোষিত খেলাফতের চূড়ান্ত পতন ঘটলো৷ ২০১৪ সালে সিরিয়া এবং ইরাকের কিছু অংশ দখল করে খেলাফত ঘোষণা করেছিল আইএস৷
যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার ইতিহাস
বার্লিনের প্যার্গামন মিউজিয়ামে চলছে সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ে অভিনব একটি প্রদর্শনী৷ যুদ্ধের আগে ও পরে কীভাবে বদলেছে দেশটির সাংস্কৃতিক মানচিত্র, তা তুলে ধরছে এই প্রদর্শনী৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
ধুলোয় মিশেছে ‘আলেপ্পোর দুর্গ’
দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যার উত্থান, সেই বিখ্যাত ‘আলেপ্পোর দুর্গ’-এর সর্বত্র যুদ্ধের স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ দুর্গের বিভিন্ন অংশ ধুলোয় মিশে গেলেও শিগগিরই তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হবে৷ উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সাল থেকেই এই দুর্গের নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে৷
ছবি: Sultan Kitaz
ইতিহাস
বলা হয়, এই দুর্গের জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে৷ যুদ্ধে এই দুর্গের আশেপাশের অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অক্ষত রয়েছে মূল প্রাঙ্গন৷ দুর্গের সামনে একটি মসজিদ রয়েছে৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমায়েদ মসজিদ বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি৷ অষ্টম শতাব্দীর গোড়ায় তৈরি এই মসজিদ ১৯৮০ সালে ইউনেস্কো’র ‘বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান’ তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: Issam Hajjar
বিশ্বখ্যাত আলেপ্পো বাজার
সিরিয়ার সবচেয়ে ঘন জনবসতি ছিল আলেপ্পো শহরে৷ সেখানের আলেপ্পো বাজার বা ‘সুক’-এ ছিল হাজারেরও বেশি ছোট ছোট দোকান৷ যুদ্ধে শহরের পুরোনো অংশ নিশ্চিহ্ন হলে তার ছোঁয়া লাগে এই বাজারেও৷ ফলে, হারিয়ে গেছে এই বাজারের বিশাল অংশ৷
ছবি: Issam Hajjar
বেল মন্দির
মেসোপটেমিয়ার আরাধ্য দেবতা ‘বেল’-এর এই মন্দিরের বয়স প্রায় ২,০০০ বছর৷ ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেটের বোমা হামলায় পালমিরা শহরে অবস্থিত এই মন্দিরটির কেন্দ্রীয় ভবনসহ অন্যান্য পবিত্র স্থান ধূলিসাৎ হয়ে যায়৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
পালমিরার ‘ভ্যালি অফ টুম্বস’
১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর তালিকায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা৷ উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এই উপত্যকার একটি অংশ, যেখানে জার্মানি ও সিরিয়ার দুটি গবেষণা দল ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কর্মরত ছিল৷ এই গবেষণা থেকে আঞ্চলিক ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানা যায়৷
ছবি: Sammlung M. Meinecke/A. Schmidt-Colinet
যুদ্ধের আগে আলেপ্পো
২০০১ সালে যখন এই ছবিটি তোলা হয়, তখনও কেউ জানত না, ঠিক কী হতে চলেছে এক দশক পরে৷ সোনালি সূর্যের আলোয় মোড়া আলেপ্পোর এই ছবিতে ঐতিহাসিক মসজিদটির মিনার দেখা যাচ্ছে, যা সেই সময় সংস্কার করা হচ্ছিল৷
ছবি: Peter Heiske
যুদ্ধবিধ্বস্ত আলেপ্পো
গত কয়েক বছরে সিরিয়ায় যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে আলেপ্পো৷ অতীতের এই বর্ধিষ্ণু শহর যুদ্ধের ফলে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ উপরের ছবিতে রয়েছে আবশির পাশা মসজিদ ও বেহরামিয়াহ মসজিদ চত্বরের ধ্বংসাবশেষের চিত্র৷ যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এই ছবি থেকে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়৷
ছবি: Nabil Kasbo
8 ছবি1 | 8
এসডিএফ-এর মুখপাত্র মুস্তফা বালি টুইটারে এই বিজয় ঘোষণা করেন:
- ‘‘বাঘিয়ুজ মুক্ত করা হয়েছে৷ দায়েসের বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় নিশ্চিত হয়েছে,'' লিখেছেন তিনি৷ আরবি ভাষায় আইএসকে দায়েস বলা হয়৷
- এসডিএফ জানিয়েছে তথাকথিত খেলাফত পুরোপুরি শেষ করে দেয়া হয়েছে এবং আঞ্চলিকভাবে আইএস শতভাগ পরাজিত হয়েছে৷
- বিজয়ের পর আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হাজার হাজার শহিদের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি৷
আইএস-এর ‘মতাদর্শ এখনো রয়ে গেছে'
তবে খেলাফতের পতন ঘটলেও আইএস-এর মতাদর্শ এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করেন এসডিএফ-এর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান আব্দেল করিম উমর৷ জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সামরিকভাবে দায়েশের পতন ঘটিয়েছি৷ তাদের খেলাফত শেষ হয়ে গেছে৷ তবে, দায়েশের ‘স্লিপিং সেল' এখনো আছে এবং যে অঞ্চল তারা দীর্ঘদিন শাসন করেছিল, সেখানে তাদের মতাদর্শ এখনো রয়ে গেছে৷''
এদিকে, এসডিএফ শতভাগ বিজয় ঘোষণার পরও বাঘিয়ুজে এখনো বিমান হামলা এবং গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন সিরিয়া এবং কুর্দি বিষয়ক বিশ্লেষক মোটলু সিভিরোঘলু৷ তিনি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও টুইটও করেছেন৷
উল্লেখ্য, আইএস শুরুতে আল-কায়েদার একটি অংশ হিসেবে কাজ করলেও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা একটি জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ২০১৪ সালে সেটি সিরিয়া এবং ইরাকে বেশকিছু অংশ দখল করে নিয়ে নিজস্ব খেলাফত ঘোষণা করে৷ পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করে উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি৷ তবে ২০১৭ সাল থেকে তাদের পতন শুরু হয় যা শনিবার চূড়ান্ত রূপ পেল৷