বৃহস্পতিবার রাত্রে মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে অসম্ভব সম্ভব হলো, এমন বলা চলে না৷ তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ‘‘যুদ্ধ বন্ধের'' যে সমঝোতা হয়েছে, তা আশাজনক বৈকি – বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আপোশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Russian Defence Ministry's Press and Information Department/TASSpicture-alliance/dpa/Russian Defence Ministry's Press and Information Department/TASS
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার বিকেলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করেছেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের সঙ্গে মিউনিখে দেখা হল৷ মানবিক সাহায্য পাঠানো ও যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে অবিলম্বে প্রগতি করার প্রয়োজনটা স্পষ্ট করে দিয়েছি৷''
মানবিক সাহায্য পাঠানোর পথ খোলা নিয়ে আলোচনা হবে আজ শুক্রবার জেনেভায়, একটি ওয়ার্কিং গ্রুপে৷ সাময়িক যুদ্ধবিরতির ‘‘মোডালিটি'' বা সাধনপ্রণালি নির্ধারণ করবে একটি টাস্ক ফোর্স৷ সেই ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং টাস্ক ফোর্স, উভয়েরই সভাপতিত্ব করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, যুগ্মভাবে৷
ছবি: picture-alliance/AA/L. Barth
১৭টি দেশের প্রতিনিধি সম্বলিত সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপ-এর হয়ে এই ফলাফলকে ‘‘লক্ষণীয় অর্জন'' হিসেবে অভিহিত করা সত্ত্বেও কেরি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘‘যুদ্ধ বন্ধ'' সমঝোতা, যদি সত্যিই তা কার্যকরি হয়, তাহলেও সেটা হবে যুদ্ধে একটা সাময়িক বিরতি এবং তাকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে পরিণত করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ এবং ‘ব্রেকিং নিউজ' হিসেবেও এই সমঝোতা যে সমস্যার তুলনায় সত্যিই একটা সূচনা ছাড়া আর কিছু নয়, তা পরিষ্কার হয়ে যায় সিরিয়ায় ধ্বংসলীলার নানা ছবি থেকে৷
এমনকি কেরি স্বয়ং স্বীকার করেছেন যে, মিউনিখের সমঝোতা ‘‘কাগজি প্রতিশ্রুতি''-র বেশি আর কিছু নয়৷ যেটা আরো স্পষ্ট হয়ে যায় এই ধরনের একটি টুইট থেকে: ইউলিয়ান ব়্যোপকে সিরিয়ায় রুশ বোমাবাজির ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘মিউনিখ যুদ্ধবিরতি সমঝোতার পরের দিন৷ সিরিয়া জুড়ে রাশিয়ার ‘স্পন্সর' করা বাজি ফুটছে!''
আকাশ থেকে বোমাবাজি এক ব্যাপার৷ কিন্তু এই ‘‘যুদ্ধ বন্ধ'' যদি সত্যিই না ঘটে, তাহলে মাটিতে কী ঘটবে অথবা ঘটতে পারে, সে চিত্রটা ক্রমেই আরো উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন স্বয়ং মিউনিখে আসেননি৷ কিন্তু রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ জার্মান ‘হান্ডেল্সব্লাট' পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, সিরিয়া সংঘাতে – বিদেশিরা – যদি স্থলসৈন্য নিয়োগ করে, তবে তা থেকে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে৷
‘‘স্থল অভিযান সব সংশ্লিষ্ট পক্ষকে যুদ্ধে টেনে আনবে'', বলেন মেদভেদেভ৷ সিরিয়ায় স্থলসৈন্য পাঠানো সম্পর্কে সৌদি আরবের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, মেদভেদেভ বলেন, ‘‘মার্কিনিরা ও আমাদের আরব সহযোগীদের ভেবে দেখতে হবে, তারা একটি অনন্ত যুদ্ধ চান কিনা৷''
সিরিয়া থেকে জার্মানি: শরণার্থীদের বিপৎসংকুল যাত্রা
যুদ্ধের ভয়াবহতা, মৃত্যু এড়াতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই সিরিয়া ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ৷ সব বাধা পেরিয়ে সবাই চাইছেন জার্মানি আসতে৷ জানেন কি, কত কঠিন তাঁদের জীবন? কতটা বন্ধুর মৃত্যুর বিভীষিকা ছেড়ে জীবনের পথ ধরা? দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/A. Beier
নিজের দেশ যখন ‘দোজখ’
২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়৷ এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মারা গেছে৷ সিরিয়া না ছাড়লে মৃতদের কাতারে কখন যে নাম লেখাতে হবে কে জানে! দেশ ছেড়ে কোথায় যাওয়া যায়? কোন জায়গাটা জীবন-জীবিকার জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ? ইউরোপ৷ তাই অনেকেই আসছেন ইউরোপে৷ ছবিতে দামেস্কের এক আবাসিক এলাকায় প্রেসিডেন্ট বাশারের অনুগত বাহিনীর হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মাঝে এখনো কেউ বেঁচে আছেন কিনা দেখছেন সিরীয়রা৷
ছবি: picture-alliance/A.A./M. Rashed
প্রথম গন্তব্য তুরস্ক
ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে তুরস্কে যায় সিরীয়রা৷ ইজমিরের কোনো হোটেলে উঠেই তাঁরা শুরু করেন মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে সমুদ্রপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা৷ যাঁদের হোটেলে ওঠার সাধ্য নেই তাঁরা রাস্তার পাশে কিংবা পার্কে তাঁবু তৈরি করে দু-এক রাত কাটিয়ে নেন৷ ছবির এই মেয়েটির মতো ইউরোপে আসার আগে অনেক সিরীয়কেই ঘুমাতে হয় তুরস্কের রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Atalay
গ্রিসের দিকে যাত্রা
তুরস্ক থেকে প্রায় সবাই ছোটেন গ্রিসের দিকে৷ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এই দেশটিতে শুধু ইউরোপে প্রবেশের জন্যই আসা৷ আসল লক্ষ্য পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলো৷ ছবিতে ডিঙ্গি নৌকায় তুরস্ক থেকে গ্রিসের কস দ্বীপের দিকে যাত্রা শুরু করা কয়েকজন সিরীয়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
মানুষের নীচে মানুষ
কস দ্বীপ থেকে গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের দিকে যাচ্ছে একটি ফেরি৷ ১০ ঘণ্টার যাত্রাপথ৷ কোনো জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের আসনের নিচেই ঘুমিয়ে নিচ্ছে এক সিরীয় কিশোরী৷
ছবি: Getty Images//W. McNamee
রুদ্ধ সীমান্ত
কস দ্বীপ থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে ইডোমেনি শহরে যান অনেকে৷ ‘বলকান রুট’ ব্যবহার করে অনেকে বাধ্য হয়ে সার্বিয়ার দিকেও যান৷ গত মাসে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করে শরণার্থীদের ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোরও ঘোষণা দেয় মেসিডোনিয়া৷ সহজে সীমান্ত পার হওয়া যাবে ভেবে শুরু হয় সার্বিয়ার দিকে যাত্রা৷ ছবির এই ট্রেনের মতো অনেক ট্রেনই গিয়েছে এমন মানুষবোঝাই হয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Licovski
বেলগ্রেডে বিশ্রাম
ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড যেন শুধুই বিশ্রামাগার৷ এ শহরে বিশ্রাম নিয়েই সবাই পা বাড়ান প্রকৃত গন্তব্যের দিকে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসে সিরিয়া থেকে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ গিয়েছেন বেলগ্রেডে৷ এখানে বেলগ্রেডের এক পার্কে বিশ্রাম নিচ্ছেন কয়েকজন সিরীয় শরণার্থী৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Brey
হাঙ্গেরিতে মানুষের ঢল
সার্বিয়া থেকে শরণার্থীরা যাচ্ছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে৷ বুদাপেস্টও ‘বিশ্রামালয়’৷ তবে হাঙ্গেরি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷হাঙ্গেরি সরকার চায় যাঁরা এসেছেন তাঁরা সেখানেই নাম নথিভূক্ত করাক৷ তা করলে হাঙ্গেরিতেই থাকতে হবে৷ কিন্তু অভিবাসন প্রত্যাশীরা চান জার্মানি যেতে৷ ছবিতে এক কিশোরীর হাতে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি৷
ছবি: Reuters/B. Szabo
উষ্ণ অভ্যর্থনা
হাঙ্গেরি থেকে কয়েক হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী চলে এসেছেন অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে৷ নতুন ঠিকানায় এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অনেকেই৷ অভিবাসনবিরোধী ডানপন্থি দলের শাসনাধীন দেশ হাঙ্গেরি থেকে বেরিয়ে আসতে পারাই তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি৷ জার্মানিতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ মিউনিখে শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করে নিয়েছেন জার্মানরা!
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Armer
তারপর.....?
মিউনিখের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে এক সিরীয় নারী অভিবাসনপ্রত্যাশীর কোলে সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন এক জার্মান পুলিশ৷ সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বরণ করে নিয়েছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়ে গেছে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা৷ এত বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন অনেক ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা৷