গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো তুরস্ক এবং সিরিয়াতেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে৷ তারই মধ্যে তুরস্কের সীমান্ত পার করে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে তুরস্কের সৈন্য৷

পাহাড় ঘেরা আফরিনের জায়গায় জায়গায় পজিশন নিয়েছে তুরস্কের সৈন্যরা৷

কুর্দি বিদ্রোহীদের খুঁজতে মহল্লায় মহল্লায় হামলা চালাচ্ছে তুরস্কের বাহিনী৷ ছাড় দেওয়া হচ্ছে না সাধারণ মানুষ এবং গবাদি পশুকেও৷

বোমারু হামলার পর আফরিনের চেহারা৷ ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে৷

আফরিনে ঘাঁটি গেড়ে থাকা কুর্দি বিদ্রোহীরাও লাগাতার প্রত্যাঘাত করছে৷ তাদেরই গুলিতে আহত এক তুরস্কের জওয়ানকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷

সারাদিন ধরেই চলছে লড়াই৷ তারই মাঝে পাথরের আড়ালে জিরিয়ে নিচ্ছেন সৈন্যরা৷ হাতে বন্দুক নিয়ে৷

একদিকে যুদ্ধ চলছে৷ হাতে বন্দুক নিয়ে অতন্দ্র প্রহর গুনছেন যোদ্ধারা৷ তারই মধ্যে মোবাইলে কথা বলে নিচ্ছেন কাছের মানুষদের সঙ্গে৷ হয়তো এটাই তাঁর শেষ কথা!

একনজরে দেখলে বোঝা যায় না৷ মনে হয় বোমা৷ আসলে এটা বহু দূর পর্যন্ত দেখার বাইনেকুলার৷ যুদ্ধের ট্যাঙ্কে ব্যবহার করা হয়৷

গ্রামে গ্রামে এভাবেই বন্দুক উঁচিয়ে সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালানো হচ্ছে বলে কুর্দি বিদ্রোহীদের অভিযোগ৷

এভাবেই মর্টার বসিয়ে দূরের লক্ষ্যে ছোড়া হচ্ছে আফরিনে৷ একেকটি মর্টার শেলের আঘাতে মৃত্যু হচ্ছে কয়েকশ’ মানুষের৷

যুদ্ধের মধ্যেও নামাজ পড়ে নিচ্ছেন সৈন্যরা৷ পড়ন্ত বিকেলে সকলে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে৷

গত সপ্তাহেই রাজধানী দামেস্কের অদূরে ঘুটা অঞ্চলে বিদ্রোহীদের উপর হামলা শুরু করে আসাদ সরকারের অনুগত বাহিনী৷ একের পর এক বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়৷ এখনো পর্যন্ত সেই হামলায় পাঁচশ’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যদিও জাতিসংঘ সিরিয়ায় আগেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল৷

জাতিসংঘের মহাসচিব ইতিমধ্যেই সিরিয়ার অবস্থাকে ‘পৃথিবীর বুকে একটি নরক’ বলে বর্ণনা করেছেন৷ জাতিসংঘের দাবি– আসাদ বাহিনী যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ মানুষের উপর এই আক্রমণ বন্ধ করুক৷ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন করে আসাদ বাহিনী ঘুটায় আক্রমণ শুরু করেছে৷

অভিযোগ আগেও ছিল, এবারো উঠেছে৷ অভিযোগ, আসাদ সরকার সিরিয়ার সাধারণ মানুষের উপর রাসায়নিক বোমা বর্ষণ করছে৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বহু আহতের শরীরেই ক্লোরিন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷ বোমা হামলার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তিরা৷ তবে সরকারপক্ষের দাবি, কখনোই ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়নি হামলায়৷

যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার রাস্তাঘাট ভরে আছে নানা অস্ত্রের ভগ্নাবশেষে, যার মধ্যে মিসাইলের চিহ্নও মিলেছে৷ সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হলো, অতর্কিতে আসাদ সরকার হামলা শুরু করায় অধিকাংশ সাধারণ মানুষই পালাতে পারেননি৷

নতুন করে আক্রমণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘুটা অঞ্চলের দুমা শহর৷ সাময়িক যুদ্ধ বিরতির পর সাধারণ মানুষ রাস্তা পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়েছেন৷

আক্রমণের ফলে দুমায় খাবার এবং পানীয় প্রায় ফুরিয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু নতুন করে খাবার আসছে না৷ সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত৷

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নতুন করে সিরিয়ায় যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে৷ ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে৷ যদিও রাশিয়ার তরফ থেকে বলা হয়, আইএস এবং আল কায়দার উপর হামলা চলতে পারে৷ রাশিয়া আসাদ বাহিনীর অন্যতম মিত্র৷