পেন্টাগন এক বিবৃতিতে বলেছে, সিরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে উড়তে থাকা মার্কিন এফ-১৫ বিমান ইরানি ঐ ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করে৷ পেন্টাগন মুখপাত্র নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস জানান, ড্রোনটিতে ‘ডার্টি উইংস' ছিল, যার অর্থ হচ্ছে অস্ত্র৷ ইরানের তৈরি ড্রোনটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটবাহিনীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল বলেও জানান তিনি৷ তবে ড্রোনটি কে পরিচালনা করছিল পেন্টাগনের ঐ মুখপাত্র সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানাননি৷
এর আগে রবিবার সিরিয়ার একটি আর্মি জেট ভূপাতিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাকা শহরের কাছে এই ঘটনা ঘটে৷ যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বাহিনীর কাছে বোমা ফেলার প্রতিক্রিয়ায় ঐ হামলা চালায় দেশটি৷ সিরীয় ঐ জেটটিতে পাইলট ছিলেন৷ ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম মানুষচালিত একটি জেট ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র৷ ঘটনাটিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসন' হিসেবে দেখছে রাশিয়া৷
ওরা শিশু, কারো জন্ম মাত্র কয়েকমাস আগে৷ কিন্তু সবাই ভুগছে নানা রোগে৷ কারো কারো পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা, কিন্তু খেতে পারছে না তীব্র অপুষ্টির শিকার হওয়ায়৷ বলছি ইরাকের মোসুলের শিশুদের কথা৷
ছবি: Reuters/S. Salemতথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে ইরাকের সামরিক বাহিনীর টানা যুদ্ধের পর মোসুলের অনেকাংশই জঙ্গিদের হাতছাড়া হয়েছে৷ কিন্তু যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে সেখানকার শিশুরা৷ বিশেষ করে যুদ্ধ চলাকালে যাদের জন্ম, তাদের অধিকাংশই তীব্র অপুষ্টির শিকার৷ ছবিতে ছয়মাস বয়সি মেয়ে শিশু নওরশ রাইদের হাত ধরে আছেন ‘মেডেসিন্স স্যান ফ্রন্টিয়াস’ (এমএসএফ)-এর এক নার্স৷
ছবি: Reuters/S. Salemআট বছর বয়সি দুয়া নাওয়াফকে এমএসএফ-এর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তাঁর চাচি৷ গতমাসে মোসুলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলায় নাওয়াফের বাবামাসহ একশ’রও বেশি মানুষ নিহত হন৷ তার মাথা ও হাত পুড়ে গেছে সেই হামলায়৷ নাওয়াফের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে রাতের বেলা প্রচণ্ড আতঙ্কে ভোগে সে৷
ছবি: Reuters/S. Salemইরাকের কাউজারায় এমএসএফ পরিচালিত এক হাসপাতালে ইরাকি এক শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন এক চিকিৎসক৷ হাসপাতালের অধিকাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার এবং তাদের ওজন বয়স অনুপাতে অনেক কম৷ ইরাকে মায়েরা সাধারণত শিশুদের বুকের দুধ পান করান না৷ বরং ফর্মুলা মিল্ক পান করান তারা৷ এখন যুদ্ধের কারণে সেই দুধের সংকট তীব্র৷ আর মায়েরা চাইলেও সন্তানদের দুধ পান করাতে পারছেন না, কেননা, তারা নিজেরাও খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন৷
ছবি: Reuters/S. Salemপাঁচ বছর বয়সি আয়হাম আহমেদ৷ সে কিছুদিন আগে মোসুলে এক বিস্ফোরণে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে আহত হয়েছিল৷ এখন সে হাসপাতালে বোনের সঙ্গে খেলছে৷ এমএসএফ-এর হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগীর বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ আর সেখানকার শিশু পরিচর্যা ইউনিটে ভিড় এত বেশি যে, প্রতি বিছানায় দু’জন করে রোগী রাখতে হচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিশু বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Salemহাসপাতালে এক শিশু কাঁদছে৷ সে অপুষ্টির কারণে এত দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে গেছে৷ এমএসএফ-এর প্রকল্প সমন্বয়ক ইসাবেলা লিগাল বলেন, ‘‘ইরাকের শিশুদের এমন অবস্থা নতুন৷ ইরাকের অধিকাংশ চিকিৎসকই অতীতে এতটা অপুষ্টির শিকার শিশু দেখেনি৷’’
ছবি: Reuters/S. Salemহাসপাতালে আসা এক মা অভিযোগ করে বলেন, আইএস-এর কারণে তাদের এত করুণ অবস্থা হয়েছে যে, শিশুদের চিনিমিশ্রিত পানি, দই বা পানিতে মেশানো ময়দা ছাড়া আর কিছু খাওয়াতে পারছেন না৷ ইরাকি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে শহরটি খাবার পরিবহণ অনেক কমে গেছে৷
ছবি: Reuters/S. Salemএমএসএফ-এর হাসপাতালে এক শিশুকে পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক৷ সেখানে ভর্তি হওয়া শিশুদের অনেকের শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়ার সমস্যা রয়েছে৷ এছাড়া নানা ভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা৷ প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধের কারণে তাদের এমন ভোগান্তি আর কতদিন চলবে?
ছবি: Reuters/S. Salem উল্লেখ্য, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করছে দেশটি৷ ফলে সেখানে সৈন্য, বিমান ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে রাশিয়া৷ ইউফ্রেতিস নদীর পশ্চিম তীরে রুশ বাহিনীর অবস্থান৷ নদীটি রাকা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে৷ মার্কিন হামলায় রাকায় সিরীয় জেট ভূপাতিত হওয়ার পর রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে বলেছে, ইউফ্রেতিস নদীর পশ্চিম তীরে বিদেশি কোনো বিমান দেখলে সেটিকে ভূপাতিত করা হবে৷ এছাড়া সিরিয়ায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘাত এড়াতে স্থাপিত যোগাযোগ ব্যবস্থাটিও স্থগিত করে দিয়েছে রাশিয়া৷
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেসিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে৷ ভবিষ্যতে এই উত্তেজনা প্রত্যক্ষভাবে দুই দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে৷ সাবেক ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তা জনাথন স্টিভেনসন বলছেন, ‘‘রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্বের ঝুঁকি বেড়েছে৷'' ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইউএস স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আয়ান মর্গান বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ৷ দুই দেশের মধ্যে সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়েছে৷''
তবে স্টিভেনসন ও মর্গান দুইজনই বলেন, সংঘাতের ঝুঁকি বাড়লেও দুই দেশ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে দিতে আগ্রহী হবে না, বলেই মনে করছেন তাঁরা৷ স্টিভেনসন বলেন, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে সিরিয়ায় আরও মার্কিন সেনা পাঠাতে হতে পারে– এই আশংকায় আর উত্তেজনা বাড়ুক তা হয়ত যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না৷
মিশায়েল ক্নিগে/জেডএইচ