এই নিয়ে সাতবার সিরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করল রাশিয়া৷ এবার অবশ্য চীন ও বলিভিয়াও যোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেন, ফ্রান্স আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত করা খসড়া প্রস্তাব পাস হলে সিরিয়ার কাছে কেউ হেলিকপ্টার বিক্রি করতে পারত না কিংবা কোনো দেশ সিরিয়াকে হেলিকপ্টার সরবরাহ করতে পারতনা৷ এছাড়া সিরিয়ার সরকারি ও সামরিক কয়েক ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও তাঁদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারিরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷
জাতিসংঘের এক তদন্তে জানা গেছে, সিরিয়ার সরকার হেলিকপ্টারে করে গুচ্ছ বোমা নিক্ষেপ করেছে যেগুলোতে নিষিদ্ধ ক্লোরিন গ্যাস ছিল৷ তবে রাশিয়া বলছে, সিরীয় সরকার যে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করেছে তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই৷
আলেপ্পোতে ফিরেছে ফুটবল
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত আলেপ্পোয় আবারো সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য৷ স্থানীয় ক্লাব আল-ইত্তিহাদ এবং হুরাইয়া গত পাঁচবছরের মধ্যে প্রথম একটি ফুটবল ম্যাচে অংশ নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Lubaki
২০১২ সালের পর প্রথম ম্যাচ
সেই ২০১২ সালে আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়ার পর থেকেই যুদ্ধ লেগে আছে সিরিয়ার শহরটিতে৷ এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা৷ আর সেই সুযোগ সুযোগে স্থানীয় ক্লাব আল-ইত্তিহাদ এবং হুরাইয়া নিজেদের ভক্তদের একটু স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ দিল৷ ফুটবল মাঠে মুখোমুখি হয় দুই ক্লাব৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
আসাদ উপস্থিত
খেলা চলাকালে ইত্তিহাদের বিশাল ব্যানারে শোভা পায় সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের একটি ছবি৷ সিরিয়ায় একসময় সিরিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের আয়োজন করা হতো৷ ফুটবল জনপ্রিয় সেদেশে৷ তবে আলেপ্পোয় অদূর ভবিষ্যতে আর কোনো খেলার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
পতাকা উড়িয়েছেন সমর্থকরা
টানা কয়েকবছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে অনেকই আপনজন হারিয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও হাসিমুখে মাঠে হাজির ছিলেন দুই ক্লাবের অনেক ভক্ত৷ কেউ কেউ আবার উড়িয়েছেন পতাকা৷ স্টেডিয়ামে হাজির মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘সর্বশেষ ২০১০ সালে একটি ম্যাচ দেখেছিলাম আমি৷’’ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে তিন লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, গৃহহীন কয়েক মিলিয়ন৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
উত্তেজনায় কঠিন সময়
স্টেডিয়ামে দাঙ্গা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসহ পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো৷ সেই ২০১২ সালের সিরিয়ান প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচ হিসেবে আলেপ্পোতে মুখোমুখি হয় দু’দল৷ এছাড়া আসাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দামেস্ক এবং লাটাকিয়াতে আরো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
খেলোয়াড় এবং ভক্তদের জন্য শোচনীয় অবস্থা
কিছু প্রফেশনাল ফুটবলার জীবন বাঁচাতে সিরিয়া ত্যাগ করেছেন, অনেকে আবার চলে গেছেন প্রতিবাদ হিসেবে৷ সিরিয়ার ফুটবল বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ নাসের মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলোয়াড় এবং ভক্তদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে৷ তিনি জানান, ২০১২ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপে সিরিয়ার জাতীয় দল সাফল্য অর্জন করলেও বিভিন্ন সময়ে খেলা চলাকালে খেলোয়াড়দের হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
আশাবাদী ভক্তরা
খেলা শুরুর আগে গুশান মাহমুদ নামের এক ভক্ত বলেন, ‘‘আমরা অনেকটা আশাহত হয়ে পড়ছিলাম, কেননা আলেপ্পোতে কোনো ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছিল না৷ কিন্তু এখন নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে৷ আমরা আশা করছি, ক্লাবের সমর্থকরা ধীরে ধীরে গ্যালারিতে ফিরবেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
6 ছবি1 | 6
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, সিরিয়ার উপর এখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঠিক হবে না, কারণ জেনেভায় এখন শান্তি আলোচনা চলছে৷
সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে নয়টি ভোট পড়েছে৷ রাশিয়া, চীন আর বলিভিয়া প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়৷ আর কাজাখস্তান, ইথিওপিয়া আর মিশর ভোটদান থেকে বিরত থাকে৷
উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাস হতে হলে কমপক্ষে নয় সদস্যকে পক্ষে থাকতে হয় এবং কোনো ভেটো থাকলে হবে না৷ ভেটো দেয়ার ক্ষমতা আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও ব্রিটেনের৷
২০১৩ সালের কথা
ঐ বছরের ২১ আগস্ট সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের একটি অংশে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলায় শত শত মানুষ প্রাণ হারান৷ ঐ হামলার পরের মাসে নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার সব রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করার প্রস্তাব পাস হয়৷ আলোচিত ঐ হামলা চালানোর কথা স্বীকার না করলেও সিরীয় সরকার জাতিসংঘের ঐ প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অফ কেমিকেল উইপন্স’ বা ওপিসিডাব্লিউ-এ যোগ দিয়ে নিজেদের কাছে ১,৩০০ মেট্রিক টন রাসায়নিক উপাদান থাকার কথা জানায় সিরিয়া৷ সেগুলো সব ধ্বংস করা হলেও ওপিসিডাব্লিউ তদন্ত করে দেখছে যে, সিরিয়ায় এখনও অঘোষিত রাসায়নিক উপাদান আছে কিনা৷